খেলাধুলা

লঙ্কানদের খেলা দেখা মানেই নাচ আর গান

আগের দিন টুক টুক চালক থারাঙ্গা আর কুমারাই জানিয়ে দিয়েছিলেন, ওয়ানডে সিরিজ নিয়ে ডাম্বুলাবাসীর উৎসাহ-আগ্রহ যথেষ্ঠই। বাংলাদেশি সাংবাদিক শোনা মাত্র হোটেল বয়, টুক টুক চালক, রেস্টুরেন্টে বয় আর দোকানি- সবার আবদার একটাই; খেলা দেখার টিকিট হবে?

Advertisement

আজ দুপুরে হোটেল থেকে শহরের প্রাণকেন্দ্র হয়ে রণগিরি আসার পথেই বোঝা গেল দর্শক হবে। রণগিরির মূল প্রবেশ পথের ৪০০-৫০০ গজ আগে থেকেই সারিবদ্ধ লাইন। তখনই বোঝা গেল গল ও কলম্বো টেস্টে দর্শক না হলেও ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে দর্শক হবে। হয়েছেও। প্রায় ১৭ হাজার (১৬, ৮০০) দর্শকের এ স্টেডিয়ামের প্রায় ৬০ ভাগ ভরে গেল বাংলাদেশ ইনিংসের অর্ধেক শেষ হওয়ার আগেই।

ঢাউস সাইজের নয়। ছোট ছোট জাতীয় পতাকা হাতে লঙ্কান সমর্থক প্যাভিলিয়ন, তার দু’দিকে সেডের নিচে এবং মাঠের উত্তর দিকে উঁচু মাটির টিলার মতো জায়গা জুড়ে অবস্থান নিলেন। বাংলাদেশের সমর্থকের দেখাও মিলল কিছু। সাথে ঢাকা থেকে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট সাপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশনের আট দশজনের বহর আর লাল-সবুজ জার্সি গায়ে হাতে গোনা কিছু টাইগার সমর্থকও খুঁজে পাওয়া গেল।

শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বো থেকে ১৮০ কিলোমিটার দূরে ডাম্বুলা। আর রণগিরি স্টেডিয়াম সেই কলম্বো ডাম্বুলা মহাসড়কের পাশেই। ৬৭ একর জায়গার ওপর বিশাল স্টেডিয়াম। মূল প্রবেশ পথ এবং আশপাশের এলাকার সাথে চট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের মিল আছে বেশ।

Advertisement

তবে পার্থক্য একটাই- রণগিরি স্টেডিয়ামটা অনেক বড় এলাকা জুড়ে। সাগরিকার মূল গেট থেকে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভিআইপি গেটের দূরত্ব প্রায় ৪০০ গড়ের বেশি। আর রণগিরির মূল প্রবেশ দ্বার থেকে প্যাভিলিয়ন পর্যন্ত এক হাজার গজের কম হবে না।

গল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো ভারত মহাসাগর মাঠের পাশ দিয়ে বয়ে যায়নি। কিন্তু তারপরও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কমতি নেই। চারিদিকটা কী যে সুন্দর আর মনোরম! মাঠের পূর্ব দিকে বিশাল পাহাড় ‘ডাম্বুলা রক’। আর পশ্চিমে হ্রদ। প্রাকতিক জলধারা দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়।

হ্রদ আর পাহাড়ই শেষ কথা নয়। সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই যে ৬৭ একর এলাকা নিয়ে মাঠ ও তার আশপাশের প্রায় পুরোটা জুড়ে গাছপালা। শ্রীলঙ্কার সব জায়গার মতো যথারীতি নারিকেল গাছের সমারোহ। সঙ্গে বিভিন্ন ফল ও ফুলের সমারোহ। শুধু গাছ আর গাছ। দূরে গাছের পেছন দিয়ে পাহাড়ের চূড়া মাথা উচুঁ করে অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে।

লঙ্কান ভক্তদের ক্রিকেট ম্যাচ দেখার সংস্কৃতিটা ঠিক বাংলাদেশের মতো না। বাংলাদেশে গ্যালারি বা গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড ও ক্লাব হাউজে প্রমাণ সাইজের জাতীয় পতাকা বেশি থাকে। ডাম্বুলায় অমন বিরাট শ্রীলঙ্কার জাতীয় পতাকা চোখে পড়ল না তেমন।

Advertisement

বাংলাদেশের সাপোর্টাররা প্রায় সারাক্ষণ ‘বাংলাদেশ-বাংলাদেশ’ ধ্বনিতে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে রাখেন। আর বিশেষ কেউ ভালো খেললে তাকে নিয়েও চলে স্লোগান। কিন্তু ডাম্বুলায় প্রথম ওয়ানডেতে লঙ্কান সমর্থকদের দেখে মনে হলো তারা অমন সংস্কৃতির সাথে পরিচিত নয়। তারা সাধারণত দল বেঁধে আসে। পুরো মাঠে বেশ অনেক দল। উপদল।

প্রত্যেক গ্রুপের সাথেই কঙ্গো-বঙ্গো আর স্থানীয়ভাবে নির্মিত ‘ঢোল’ আছে। আবার কোনো কোনো গ্রুপ বিউগল, কর্নেট বাঁশি নিয়ে এসেছে। সারাক্ষণ ওই কর্নেট আর কঙ্গো-বঙ্গো বাজিয়ে হৈচৈ এবং গান ও নেচে গেয়েই কাটছে তাদের সময়।বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সময় অনেক গ্রুপ মাঠের দিকে না তাকিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে বাদ্য ও কর্নেটের তালে তালে নেচে গেয়ে সময় পার করে দিল।

এআরবি/এনইউ/জেআইএম