আগের দিন শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি একাদশের সাথে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ চলাকালীন তো নয়ই, ম্যাচ শেষেও কিছুই বোঝা যায়নি। খেলা শেষে বাংলাদেশের প্রচার মাধ্যমের সাথে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ও অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বললেন, তখনো কিছু জানাননি।
Advertisement
এক কথায়, ২৪ ঘণ্টা আগে ঘুনাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি যে বাংলাদেশ দলে আরও একজন সদস্যের অন্তর্ভুক্তি ঘটছে। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে দলে ঢুকছেন অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। শুধু দলেই ঢোকেননি, আজ দুপুরে শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে কলম্বোর উদ্দেশে যাত্রা করেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কলম্বো থেকে ডাম্বুলার পথে রয়েছেন মিরাজ। ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় (শ্রীলঙ্কায় তখন সন্ধ্যা ৭টা) জাগো নিউজকে জানান, মিরাজ ঠিকমতো কলম্বো পৌঁছে গেছেন।
কলম্বো থেকে গাড়িতে ডাম্বুলা আসছেন। টিম হোটেলে পৌঁছাতে রাত ১০টার (স্থানীয় সময়, বাংলাদেশে তখন সাড়ে ১০টা) বেশি বাজবে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতেই দলের সাথে যুক্ত হচ্ছেন মিরাজ।
প্রসঙ্গত, আজ সকালে ১০টার দিকে কলম্বো থেকে রওনা দিয়ে বেলা দেড়টায় ডাম্বুলায় পৌঁছে টিম হোটেল আলিয়া রিসোর্টে চেক ইন করেছেন মাশরাফির দল। সঙ্গে শুভাগত হোম ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তিনজনই একই ক্যাটাগরির ক্রিকেটার। ব্যাটসম্যান কাম অফস্পিনার। কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলেছেন তিনজনই।
Advertisement
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, শুভাগত হোম ও মোসাদ্দেকের কেউ হয়তো বা মিরাজের মানের অফস্পিনার নন। কিন্তু তিনজনই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত বোলিং করেন। জাতীয় দলের হয়েও সব ফরম্যাটেই কম বেশি হাত ঘুরিয়েছেন। এমন একই ক্যাটাগরির তিনজন অফব্রেক বোলার থাকতে নতুন করে মেহেদী হাসান মিরাজকে দলে ডাকা কেন?
তাও শেষ মুহূর্তে, একদম ওয়ানডে সিরিজ শুরুর মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে। মানা যেত যাদের কথা বলা হলো তাদের কেউ একজন আহত হয়েছেন। কিংবা সাকিব আল হাসানের সাথে যিনি স্পেশালিস্ট বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে দলে জায়গা পেয়েছেন, সেই সানজামুল ইসলাম নয়নও হঠাৎ ইনজুরির শিকার। কিন্তু ওসব কিছুই হয়নি। তাহলে হঠাৎ মিরাজকে ডাকা কেন?
আর যদি তাকে নেয়াই হলো বা হবে, তাহলে কেন টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর দেশে ফেরত পাঠানো হলো। তখন কি কোচ, অধিনায়ক, নির্বাচকরা তথা টিম ম্যানেজমেন্টের মাথায় আসেনি ওয়ানডে সিরিজেও মিরাজের প্রয়োজন হতে পারে- প্রশ্ন সবার মনে।
জাগো নিউজের পক্ষ থেকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হলো ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনকেও। খালেদ মাহমুদ পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘নাহ, আগে থেকে মিরাজকে ওয়ানডে সিরিজে খেলানোর কথা ভাবা হয়নি।’ তাহলে তাকে আর টেস্ট সিরিজ শেষে দেশে ফেরত পাঠানো হতো না। এটা একদম শেষ মুহূর্তের সংযোজন। সেটা কেন?
Advertisement
তার উত্তরে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের ব্যাখ্যা, ‘আসলে শ্রীলঙ্কান টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটিংয়ে বেশ ক’জন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান আছেন। যাদের সংখ্যা চারের কম নয়। তাই আমরা একজন অফস্পিনার খেলানোর তাগিদ অনুভব করেছি। তাই মিরাজের কথা ভাবা।’
খালেদ আরও জানান, মিরাজের বিষয়ে কোচ হাথুুরুসিংহে আর অধিনায়ক মাশরাফিও উৎসাহ দেখিয়েছেন। সবার একটাই কথা, মিরাজ টেস্টে ভালো বল করেছেন। লঙ্কান ব্যাটিংয়ের একটা বড় অংশ বাঁহাতি, তাই মিরাজকে দলে নেয়ার চিন্তা।
ম্যানেজারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের দিন মানে বুধবার প্রস্তুতি ম্যাচ শেষে হোটেলে ফিরে রাতে মিরাজকে দলে নেয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আজ দুপুরে ফ্লাইটে মিরাজ শ্রীলঙ্কা রওনা হয়েছেন। মোদ্দা কথা, লঙ্কান স্কোয়াডে বাড়তি ব্যাটসম্যান ঠেকাতেই অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজের শরণাপন্ন হওয়া।
আগের দিন কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে শ্রীলঙ্কান বোর্ড সভাপতি একাদশের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানদের থামাতে পারেননি শুভাগত হোম ও মোসাদ্দেক। বাংলাদেশের পেসারদের সাথে অফস্পিনার শুভাগত হোম ও মোসাদ্দেককেও স্বাচ্ছন্দ্যে ও অনায়াসে খেলেছেন লঙ্কান বোর্ড সভাপতি একাদশের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানরা।
শুধু স্বাচ্ছন্দ্যেই খেলাই নয় সাড়ে তিনশ স্কোরও করে ফেলেন স্থানীয় বোর্ড সভাপতি একাদশের ব্যটসম্যানরা। খালেদ মাহমুদ সুজনের কথায় মনে হচ্ছে, ওই ম্যাচে অফস্পিনারদের অকার্যকারিতাই আসলে মিরাজের কথা মনে হয়েছে কোচ হাথুরুসিংহে ও অধিনায়ক মাশরাফির।
তাই খেলা শেষে সন্ধ্যার পরে হোটেলে ফিরেই কোচ, ম্যানেজার ও অধিনায়ক মাশরাফি একসঙ্গে বসেই মিরাজকে দলে নেয়ার কথা ভাবেন। ওই বৈঠকের পরই ঢাকায় মিরাজকে পাঠানোর বার্তা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী এক রাতের প্রস্তুতি নিয়ে চলে এসেছেন মিরাজ।
এরআরবি/এনইউ/আরআইপি