জাতীয়

গণহত্যা দিবস পালনে জাতিসংঘে আবেদন করবে সরকার

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক ‘গণহত্যা স্মরণ দিবস’ পালন করার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে তা পরিবর্তন করে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের জন্য জাতিসংঘে আবেদন করবে বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে তথ্য অধিদফতরের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

Advertisement

তিনি বলেন, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করার বিষয়ে সব যুক্তি ও তথ্য-উপাত্ত দিয়ে ইতোমধ্যে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ডকুমেন্ট তৈরি করেছে। দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের কাছে আমরা সেটা প্রেরণ করতে যাচ্ছি। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই কূটনৈতিক তৎপরতা চালাবে যে, ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস পালন হওয়া উচিত।

বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে সংগঠিত গণহত্যায় নিহতদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বাংলাদেশসহ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ১৯৩টি দেশ এ প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন করে।

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু ৯ ডিসেম্বরের স্বপক্ষে কোনো ঘটনার যুক্তি নেই তাই এটা নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো ভিত্তি নেই। ২৫ মার্চ ৫০ হাজার লোককে কেবল ঢাকা শহরেই হত্যা করা হয়েছে। যুদ্ধ লাগলে এক দেশের লোক আরেক দেশের লোককে হত্যা করে। ২৫ মার্চ পর্যন্ত আমরা আর পাকিস্তান একই রাষ্ট্র ছিলাম। কিন্তু এভাবে হত্যা কল্পনাও করা যায় না। তাই আমরা মনে করি, আমাদের এই যুক্তি বিশ্ববাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।’

Advertisement

৯ ডিসেম্বর ‘গণহত্যা স্মরণ দিবস’র পরিবর্তে ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক ‘গণহত্যা দিবস’ পালনের প্রস্তাব নিয়ে চলতি মাসেই জাতিসংঘকে আবেদন সংক্রান্ত চিঠি দেয়া হবে বলে জানান তিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘গত সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবহিত করেছেন, তিনি আবেদন প্রস্তুত করেছেন। এটা এই মাসেই পাঠানো হবে, আমাদের প্রতিনিধি জাতিসংঘে দিয়ে আসবে। তবে এই আবেদনের আগে সমর্থনের বিষয়টি মাথায় রাখছেন তারা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আবেদনের আগে আমরা যদি সমর্থন আদায় করতে না পারি এবং ব্যর্থ হলে এটা আবার ওঠানো কঠিন হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আবেদন করব। কিন্তু সেই সঙ্গে এটা জাতিসংঘে ওঠানোর আগে কূটনৈতিকভাবে অধিক দেশের সমর্থন আদায় করতে পারি সেজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা চলবে।’ সম্প্রতি সংসদ থেকে পাস হওয়া ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস পালনের যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা এ বছরই বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২৫ মার্চ  ‘গণহত্যা দিবস’ প্রথমবারের মতো পালন করতে যাচ্ছে। এ অল্প সময়ের মধ্যে এবার কাঙ্ক্ষিত কর্মসূচিতে এ দিবস পালন করা সম্ভব না হলেও বাংলাদেশ তথা বিশ্বের ইতিহাসে এ ঘটনা মাইলফলক হয়ে থাকবে।”

এদিন ‘রক্তাক্ত ২৫ শে মার্চ : গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি। মোজাম্মেল হক বলেন, ‘এবার ২৫ শে মার্চ সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন স্থানে ‘রক্তাক্ত ২৫ শে মার্চ : গণহত্যা ইতিবৃত্ত’ শিরোনামে আলোক চিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।’তিনি আরও বলেন, ‘এ ছাড়া প্রতিটি জেলা, উপজেলায় ২৫ তারিখ এ দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও গণহত্যা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘গণহত্যা দিবস’পালন করতে যাচ্ছি।’

দেশের বাইরে দূতাবাসগুলোতে দিবসটি পালনের কোনো সিদ্ধান্ত আছে কি না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘দূতাবাসগুলোতে এ বছর নির্দেশনা দেয়া হয়নি। কারণ সেখানে একটা সভা আয়োজন করতে হলে বিভিন্ন লোকদের দাওয়াত করতে হয়। দাওয়াত করতে গেলে দূতাবাসের যে একটা নিয়ম আছে, সেই নিয়মটি পালন করতে ন্যূনতম ৭ দিন লাগে। সেই সময়টা আমাদের এ বছর হাতে ছিল না দেখে দূতাবাসগুলোতে আমরা বলিনি।’তবে বিদেশে বাংলাদেশি দূতাবাসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে এ দিবসটি পালন করার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।

Advertisement

এমইউএইচ/এমআরএম/ওআর/জেআইএম