মেধা, প্রতিভা এবং কর্ম দিয়ে যারা এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে সবচেয়ে বেশি পরিচিত করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার, যিনি ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে একসঙ্গে সেরা অলরাউন্ডারের স্থানটি দখল করেছেন। সেই সাকিব আল হাসানের আজ ৩০তম জন্মদিন। জাগো নিউজের পক্ষ থেকে সাকিব আল হাসানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।
Advertisement
১৯৮৭ সালের ২৪ মার্চ মাগুরায় জন্ম সাকিব আল হাসানের। ফুটবল পাগল পরিবারে বড় হওয়ার পরও ক্রিকেটের প্রতি ছিল তার সবচেয়ে বেশি অনুরাগ। এ কারণে সাকিব মাঝে-মধ্যে টেনিস বলে ক্রিকেট খেলতেন। সেখান থেকে মাগুরার স্থানীয় ইসলামপুর পাড়া ক্লাবের হয়ে খেলতে আসেন সাকিব। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের কারণে দ্রুতই নিজেকে ছাড়িয়ে তর তর করে উপরে উঠতে থাকেন সাকিব।
ইসলামপুর পাড়া ক্লাবের হয়ে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক ম্যাচেই উইকেট নেন সাকিব। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এরপর চলে আসেন বিকেএসপিতে। সেখান থেকে মাত্র পনের বছর বয়সেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খেলার সুযোগ পান। ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ত্রি-দেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনালে (অপর দুটি দেশ ছিল ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা) মাত্র ৮৬ বলে সেঞ্চুরি করে ও তিনটি উইকেট নিয়ে দলকে জেতাতে সহায়তা করেন তিনি।
২০০৫ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে সাকিব অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ১৮টি একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন। ৩৫.১৮ গড়ে তিনি মোট ৫৬৩ রান সংগ্রহ করেন এবং ২০.১৮ গড়ে নেন মোট ২২টি উইকেট।
Advertisement
২০০৬ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় সাকিবের। একই সফরে ওয়ানডে অভিষেক হয় ফরহাদ রেজা ও মুশফিকুর রহীমেরও। সাকিব এবং ফরহাদ রেজাকে তখন সবচেয়ে প্রতিভাবান ক্রিকেটার ভাবা হলেও, সাকিব নিজেকে ক্রমেই অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে থাকেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ৬ই আগস্ট। সাকিবের প্রথম শিকার এলটন চিগুম্বুরা। অভিষেক ম্যাচে ফিগার দাঁড়ায় ১/৩৯। ব্যাট হাতে করেন ৩০ বলে অপরাজিত ৩০ রান। শাহরিয়ার নাফীসের সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ জয় পায় ওই ম্যাচে।
২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দলের অপরিহার্য সদস্য হিসেবে জায়গা পান সাকিব। তাদের অসাধারণ কৃতিত্বে বাংলাদেশ খেলে সুপার এইট পর্ব। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী ভারতকে হারিয়ে চমকে দেয় বিশ্বকে। তামিম-মুশফিকের সঙ্গে দারুণ অবদান রাখেন সাকিব আল হাসানও।
২০০৯ সালের ২২ জানুয়ারি সাকিব আইসিসি’র ওয়ানডে অলরাউন্ডার হিসেবে র্যাংকিংয়ে ১ নম্বর স্থানে উঠে আসেন। এরপর ধীরে ধীরে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেও বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডারের তকমাটি নিজের নামের পাশে স্থান করে দেন সাকিব। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি, ক্রিকেটের প্রতিটি সংস্করণেই নাম্বার ওয়ান অল-রাউন্ডার হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মাঝে টি-টোয়েন্টি এবং টেস্টের এক নম্বর স্থান থেকে সরে গেলেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলতি টেস্ট সিরিজের পরই আবার তিন সংস্করণে শীর্ষে উঠে আসেন তিনি।
Advertisement
এখনও পর্যন্ত ৪৯ টেস্ট খেলে ৪০.৯২ গড়ে ৩৪৭৯ রান করেন সাকিব। সেঞ্চুরি ৫টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ২১টি। সর্বোচ্চ ২১৭ রান। উইকেট নিয়েছেন ১৭৬টি। চার উইকেট ৮ বার এবং ৫ উইকেট নিয়েছেন ১৫ বার।
১৬৬টি ওয়ানডে ম্যাচে ৩৪.৭০ গড়ে রান করেছেন ৪৬৫০। সেঞ্চুরি ৬টি এবং হাফ সেঞ্চুরি ৩২টি। সর্বোচ্চ ১৩৪* রান। উইকেট নিয়েছেন ২২০টি। সর্বোচ্চ ৪৭ রানে ৫ উইকেট। ৪ উইকেট ৭ বার এবং ৫ উইকেট ১ বার।
৫৭টি টি-টোয়েন্টি খেলে ২৩.৬৫ গড়ে রান করেছেন ১১৫৯। সর্বোচ্চ ৮৪। হাফ সেঞ্চুরি ৬টি। উইকেট নিয়েছেন ৬৭টি। সেরা ১৫ রানে ৪ উইকেট। ৪ উইকেট নিয়েছেন ৩বার।
আইএইচএস/এমএস