খেলাধুলা

ডাম্বুলার রনগিরি কি এবার শুনবে বাঘের গর্জন?

তার মধ্যে এমনিতেই কোন ভনিতা নেই। কথা বলেন সোজা সাপটা। সেই মাশরাফি সরাসরি অকপটেই স্বীকার করলেন, ডাম্বুলার এই মাঠে আমাদের অতীত পারফরমেন্স ভালো না। আমরা শেষবার এই মাঠে খেলতে এসেছিলাম ২০১০ সালের এশিয়া কাপে। ঐ আসরে সবকটা ম্যাচই আমরা খুব বাজে ভাবে হেরেছিলাম।কেমন বাজে ভাবে হেরেছিল বাংলাদেশ? আসুন জেনে নেই। সেবার পুরো এশিয়া কাপই হয়েছিল ডাম্বুলায়। স্বাভাবিকভাবেই টাইগাররা তিন ম্যাচ খেলেছিল ডাম্বুলার এই রনগিরি স্টেডিয়ামে। বাংলাদেশ রবিন লিগে প্রথম খেলতে নামে ভারতের বিরুদ্ধে ; ২০১০ সালের ১৬ জুন। দিবা রাত্রির ঐ ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ৬ উইকেটে। ভাবছেন ৬ উইকেটে হার আর এমনকি? ১০ উইকেটে পরাজয়ের রেকর্ডও তো আছে ভুরিভুরি। ওই ১৬৭ রানে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। একজন ব্যাটসম্যানও পঞ্চাশের ঘরে পৌঁছাতে  পারেনি। সর্বোচ্চ ৩৭ রান  আসে ইমরুল কায়েসের ব্যাট থেকে।  দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০ রান করেন মুশফিকুর রহিম। এছাড়া তামিম করেন ২২, মাহমুদউল্লাহ ২৩, সাকিব ৭ এবং আজকের অধিনায়ক মাশরাফি ০ রানে ছিলেন নট আউট।

Advertisement

ব্যাটিংয়ের অবস্থা কত খারাপ ছিল, তা পরিষ্কার হবে আরও একটি ছোট পরিসংখ্যানে। ঐ ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মাত্র ৬ রানে ৪ উইকেট দখল করেছিলেন বিরেন্দর শেবাগ। ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য বিশ্ব খ্যাত শেবাগ অফস্পিনও করতেন। তবে নিয়মিত নয়। বাংলাদেশের সঙ্গে সেই অনিয়মিত অফস্পিনার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিংটাই করে ফেললেন।

সেই শুরু। ১৮ জুন পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ১২৬ রানের হার। আজ যিনি শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক সেই উপল থারাঙ্গা ৫৪, তিলকারত্নে দিলশান ৭১, কুমারা সাঙ্গাকারা ৫২ এবং মাহেলা জয়াবর্ধনের ৪৩ আর অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউসের ৪২ রানের ওপর ভড় করে শ্রীলঙ্কা তুলে ফেললো ৩১২ রানের বড় সড় স্কোর।  বোলারদের ব্যর্থতার দিনটিতে মোটামুটি কম রান দিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৭ ওভারে ২৮ রানে এক উইকেট। আর সাকিব আল হাসান ১০ ওভারের কোটা পূর্ন করলেন ৪৯ রান দিয়ে এক উইকেট শিকার করে। মাশরাফি দিলেন ৮ ওভারে ৭০।

জবাবে ১৮৬ তে শেষ বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ ৫১ রান (৫৩ বলে) আসলো তামিম ইকবালের ব্যাট থেকে। এছাড়া ইমরুল ৩, সাকিব ২০, মুশফিকুর রহীম ৬, মাহমুদউল্লাহ ৯ ও মাশরাফি করেছিলেন ১৫।

Advertisement

সবচেয়ে খারাপ পারফরমেন্স হলো শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের সঙ্গে। এ মাঠের সবচেয়ে বড় স্কোর হলো বালাদেশের বিরুদ্ধে। শহীদ আফ্রিদীর  ৬০ বলে করা ১২৪ রানের ঝড়ো ইনিংসটি দুমরে মুচরে দিল বাংলাদেশের বোলিং। আফ্রিদীর সেঞ্চুরির সঙ্গে যোগ হলো ওপেনার ইমরান ফরহাত (৬৬), শাহজিব হাসান (৫০) ও উমর আকমলের (৫০) হাফ সেঞ্চুরি। আর তাতেই পাকিস্তান দাড় করালো ৩৮৫ রানের হিমালয় সমান ইনিংস। যেটা আজও এই মাঠের সবচেয়ে বড় স্কোর। আর আফ্রিদীর ঐ ১২৪ রানের ঝড়ো ইনিংসটিও এখন পর্যন্ত রনগিরিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।

