বর্ষা মৌসুমে পানি ধরে রাখতে ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ। মূলত দেশের মোট পানি প্রবাহের দুই-তৃতীয়াংশই আসে এই নদ থেকে। বর্তমানে এই নদের পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় এবং উজানে চীনের বাঁধ নির্মাণের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিগগিরই এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে বলে নিশ্চিত করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্র।
Advertisement
সূত্র জানায়, পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের প্রধান নদী হলেও এসব নদীর মাত্র ৭ শতাংশ বাংলাদেশে এসেছে। এসব নদ-নদীর পানির উপর বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রণও সামান্য। এই নদীগুলোর ৮০ শতাংশ পানি মাত্র ৩-৪ মাস প্রবাহিত হয়। বাকি ২০ শতাংশ পানি প্রবাহ থাকে পুরো বছর জুড়ে। এ কারণেই পানি সংরক্ষণ করতে চায় বাংলাদেশ। এ প্রকল্পে বড় ধরনের বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
জানা যায়, বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়া ১১’শ কিলোমিটার কিউবেক পানির মধ্যে প্রায় ৯৫০ কিলোমিটার কিউবেক আসে সীমান্তের ওপার থেকে। এই পানির উপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কম থাকায় গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে বাংলাদেশ।
ব্রহ্মপুত্রে এই বাঁধ নির্মাণের সমীক্ষায় প্রকল্পের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি টাকারও বেশি। ব্যারাজের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং কারিগরি নকশা প্রণয়ন, সড়ক ও রেলপথ সংবলিত ব্যারাজের নকশা ও হেড রেগুলেটরের নকশা এর আওতায় রয়েছে।
Advertisement
প্রাথমিকভাবে সীমান্ত থেকে আনুমানিক ১০০ কিলোমিটার দূরে বাহাদুরাবাদ ঘাট বা এর আশপাশে সম্ভাব্য স্থান ধরা হয়েছে। তবে মূল ব্রহ্মপুত্র এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের সংযোগস্থলের পাঁচ কিলোমিটার ভাটিতে নির্মিত হবে এই বাঁধ। ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণে বিস্তারিত সমীক্ষা করবে মন্ত্রণালয়। দীর্ঘমেয়াদি এই বাঁধে পরিবেশের উপর প্রভাব, পলি জমলে ক্ষতি না লাভ হবে এসব দিক খতিয়ে দেখা হবে সমীক্ষায়। সূত্র জানায়, এ প্রকল্পের জন্য বিদেশি সহযোগিতা খোঁজা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। তবে শেষ পর্যন্ত নিজ অর্থায়নে হলেও সম্ভাব্যতা যাচাই করবে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশ নদীর কূল রক্ষায় অর্থ ব্যয় করে আসছে। নদীশাসন এবং পানির উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়াতে এবার বড় অবকাঠামো নির্মাণের দিকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কৃষিতে ভূগর্ভের পানির উপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ায় বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। এ জন্য ভূ-পৃষ্ঠের পানির উপর জোর দিতে হবে। খরচ তুলনামূলক বেশি হলেও তা মাত্র কয়েক বছরে তুলে আনা সম্ভব।
এ বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে দিক পরিবর্তন করে নদীর পানি বাংলাদেশে প্রবাহিত করার চিন্তা করা হচ্ছে। মূলত গঙ্গায় এবং ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিতে পারলেই এটা সম্ভব হবে। শিগগিরই ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ নির্মাণের জন্য বিস্তারিত সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
ব্রহ্মপুত্র হিমালয় পর্বতের কৈলাস শৃঙ্গের কাছে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে তিব্বত ও আসামের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভুটানের মধ্যেও গেছে কিছু অংশ। ভারতের উত্তর-পূর্বের ছয়টি রাজ্যের প্রায় ৫৭০ মাইলজুড়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদটির গতিপথ সংলগ্ন রয়েছে চারটি দেশের ৫ লাখ ৮০ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা। এদিকে চীন ব্রহ্মপুত্র নদের নিজ অংশে তিনটি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়ায় ভারত এবং বাংলাদেশে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
Advertisement
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ৫০ শতাংশ চীন, ৩৪ শতাংশ ভারত, ৮ শতাংশ বাংলাদেশ ও সমপরিমাণ অঞ্চল ভুটানসংলগ্ন।
জেপি/এআরএস/ওআর/এমএস