ভ্রমণ

ভালোবাসার তাজমহলে বিমোহিত পর্যটকরা

মোঘল সম্রাট শাহ্জাহান তাঁর স্ত্রী মমতাজের সমাধি ঘিরে বানিয়েছিলেন তাজমহল। তাঁদের ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে তাজমহলের খ্যাতি আজ বিশ্বজুড়ে। ভৌগলিক দিক থেকে ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রা শহরে তাজমহলের অবস্থান। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক আসেন তাজমহল দেখতে। এসব পর্যটকের মধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর পর্যটক সংখ্যাই বেশি। যমুনা নদীর কোল ঘেঁষা তাজমহল ও আগ্রা ফোর্ট নিয়ে ভারতীয়দের তুলনায় বিদেশি পর্যটকদের কৌতূহলও অনেক। তবে তাদেরকে গাইড করার জন্য দোভাষিও রয়েছে। যদিও গাইডদেরকে পারিশ্রমিক দিতে হয়।

Advertisement

তাজমহল একটি রাজকীয় সমাধি। মোঘল সম্রাট শাহ্জাহানের স্ত্রী আরজুমান্দ বানু বেগম যিনি মমতাজ মহল নামে পরিচিত। মমতাজের মৃত্যুর পর তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে এই অপূর্ব সৌধটি নির্মাণ করেন সম্রাট শাহ্জাহান। সৌধটির নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে এবং সম্পন্ন হয় ১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে। সৌধটির নকশা কে করেছিলেন এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে এটি পরিষ্কার যে, শিল্প-নৈপুণ্য সম্পন্ন একদল নকশাকারক ও কারিগর সৌধটি নির্মাণ করেছিলেন।

তাজমহলের নির্মাণশৈলীতে পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয় এবং ইসলামি স্থাপত্যশিল্পের সম্মিলন ঘটানো হয়েছে। যদিও সাদা মার্বেল পাথরের গম্বুজাকৃতি রাজকীয় সমাধিটিই বেশি সমাদৃত। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে তাজমহলকে তালিকাভুক্ত করে।

তাজমহলে প্রবেশে পর্যটকদের জন্য একাধিক গেইট রয়েছে। ভারতীয় পর্যটকদের তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিদেশি পর্যটকদের কাউন্টারে তাদের পাসপোর্ট প্রদর্শন করে টিকিট কিনতে হয়। ভারতীয় পর্যটকদের জন্য তাজমহলের টিকিট মূল্য ৪০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য টিকিট মূল্য ১ হাজার টাকা। তবে বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য টিকিট মূল্য ৫৩০ টাকা।

Advertisement

তাজমহলের মূল ফটক পেরিয়ে একটু ভেতরে প্রবেশ করতেই চমৎকার ফোয়ারা নজর কাড়ে পর্যটকদের। মূলত সাদা মার্বেল পাথরের গম্বুজগুলো পর্যটকদের খুব বেশি আকৃষ্ট করে। তাজমহলের ভেতরে রয়েছে সম্রাট শাহ্জাহানের স্ত্রী মমতাজের সমাধি। রয়েছে সাদা মার্বেল মাথরের দৃষ্টিনন্দন মসজিদও। এছাড়া তাজমহলের জাদুঘরটিতে রক্ষিত আছে সম্রাট শাহ্জাহান ও মমতাজের ছবি, মোঘল শাসনামলের যুদ্ধে ব্যবহৃত তলোয়ারসহ শাহ্জাহান-মমতাজের স্মৃতিবিজড়িত অনেক জিনিসপত্র। তাজমহলের অপরূপ সৌন্দর্যের বর্ণনা আসলে লিখে শেষ করা যাবে না। বিশাল জায়গাজুড়ে নির্মিত তাজমহলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসে বিমোহিত ও মুগ্ধ হন পর্যটকরা।

এমনিতেই তাজমহলে দেশি-বিদেশি পর্যটকের কোনো কমতি নেই। তবে সরকারি ছুটির দিনে পর্যটকদের ঢল নামে। শুক্রবার ছাড়া সপ্তাহের সবদিনই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে তাজমহল। তবে শুক্রবার শুধু মুসলমানদের নামাজ পড়ার জন্য দুপুরের দিকে খুলে দেওয়া হয়।

সোমবার (২৭ মার্চ) সকাল থেকেই তাজমহলে পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিন কয়েকজন বাংলাদেশি পর্যটকের সঙ্গে কথা হয়। বাংলাদেশি চিকিৎসক এস কে মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পেরিয়ে রোববার (২৬ মার্চ) স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে ঘুরতে এসেছি। সোমবার দুপুরের দিকে তাজমহলে এসে এর চমৎকার নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ হয়েছি। কি নিখুঁত কারুকাজ যা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাসই হতো না। ঘণ্টাদেড়েক তাজমহলের সৌন্দর্য উপভোগ করে মনিরুজ্জামান চলে যান আগ্রা ফোর্ট দেখতে।’

আরেক বাংলাদেশি পর্যটক পলাশ পাল বলেন, ‘আগে ইন্টারনেটে শুধু তাজমহলের ছবি দেখেছি। আসলেই তাজমহল পর্যটকদের জন্য একটি অনন্য দর্শনীয় স্থান। তাজমহলের অপরূপ সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে আমাকে।’

Advertisement

তাজমহলের অদূরেই রয়েছে মোঘল আমলের একটি দুর্গ। যেটি পর্যটকদের কাছে আগ্রা ফোর্ট নামেই পরিচিত। প্রতিদিন আগ্রা ফোর্টেও ভিড় জমান দেশি-বিদেশি পর্যটকরা। ভারতীয়দের জন্য আগ্রা ফোর্টের টিকিট মূল্য ৪০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৫০০ টাকা টিকিট মূল্য। এছাড়া পর্যটকদের জন্য সন্ধ্যা ৭টা থেকে ৮টা এবং ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত হিন্দি ও ইংলিশ ভার্সনে পৃথক দুটি সাউন্ড অ্যান্ড লাইট শো অনুষ্ঠিত হয়। এ সাউন্ড ও লাইট শো’র টিকিট মূল্য ভারতীয়দের জন্য ৫০ টাকা ও বিদেশিদের জন্য ১৫০ টাকা।

সম্রাট শাহ্জাহানের তাজমহল ও আগ্রা ফোর্টকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকেই। কেউ ভ্রমণে আসা পর্যটকদের গাইড করে কেউবা আবার পর্যটকদের ছবি তুলে।

আগ্রায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাআগ্রা ক্যান্টনম্যান্ট রেলওয়ে স্টেশন থেকে তাজমহল ও আগ্রা ফোর্টের দূরত্ব খুব বেশি নয়। ১২০ থেকে ১৫০ টাকা টেম্পু ভাড়া দিয়েই যাওয়া যায় তাজমহল অথবা আগ্রা ফোর্টে। আগ্রা শহরে থাকার জন্য অসংখ্য আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাজমহলের আশপাশেও কিছু হোটেল রয়েছে। যদিও তাজমহলের কাছাকাছি হওয়ায় এসব হোটেলের ভাড়া একটু বেশি। তবে উত্তর প্রদেশ ট্যুরিজম বোর্ড পরিচালিত তুলনামূলক কম ভাড়ার একটি সরকারি হোটেলও রয়েছে। তাজমহলের পূর্বদিকের গেইটের কাছেই ‘হোটেল তাজ খেমা’ নামে ওই হোটেলটির অবস্থান। এই হোটেলে সকালের নাস্তা বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়।

এসইউ/পিআর