দেশজুড়ে

বিরল পাখির অভয়াশ্রম কানাই পুকুর গ্রাম

পাখির কিচিরমিচির শব্দে গ্রামের মানুষেরা ঘুমাতে যায়। আবার এই কিচিরমিচির শব্দেই তাদের ঘুম ভাঙে। এশিয়ার বিরল প্রজাতির শামুকখৈল পাখি এখন আমাদের গ্রামেই। কথাগুলো বলেন, কানাই পুকুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহসেনা বেগম। সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার কানাই পুকুর গ্রামের আব্দুস সামাদ মন্ডল ও সোবহান মন্ডলের পুকুরের শতাধিক গাছে শামুক খৈলসহ ছয় প্রজাতির হাজার হাজার পাখির স্থায়ী অভয়াশ্রম। প্রায় দেড় যুগের বেশি সময় ধরে সেখানে বাসা বেঁধে আছে মাছরাঙ্গা, পানকৌড়ি, রাতচোরা এবং বক। আর বিরল প্রজাতির এশিয়ান শামুক খৈল পাখি গত আট বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছে ওই গ্রামটিতে। প্রজনন থেকে শুরু করে ডিম, বাচ্চা, প্রাপ্ত বয়স্ককাল সব এখানেই তারা সম্পন্ন করে। শামুকখৈল ছাড়া এরা শামুক ভাঙ্গা, হাইতোলা মুখ, এশিয়ান ওপেন বিল স্কক নামেও পরিচিত।প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে হাজারও শামুকখৈল পাখি এসে আশ্রয় নেয় মন্ডল পুকুরের গাছগুলোতে। সন্ধ্যায় পুরো পুকুর মুখরিত হয়ে ওঠে পাখির কল-কাকলিতে। রাতভর চলে ওদের ডানা ঝাপটানো। নির্বিঘ্নে রাত কাটিয়ে ভোর হলেই উড়ে যায়। দিনশেষে নীড়ে আবারও ফিরে আসে। ক্ষেতলাল উপজেলা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে আলমপুর ইউনিয়নের কানাই পুকুর গ্রামের মন্ডল পুকুরে পাখিদের অভয়াশ্রম প্রায় ১৮ বছর যাবৎ।শামুকখৈলে পাখিগুলোর ছবি উঠাতে গিয়ে দর্শনার্থী জয়পুরহাটের আক্কেলপুর মহিলা কলেজের প্রভাষক হারুন-উর-রশিদ বলেন, এমন সুন্দর দৃশ্য গ্রামে-গঞ্জে পাওয়া বড় কঠিন। সকাল ও সন্ধ্যায় হাজারও পাখির কল-কাকলিতে মুখরিত এই শব্দ খুবই আনন্দদায়ক।পুকুরের মালিক রাজশাহী মিউজিয়ামের ডেপুটি ডাইরেক্টর আলহাজ আব্দুস সামাদ ও তার ছোট ভাই সমাজ সেবক সোবহান বলেন, পাখিগুলোকে আমরা আগলে রেখেছি। গাছের ফলমূল আমাদের আর হয়না। পুকুরে মাছ ভাল হয়না কারণ পুকুরটি চারদিকে গাছ গাছড়ায় জঙ্গল হয়ে গেছে। কানাই পুকুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া ছাত্র শামীম ইসলাম বলেন, ‘পাখি সব করে রব’কবিতার এ লাইনের বাস্তবচিত্র দেখা যায় এখানে। প্রতিদিন বিকেল হলেই শামুকখৈল ছাড়াও নানা জাতের অসংখ্য পাখি এসে আশ্রয় নেয় ওই পুকুরের প্রায় শতাধিক গাছে।  ক্ষেতলাল উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান পাশের বানাইচ গ্রামের তাইফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই এলাকার সচেতন মহলকে অনুরোধ করেছি পাখিগুলোকে যাতে কেউ না মারে সেদিকে  খেয়াল রাখতে, এগুলো আমাদের দেশের সম্পদ।এসএস/এএইচ/এমএস

Advertisement