৫০তম জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত হলেন সমকালীন বাংলাভাষার শক্তিমান কবি ও গবেষক মজিদ মাহমুদ। পাবনা সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে দু’দিন ব্যাপি অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে কবি মজিদ মাহমুদের ৫০তম জন্মদিন পালন করা হয়।শুক্রবার দিনভর ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়িতে কবির জন্মভিটায় সমাপনীতে কবি সাহিত্যি-সাংস্কৃতিক কর্মীরা নানা আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন। আনন্দ উৎসবে যোগ দেন একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, কলকতার কবি শিল্পীসহ দেশের বিভিন্ন জেলার কবি সাহিত্যিক সাংস্কৃতিক কর্মীরা।এর আগে পাবনা জেলা পরিষদের রশিদ হলে কবির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানকে ঘিরে বাংলাদেশ ভারতসহ দেশের সকল পর্যায়ের কবি সাহিত্যিকদের মিলন মেলা বসে।পাবনা সাংস্কৃতিক পরিষদের আহ্বায়ক সাংবাদিক আখতারুজ্জামান আখতারের সভাপতিত্বে বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, জাতীয় কবিতা পরিষদের সাবেক সভাপতি কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী, ইউনিভার্সাল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবি সোহানী হোসেন, পাবনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম বেঞ্জামিন রিয়াজী, পাবনার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোল্লা মাহমুদ হাসান, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অ্যাডভোকেট তসলিম হাসান সুমন, প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিষ্ট রণেশ মৈত্র, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিবজিত নাগ, পাবনা চেম্বার অব কমার্সের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব উল আলম মুকুল, পাবিপ্রবির শিক্ষক ড. হাবিবুল্লাহ, ড. এম আব্দুল আলীম, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর মনোয়ার হোসেন জাহেদী, লেখক-শিক্ষাবিদ আখতার জামান, হাসান মাহমুদ, সঞ্জীব পুরোহিত, এবিএম ফজলুর রহমান, নরেশ মধু, আব্দুল হামিদ খান, সাংস্কৃতিক কর্মী ভাস্কর চৌধুরী, ডাক্তার মোখলেছ মুকুল, জহুরা আকতার ইরা প্রমুখ।অনুষ্ঠানে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার প্রতীক মাহমুদ, শামসউজ্জোহা, প্রমুখ।অনুষ্ঠানে কবিসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয় এবং উত্তরীয় পড়িয়ে দেওয়া হয়। কবি মজিদ মাহমুদকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিষ্ট রনেশ মৈত্র।এছাড়া অনুষ্ঠানে কবির ২টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং কেক কাটা হয়। এসময় ভারত থেকে আসা কবি মহুয়া সেন সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে এবং সম্পাদক-কবি মানসী কির্তণীয়া কবিতা দিয়ে কবিকে শুভেচ্ছা জানান।১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল কবি মজিদ মাহমুদ পাবনা জেলার চরগড়গড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মোহাম্মদ কেরামত আলী বিশ্বাস, মা সানোয়ারা বেগম। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।মজিদ মাহমুদের লেখালেখির হাতেখড়ি শিশুবেলা থেকেই। তার প্রথম বই ‘বৌটুবানী ফুলের দেশে’ প্রকাশিত হয় ১৯৮৫ সালে। পরের বছর প্রকাশিত হয় গল্পগ্রন্থ ‘মাকড়সা ও রজনীগন্ধা’ (১৯৮৬)। ১৯৮৯ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘মাহফুজামঙ্গল’ প্রকাশের পর তিনি পাঠকের দৃষ্টি কাড়েন।মজিদ মাহমুদের কাব্যের ভাষা ও আঙ্গিকের গতিময়তা সমকালীন বাংলা কবিতার জড়ত্বের মধ্যে আলাদা করে চেনা যায়। মানুষের গহন কান্না, অস্তিত্বের সঙ্কট তার কবিতায় নতুন মিথ ও মেটাফরে প্রতিফলিত। যেখানে মানবচৈতন্যের সচল উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। অবিনাশী সময়ের প্রেক্ষাপট বর্ণনায় তিনি কথকের ভূমিকায় হাজির থাকেন।কবিতা মজিদ মাহমুদের নিজস্ব ভুবন হলেও মননশীল প্রবন্ধ ও গবেষণাকর্মে খ্যাতি রয়েছে। নজরুল ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অধীনে কাজ করেছেন। এ যাবৎ তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩২।তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ: মাহফুজামঙ্গল (১৯৮৯), গোষ্ঠের দিকে (১৯৯৭), বল উপাখ্যান (২০০১), আপেল কাহিনী (২০০২) ধাত্রী-ক্লিনিকের জন্ম (২০০৮), দেওয়ান-ই-মজিদ (২০১১), সিংহ ও গর্দভের কবিতা (২০১৩), কাঁটাচামচ নির্বাচিত কবিতা (২০০৯), গ্রামকুট (২০১৫), ভালোবাসা পরভাষা (২০১৫)।গবেষণা ও প্রবন্ধগ্রন্থ: নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র (১৯৯৭), কেন কবি কেন কবি নয় (২০০৩), নজরুলের মানুষধর্ম (২০০৩), ভাষার আধিপত্য ও বিবিধ প্রবন্ধ (২০০৩), উত্তর-উপনিবেশ সাহিত্য ও অন্যান্য (২০০৮), রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণসাহিত্য (২০০৯), সাহিত্যচিন্তা ও বিকল্পভাবনা (২০১১), রবীন্দ্রনাথ ও ভারতবর্ষ (২০১২), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৪)।সম্পাদনা: বৃক্ষ ভালোবাসার কবিতা (২০০০), জামরুল হাসান বেগ স্মারকগ্রন্থ (২০০৩), বাংলা লিটারেচার ও সাহিত্য চিন্তার কাগজ ‘পর্ব’।সাংবাদিকতা মূল পেশা হলেও কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা রয়েছে মজিদ মাহমুদের। তিনি অধুনালুপ্ত দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থাসহ বেশ কিছু পত্রপত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাব, রাইটার্স ক্লাব ও বাংলা একাডেমির সদস্য।এমএএস/আরআই
Advertisement