মতামত

নগর পুড়লে দেবালয় এড়াবে না

দেশে জঙ্গিবিরোধী অভিযান জোরদার রয়েছে। এরপরও জঙ্গি হামলা থেমে নেই। আশকোনায় র‌্যাবের কার্যালয়ে আত্মঘাতী হামলা, বিমানবন্দর সংলগ্ন রাস্তায় বিস্ফোরণে একজন নিহত হওয়াসহ নানা ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গিদের অবস্থান ও হামলা প্রমাণ করে সরকারের জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থানের পরও তারা এখনো নিঃশেষ হয়ে যায়নি। এ অবস্থায় জঙ্গিবিরোধী অভিযান আরো ব্যাপক ও কঠোর থেকে কঠোরতর করার কোনো বিকল্প নেই। বাড়াতে হবে গোয়েন্দা তৎপরতাও। দেশের মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে জঙ্গিবাদের বিষবাষ্প থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য।

Advertisement

সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে’ সেনা কমান্ডোদের অপারেশন ‘টোয়াইলাইট’ চতুর্থ দিনেও অব্যাহত রয়েছে। আজ সোমবার ভোর থেকে থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। এদিকে সিলেটের জঙ্গি আস্তানা ‘আতিয়া মহলে` অপারেশন টোয়াইলাইটে দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। ভেতরে আরও জঙ্গি জীবিত আছে। এছাড়া সেখানে প্রচুর বিস্ফোরক রয়েছে। এ কারণে অভিযান চলবে।  এছাড়া অভিযানকে কেন্দ্র শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে জারি করা ১৪৪ ধারা এখনও বহাল আছে হুমায়ুন রশীদ চত্বর থেকে পারাইর চক পর্যন্ত। শিববাড়ি এলাকার আশপাশের প্রায় তিন বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে মহানগর পুলিশ। ফলে আজও বন্ধ আছে সিলেট-ফেঞ্চুগঞ্জ-মৌলভীবাজার সড়কে যান চলাচল।  সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকার পাঠানপাড়া সড়কের পাশে অবস্থিত পাঁচতলা বিশিষ্ট দুটি ভবনের নাম আতিয়া মহল। সিলেট নগরের আতিয়া ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির বান্দরঘাটের বাসিন্দা সাবেক সরকারি কর্মচারী উস্তার মিয়া।

ওই বাড়িতে জঙ্গিরা আস্তানা গেড়েছে এমন সন্দেহে গত বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটা থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে পুলিশ। শুক্রবার দিনভর পুলিশ, সোয়াট ও সেনাসদস্যরা বাড়িটিকে ঘিরে রাখেন। এসময় হ্যান্ডমাইকে করে বার বার সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানানো হয়। তবে এতে সাড়া মিলেনি। অবশেষে বাড়িটি ঘিরে রাখার প্রায় ত্রিশ ঘণ্টা পর শনিবার সকালে চূড়ান্ত অভিযান ‘টোয়াইলাইট’ শুরু করেন সেনা সদস্যরা। শনিবার সন্ধ্যায় দুই দফা বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ পরিদর্শকসহ ৬ জন নিহত হন। এছাড়া আহত হয়েছেন সাংবাদিক, পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যসহ ৪৬ জন।

অভিযানকে কেন্দ্র করে সারাদেশের মানুষের দৃষ্টি এখন সিলেটের আতিয়া মহলের দিকে। এই অভিযানের শেষ খবর জানতে তারা গভীর উৎকণ্ঠায় অপেক্ষা করছে। জিম্মিরা যাতে নিরাপদে বের হয়ে আসতে পারে, এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে এই অভিযানে সফল হয় সবাই সেই প্রত্যাশা করছেন। পাশাপাশি জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়েও ভাবতে হবে। জঙ্গিরা এখন আত্মঘাতী হামলা চালাচ্ছে এটা মানুষজনকে ভাবিয়ে তুলছে। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো সতর্ক হতে হবে। বাড়াতে হবে গোয়েন্দা তৎপরতাও। দেশে জঙ্গি যাতে তৈরি হতে না পারে সমাজে সে ধরনের একটি বাতাবরণ সৃষ্টি করতে হবে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমন্বিতভাবে লড়াই করতে হবে। মনে রাখতে হবে নগর পুড়লে দেবালয় কিন্তু এড়াবে না।

Advertisement

এইচআর/পিআর