প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, পহেলা বৈশাখে প্রকাশ্যে নারীদের লাঞ্ছনার ঘটনায় সরকার কোনো ধরণের ছাড় দেবে না। তবে বিচারের ক্ষেত্রে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। কারণ বিষয়টি আইনি ব্যাখ্যার বিষয়। আদালতে তথ্য উপাত্ত উত্থাপন করে প্রমাণ করার বিষয়। লাঞ্ছনার ঘটনায় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।রোববার বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১১৩তম পর্বের প্যানেল আলোচক হিসেবে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। রাজধানীর টিসিবি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বিবিসি সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আইনজীবী সমিতি’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বাংলাদেশ ফর উইমেন লিডারশিপ’র নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফেরদৌস।পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষের দিনে প্রকাশ্যে নারীদের লাঞ্ছনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার কি হবে? -ফারহানা সুলতানা নামে এক দর্শকের এমন প্রশ্নের জবাবে গওহর রিজভী বলেন, যে কোনো বিষয় আদালত পর্যন্ত গড়ালে তা প্রমাণে ইভিডেন্স লাগে। সেটা করতে গেলে সময় লাগবে। এটা মেনে নিতে হবে আমাদের।তিনি আরও বলেন, ঘটনার সময় পুলিশ কাছাকাছিই ছিল। এখানে পুলিশের কর্তব্য ছিল নিপীড়নকারীদের আটকানো। ওই ঘটনায় পুলিশের কোনো দায়িত্বহীনতা অথবা দায় এড়ানোর মানসিকতা ছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখা হবে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আইনজীবী সমিতি’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, জনতা দু`জনকে আটক করে পুলিশকে দিয়েছিল। পরে শোনা গেছে ওই দু`জনকে পুলিশ ছেড়েও দিয়েছে।তিনি বলেন, সরকারের মুখপাত্রের দায়িত্ব যারা পালন করছেন বা প্রশাসনে চাকরি করছেন তাদের আরও সংবেদনশীলতার পরিচয় দেয়া উচিত। কোনো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ছাড়া সরকারের মুখপাত্র হয়ে আগাম মন্তব্য করা উচিত নয় যে বৈশাখের ওই ঘটনায় কারো ছবি পাওয়া যায়নি। পরে যদি সত্যিই কারো ছবি প্রকাশিত হয় তখন ওই মুখপাত্র কিভাবে কি বলবেন? আমাদের বিচারের দাবিটি অন্তত বন্ধ করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।এক দর্শক প্রশ্ন করেন, বৈশাখে নিরাপত্তার কথা বলে প্রশাসন বিভিন্ন স্থানে ১৩১টি সিসি টিভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিল, এরপরেও তারা কিভাবে বলতে পারেন, কোনো ডকুমেন্ট নেই! এ কেমন প্রশাসন!আরেক নারী দর্শক বলেন, যেখানে সারাদেশ দেখেছে ওই দিন প্রকাশ্যে নারীদের সাথে কি আচরণ করা হয়েছে। কারা করেছে তাদের ছবি ও ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে লাঞ্ছনাকারীদের বিচার করতে আর কি প্রমাণ লাগবে?বিএনপি চেয়ারপরসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, প্রকাশ্যে এমন ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। একজন ছাত্রনেতা নারীর শ্লীনতাহানির ঘটনায় পাঞ্জাবি খুলে নারীর রক্ষার চেষ্টা করেছেন। তাকে মারধর করা হয়েছে। নারীর শরীরে কামড়ের দাগ ছিল। সবাই দেখেছে। জাবিতেও একই ঘটনা ঘটেছে।তিনি আরও বলেন, কারা এ ধরণের ঘটনার সাথে জড়িত সবাই জানে। এরপরেও কেন বিচার হয় না? আজ সময় এসেছে, এ ধরণের হীন ঘটনার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।এ সময় এক দর্শক বলেন, যারা নারীকে সম্মান দিতে জানে না, লাঞ্ছিত করে, তাদের কোনো দল থাকতে পারে না। তারা কোনো দলের ছত্রছায়ায় এসব অপকর্ম করে বেঁচে যেতে পারে না।বাংলাদেশ ফর উইমেন লিডারশিপ’র নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফেরদৌস বলেন, আমরা কোনো কিছু ঘটলেই বিচার চেয়ে পাই না। নারীদের স্বাধীনতায় নারী ও পুরুষ উভয়কেই সচেতন হতে হবে। নারী লাঞ্ছনার ঘটনায় বিচার হবে কিনা তা বলা আর্লি। তবে প্রশাসন যে কায়দায় বক্তব্য রাখছে এবং বিভিন্ন মিডিয়া প্রচারিত ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিয়ে ফটোসপে কাজ করার যে অভিযোগ শাসন করেছে তা হাস্যকর। বরং প্রশাসন কেন নিরব সে সেটাই রহস্যজনক।বিচার হবে কিনা দর্শকদের এমন সন্দেহের বিষয়ে রিজভী বলেন, আমাদের উপর আস্থা রাখুন, বিশ্বাস করুন সরকার বিচার করবে।জেইউ/আরএস/আরআই
Advertisement