খেলাধুলা

তামিমের ইনিংসটির মতো আরও বড় ইনিংসের আশায় মাশরাফি

‘বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের টেকনিক খারাপ। তারা হাত খুলে খেলতে পারে না। তাদের স্ট্রোক খেলার সামর্থ্য কম’- অতি বড় বাংলাদেশবিরোধীও অমন কথা বলেন না এখন। বরং যেটা বলা হয়, তা হলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা একটু বেশি শটস খেলেন। তাদের শট নির্বাচনে খানিক সমস্যা আছে। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, বড় ইনিংস খেলার ইচ্ছা, দৃঢ় সংকল্প ও ধৈর্য কম।’ডাম্বুলার রণগিরি স্টেডিয়ামে ঠিক ৭২ ঘণ্টা আগে সেই দীর্ঘদিনের অপবাদ ঘোচানোর প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন ব্যাটসম্যানরা। তামিম ঠিক বড় ইনিংস খেলেছেন। এমনিতে শট খেলা তার কাছে বিরিয়ানির মতোই প্রিয়। তবে এখন যেমন স্বাস্থ্য-ফিটনেস সচেতন হয়ে চর্বিযুক্ত খাবার কমিয়ে দিয়েছেন, ঠিক তেমনি চট্টগ্রামের খান পরিবারের ছোট ছেলে ব্যাটিং স্টাইল আর অ্যাপ্রোচেও এনেছেন পরিবর্তন।

Advertisement

২৫ মার্চ ডাম্বুলার রণগিরিতে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে দেখা মিলেছে অভ্যাসবিরোধী তামিমের। স্বভাবজাত স্ট্রোক প্লে না করে ঠান্ডা মাথায় বলের মেধা-গুণাগুণ বিচার করে সিঙ্গেলস-ডাবলসে খেলে শুধু আলগা বলগুলোকে সীমানার বাইরে পাঠানোর চেষ্টা ছিল।

তাতেই ১৪২ বলে ১২৭ রানের দীর্ঘ ইনিংস। যে ইনিংস বেদির ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ পৌঁছে গেছে ৩২৪ রানের বড়-সড় স্কোরে। দ্বিতীয় ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে ঠিক এমন একটি লম্বা চওড়া ইনিংসই চান মাশরাফি বিন মর্তুজা।

আজ দুপুরে রণগিরি স্টেডিয়ামের কনফারেন্স রুমে অফিশিয়াল প্রেস মিটে সরাসরি এমন কথাই বলেছেন টাইগার অধিনায়ক। পরিষ্কার বলে দিলেন, ‘ঠিক আগের ম্যাচে তামিম যেমন দায়িত্ব নিয়ে বড় ইনিংস খেলেছে, ঠিক এমন ইনিংস আরও চাই আমি। সেটা যে শুধু আগামীকালের ম্যাচে, তা নয়। সব সময়।’

Advertisement

ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে সব সময়ই লম্বা ইনিংস চান মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘আমি সবসময় বলি, আমাদের ব্যাটসম্যানদের কেউ একজন লম্বা ইনিংস খেলুক। তাতে অনেক দিক থেকেই উপকার ও লাভ; কিন্তু কঠিন সত্য আমাদের ব্যাটসম্যানরা বেশির ভাগ সময় ৫০/৬০ এমনকি ৭০ এর ঘরে গিয়ে আউট হয়ে ফিরে আসে। বিগ ইনিংস বলতে যা বোঝায়, তা হয় না; কিন্তু ওয়ানডেতে অমন একটি লম্বা ইনিংস খুব জরুরি।’

তামিমের উদাহরণ টেনে এনে মাশরাফি বলেন, ‘দেখেন প্রথম ওয়ানডে তামিম অনেক বড় একটা ইনিংস খেলেছে। তাতে কত লাভ হয়েছে! আমরা ৩২৪ রান করে ফেলেছি। সেটা তো তামিমের অত লম্বা-চওড়া ইনিংসের ওপর ভর করেই।’

মাশরাফি রীতিমত চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করি তামিম যদি ৫০/৬০ করে আউট হয়ে যেত, তাহলে আমরা ২৬০ বা ২৭০ এ থেমে যেতাম। শেষ দিকে মোসাদ্দেক আর মাহমুদউল্লাহ যে হাত খুলে খেলতে পেরেছে, সেটাও সম্ভব হয়েছে তামিম অনেকটা সময় এক দিক আগলে রাখার কারণে।’

টাইগার ক্যাপ্টেন উপমা টানেন এভাবে, ‘বড় বড় দলগুলোর প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকান, দেখবেন তারা কেউ ৫০ কিংবা ৬০’র ঘরে গিয়ে সহজে আউট হয় না। হ্যাঁ, খুব ভালো কিংবা আনপ্লেয়েবল এভাবে ডেলিভারি হলে ভিন্ন কথা। এমনিতে তারা ফিফটির পর চেষ্টা করেন অনেকটা সময় উইকেটে থাকতে আর বড় স্কোর হাঁকাতে। আমরা সেটা পারতাম না। দীর্ঘদিন ধরে এটাই ছিল আমাদের অতৃপ্তি ও অপ্রাপ্তির জায়গা। প্রথম ম্যাচে তামিম তা করে দেখিয়েছে। তাতেই ব্যাটিংটা জ্বলে উঠেছে।’

Advertisement

মাশরাফি একদম আসল জায়গা চিহ্নিত করেছেন। শেষ সেশনে বোলাররা লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের একের পর এক সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে ৯০ রানের বড় ব্যবধানের জয় উপহার দিলেও ম্যাচ সেরার পুরস্কারটা তামিম ইকবালের হাতেই উঠেছে। কারণ তিনিই জয়ের রূপকার। তিনিই নায়ক। তার ১৪২ বলে ১২৭ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসটিই আসলে বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছে ৩০০’র ঘরে।

আর সেটাই শেষ পর্যন্ত জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণ হয়েছে। তামিম একদিক আগলে রাখায় দু-দুটি বড় জুটি গড়ে উঠেছে। ২৯ রানের মাথায় সৌম্য (১০) আউট হওয়ার পর তামিম আর সাব্বির মিলে দ্বিতীয় উইকেটে জুড়ে দিলেন ৯০ রান। তাতে শুরুর ধাক্কা সামলে ইনিংসটা নতুনভাবে সাজল।

এরপর সাব্বির ও মুশফিক মাত্র ১ রানের ব্যবধানে ফিরে গেলে একটু ছন্দপতন। তা কেটে যায় তামিম ও সাকিবের ১৪৪ রানের জুটিতে। যেখানে সাকিব ৭১ বলে ৭২ করে ফিরলেও তামিমের অবদানও অনেক।

আগে কিংবা পরে যখনই ব্যাটিং হোক না কেন, সিরিজ নিশ্চিত করতে যে তামিমের ওই ইনিংসটির মতো আরও বড় ইনিংস দরকার। দেখা যাক মঙ্গলবার কার ব্যাট হয়ে যায় ‘মঙ্গল প্রদীপ!’

এআরবি/আইএইচএস/এমএস