মাশরাফি বিন মুর্তজা আবারো বল হাতে ব্যর্থ; তার ৫ ওভারে দিলেন ৪৭ রান। সাকিব দুই উইকেট পেলেও ১০ ওভারে রান দিয়ে বসেন ৭৩। মাহমুদউল্লাহর ৭ ওভারে ৫২ রান তুলে নেয় পাকিস্তানিরা।

জবাবে ওপেনার ইমরুল কায়েস খুড়িয়ে খুড়িয়ে ১১০ বলে ৬৬ পৌঁছালেও আরেক বাঁহাতি আর জুনায়েদ সিদ্দিকি খেললেন হাত খুলে খেলে করলেন ১১৪ বলে ৯৭। আর কেউ কিছু করতে না পারায় ২৪৬ তেই শেষ হলো ইনিংস। মুশফিক ১, সাকিব ২৫, মাহমুদউল্লাহ ০ রানে নট আউট। আর মাশরাফি ব্যাটিংই পাননি।  তিন ম্যাচে দলগত পারফরমেন্সের কথা বলা হলো।

ব্যক্তিগত পারফরমেন্সও ভালো হয়নি। কোন সেঞ্চুরি নেই। জুনায়েদ সিদ্দিকি নার্ভাস নাইন্টিতে ফিরে আসেন। তিন ম্যাচে কোন বোলার ৪ উইকেট শিকারও করতে পারেননি। সেরা বোলিং ফিগার পেসার শফিউল ইসলামের ৯৫ রানে তিন উইকেট।

Advertisement

সাত বছর পর আবার ডাম্বুলায় টাইগাররা। সেই না পারার গ্লানি নিয়ে দেশে ফেরা দলের ছয় সিনিয়র সদস্য মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ আর ইমরুল কায়েস এবারো আছেন। সোনা যেন পুড়ে পুড়ে খাটি হয়, এই ছয়জনও খেলতে খেলতে নিজেরে পাকিয়ে ফেলেছেন।

২০১০ সালের তুলনায় ঐ ছয়জন এখন অনেক পরিণত। অভিজ্ঞতা এবং প্রতিকূল-অনুকূল সব পরিবেশ পরিস্থিতি মোকাবিলার পর্যাপ্ত সামর্থও তৈরি হয়েছে। একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাতাস, মেজাজ ও ধরন তাদের রপ্ত হয়ে গেছে। তারা জানেন, কখন, কার সঙ্গে কোথায় কি করতে হবে? তাই তো তাদের হাত ধরেই আজ ওয়ানডেতে দল হিসেবে মোটামুুটি দাঁড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। 

এমন পোর খেয়ে খেয়ে নিজেদের বড় পারফরমার হিসেবে মেলে ধরা মাশরাফি, তামিম, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুলরাই এ সিরিজে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন। ঐ এক ঝাঁক পরিণত ও কার্যকর পারফরমার সে এবার তাই অতীতের ধুসর স্মৃতি ধুয়ে আর না পারার গ্লানি মুছে পাহাড়, হ্রদ আর গাছ পালায় ভরা রনগিরিতে নিজেদের সেরাটা উপহার দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ মাশরাফির দল।

শুক্রবার অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনে টাইগার অধিনায়কের কথা বার্তা আর শরীরি অভিব্যক্তি বার বার বলে দিচ্ছিল এবার ডাম্বুলায় সাফল্যের নতুন কাহিনী রচনা করতে চাই আমরা। সে চাওয়ার সামর্থ্য আছে যথেষ্ঠই। এখন প্রয়োজন শুধু জায়গামত সামর্থ্যের প্রয়োগ। সে প্রয়োগ ঘটাতে পারলেই ব্যাস! বাঘের গর্জনে কেপে উঠবে পাহাড় আর সবুজ বনে ঘেরা রনগিরি।

এআরবি/এমআর/এমএস