খেলাধুলা

‘অ্যাডহক কমিটি খেলাধুলার জন্য অশনি সংকেত’

রাজনৈতিক অংশটুকু বাদ দিলেও দেশের ক্রীড়াঙ্গনে বিশাল পরিচিতি তার। হারুনুর রশিদ দেশের বর্ষিয়ান ক্রীড়া সংগঠক। দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্লাব আবাহনীর প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি। সম্প্রতি ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোয় যে ভাঙাগড়া চলছে তা নিয়ে বৃহস্পতিবার জাগো নিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে এক প্রকার ক্ষোভই প্রকাশ করলেন এ ক্রীড়া সংগঠক। ফেডারেশনগুলোতে নির্বাচিত কমিটি বিলুপ্ত করে অ্যাডহক কমিটি গঠনকে ভালো চোখে দেখছেন না বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক এ সংসদ সদস্য।

Advertisement

হারুনুর রশিদ আশঙ্কা করছেন, যেভাবে বিভিন্ন ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন হচ্ছে তা দেশের খেলাধুলার জন্য অশনি সংকেত। ‘বাংলাদেশের জন্মই গণতন্ত্র চর্চা প্রতিষ্ঠিত করার লড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে। স্বাধীনতার পর সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ১৯৭৫ সালের পর সে ধারাবাহিকতা থাকেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার সরকার গঠনের পর ক্রীড়াঙ্গনে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনে। ফেডারেশন এবং বিভিন্ন ক্রীড়া সংস্থায় নির্বাচন দিয়ে প্রকৃত সংগঠকদের খেলাধুলা উন্নয়নের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু বর্তমানে গণতন্ত্র চর্চার সে পথ থেকে কেন যেন সরে যাচ্ছে ক্রীড়াঙ্গন’-বলেছেন হারুনুর রশিদ।

অভিজ্ঞ এ ক্রীড়া সংগঠক মনে করেন, এভাবে ঢালাও অ্যাডহক কমিটি গঠন খেলাধুলার জন্য খুবই অশুভ। ‘দেখা যাচ্ছে অনেক ফেডারেশনের দায়িত্বে আছেন নন টেকনিক্যাল ব্যক্তি। খেলাধুলায় অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই। কাউকে কোনো ফেডারেশনে বসিয়ে দিলেই তিনি খেলাধুলার উন্নয়ন করতে পারবেন, তা নয়। খেলার উন্নয়নে চাই প্রকৃত সংগঠক’-বলেছেন বর্ষিয়ান এ সংগঠক।

‘সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ফেডারেশনে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে নির্বাচিত কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হওয়া ফেডারেশন বা সংস্থাগুলোতে তো নির্বাচন দেয়ারই নিয়ম। তা না করে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে অ্যাডহক কমিটি। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে কোনো কোনো অ্যাডহক কমিটিতে মৃত ব্যক্তির নামও থাকছে। এটা অত্যন্ত লজ্জাজনক’-বলেছেন হারুনুর রশিদ।

Advertisement

যেভাবে ক্রীড়াঙ্গনে অতিথি পাখির আগমন ঘটছে তাতে প্রকৃত সংগঠকরা হারিয়ে যেতে পারেন আশঙ্কা করে হারুনুর রশিদ বলেছেন, ‘কোনো সংগঠক একদিনেই তৈরি হয় না। অথচ দেখা যাচ্ছে দীর্ঘদিন ক্রীড়াঙ্গনে কাজ করা ওইসব সংগঠককে বিদায় নিতে হয় অপমানিত হয়ে। এমন চলতে থাকলে প্রকৃত সংগঠকরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন। এক সময় তাদের হারিয়ে ফেলবে ক্রীড়াঙ্গন। তৈরি হবে শূন্যতা। আবার তাদের সরিয়ে যে সব অতিথি পাখি দায়িত্ব নেবেন তারা থাকবে না। এভাবে চললে ক্রীড়াঙ্গন নেতৃত্বহীন হয়ে পড়বে এক সময়। ঢালাওভাবে অ্যাডহক কমিটি গঠন দেশের খেলাধূলার জন্য শুভ নয়।’

আপনি তো এখন দেশের খেলাধুলার অন্যতম অভিভাবক। যে রাজনৈতিক দলটি দেশের গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা সেই আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। আপনার সময়ই ক্রীড়াঙ্গনে নির্বাচনের পরিবর্তে হিড়িক পড়েছে অ্যাডহক কমিটি গঠনের। এটাকে কীভাবে দেখছেন? ‘দুঃখটা ওখানেই আমার। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে এ দায়িত্ব দেয়ার পর মানুষের প্রত্যাশা ছিল ক্রীড়াঙ্গনে গণতন্ত্র সুদৃঢ় হবে। কিন্তু কোথা থেকে কীভাবে কী হচ্ছে- বুঝতে পারছি না। এর অবসান হওয়া প্রয়োজন’-বলেছেন হারুনুর রশিদ।

আরআই/এনইউ/জেআইএম

Advertisement