ডাম্বুলার রণগিরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯০ রানের অসাধারণ জয়ের পরদিন কেমন কাটলো বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের। নিশ্চয়ই বিজয়ের আনন্দে উদ্বেল বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। তার ওপর মহান স্বাধীনতা দিবস আজ। দেশবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের সবচেয়ে বড় উপহারটিই যেন ডাম্বুলা থেকে ক্রিকেটাররা এনে দিয়েছেন।
Advertisement
এক সময় ছিল, যখন বড় দলগুলোর বিপক্ষে এমন একটি জয়ের পর পার্টি করতো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠতো। প্রতিটি ক্রিকেটারের চলাফেরা, কথা-বার্তার ধরণটাই পরিবর্তন হয়ে যেতো; কিন্তু কী আশ্চর্য! ডাম্বুলা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে ২৩ একর জায়গার ওপর দাঁড়ানো নয়নাভিরাম আলিয়া রিসোর্টে কোনো হইচই নেই। আনন্দ আর খুশিতে এখানকার বাসিন্দাদের উদ্বেলিত হয়ে ওঠার কথা, তারা কি না একেবারে চুপচাপ। পার্টি তো দুরে থাক, আনন্দ উদযাপন বলতে কিছু নেই।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে বড় উপহারটা ডাম্বুলা রণগিরি থেকে পাঠিয়েই ক্রিকেটাররা ছুটি নিয়ে নিলেন। আজ পুরোটা দিন কাটালেন পুরোপুরি ছুটির আমেজে। কোনো উচ্ছাস নেই। চলাফেরায় কোনো বাহুল্যতা নেই। টিম হোটেলে যাওয়ার পর দেখা গেলো, ছুটির আমেজেই দিনটা কাটিয়ে দিচ্ছেন ক্রিকেটাররা। যে যার রুমে। খুব একটা বেরও হচ্ছেন না। বিশাল এক যুদ্ধ জয় শেষে যেন ক্লান্ত-শ্রান্ত সৈন্যবাহিনী। বিশ্রাম শেষেই তারা বেরিয়ে আসবে জনসমক্ষে।
আসলে একটা যুদ্ধ হয়তো জেতা হয়েছে ‘রণ’গিরিতে। রণ মানেই যুদ্ধ। গিরি মানে ক্ষেত্র। যুদ্ধক্ষেত্রে স্বাগতিক লঙ্কানদের প্রথম দুর্গটার পতন ঘটিয়েছেন মাশরাফি বাহিনী। আরও যে দুটি বাকি! একটি এই রণগিরিতেই। বাকিটা কলম্বোয়। মাশরাফিদের উদ্দেশ্য কলম্বো যাওয়ার আগেই সিরিজ নিশ্চিত করে ফেলা। সে লক্ষ্যেই নিজেদের শরীরটাকে একটু বিশ্রাম দিয়ে নেয়া।
Advertisement
বাংলাদেশ দলের মধ্যে জয়ের ভুভুক্ষ বেড়েছে। তারা এখন আর একটা ম্যাচ জিতেই ‘সব অর্জন’ করে ফেলেছি বলে মনে করে না। তারা এখন সিরিজ জিততে চায়। ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত পরাশক্তিকে বিধ্বস্ত করার পর প্রমাণ করার প্রয়োজন ছিল বিদেশের মাটিতেও তারা এখন যুদ্ধ জয় করতে জানে। নিউজিল্যান্ডে হয়নি। শ্রীলঙ্কা তাদের জন্য এখন ব্যাটল গ্রাউন্ড। এখানে পারার সব প্রস্তুতি নিয়েই তো গিয়েছে মাশরাফিরা। সে লক্ষ্যে প্রথম ধাপটা ভালোভাবেই অতিক্রম করে ফেলেছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকরা আলিয়া রিসোর্টে গিয়ে দেখলেন, পুরোপুরি ছুটির আমেজে আছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। কোনো অনুশীলন নেই। জিম সেশন নেই। নেই কোনো কর্মসূচি। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জানালেন, আগামীকাল দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিতে মাঠে নামবে টাইগাররা।
তবুও সাংবাদিকদের অনুরোধে কথা বলতে এলেন প্রথম ওয়ানডেতে অভিষিক্ত মেহেদী হাসান মিরাজ। প্রথম ওয়ানডে জয়ের উদযাপনটা কেমন ছিলো? জানতে চাইলে তরুণ এই ক্রিকেটারের অভিজ্ঞ উত্তর, ‘জয়ের পর খুব ভালো লেগেছে; কিন্তু এখনো তো খেলাই শেষ হয়নি। একটা ম্যাচ জিতেই যদি আমরা খুশি হয়ে যাই, তাহলে সামনে এগোতে পারবো না। সিরিজ নিশ্চিত হলে আমরা উদযাপন করবো। তবে এটা ঠিক, একটা ম্যাচ জিতে আমাদের ভালো লেগেছে। মূল প্রত্যাশা অবশ্য সিরিজ জেতা।’
মিরাজের কথাতেই পরিস্কার, বাংলাদেশ দল এখন আর ম্যাচ জিতে উদযাপন করে না। তাদের প্রয়োজন সিরিজ জয়। তবেই না আসল উদযাপন। সে লক্ষ্যেই এখন মানসিক এবং শারীরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে টিম বাংলাদেশ।
Advertisement
আইএইচএস/জেআইএম