খেলাধুলা

প্রযুক্তিতেও এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

ক্রিস গেইল ব্যাট হাতে যখন মাঠে নামেন তখন বোলাররা যত না দুশ্চিন্তায় থাকেন তার চেয়ে অনেক বেশি দুশ্চিন্তায় থাকেন অধিনায়ক। ভাবনায় থাকে এ দানবকে ঠেকাতে কোন বোলারকে ব্যবহার করবেন। কারণ ব্যাট হাতে গেইল একাই পারেন প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দিতে। শুধু গেইল নয় হালের ডি ভিলিয়ার্স, বিরাট কোহলি, মার্টিন গাপ্টিলরাও যেকোনো দলকে গুড়িয়ে দিতে সিদ্ধহস্ত। তখন অধিনায়করা মাঠে নামার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তার দলের কোন বোলারটা গেইলের মতো দানবদের সামনে আনবেন। আর অধিনায়কের এ সিদ্ধান্তটা নিতে সহয়তা করেন আলোচনার বাইরে থাকা কম্পিউটার অ্যানালিস্টরা। তারা ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং ক্ষমতা কাঁটাছেড়া করে জানান কোন বোলারটা তার সামনে কার্যকর হবে।

Advertisement

২০১২/১৩ মৌসুমে সর্বশেষ বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্রাভো-পোলার্ড-রাসেলদের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানদের নেতৃত্বে যথারীতি ক্রিস গেইল। সিরিজ শুরুর আগে তাই মহাভাবনা কে থামাবেন গেইলকে? অনেকেই ফোঁড়ন কেটেছেন গেইলকে থামানোর বোলারই তোমাদের নেই, বাকিদের সামলাবে কী করে? তবে মাঠের খেলায় দেখা গিয়েছিল ভিন্নচিত্র। ম্যাচের আগের দিন রাতে তখনকার বাংলাদেশ দলের কম্পিউটার অ্যানালিস্ট নাসির আহমেদ নাসু গেইলের পুরনো ম্যাচের ভিডিও দেখে বুঝলেন অফস্পিনে কিছুটা দুর্বল এ ক্যারিবিয়ান। টিম ম্যানেজমেন্টকে জানান গেইলের সামনে শুরুতে অফস্পিন আনলে কার্যকর হতে পারে।

যা ভাবা তাই কাজ। সেবার নবীন অফস্পিনার সোহাগ গাজীকে দিয়ে ওপেন করান অধিনায়ক। ফলাফলটা হাতেনাতেই পায় বাংলাদেশ। সে সিরিজে গেইলকে বাক্সবন্দী করে রাখতে পেরেছিলেন টাইগাররা। পাঁচ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে করেছিলেন মাত্র ৬২ রান। আর দুই টেস্টে চার ইনিংসে করেন ৮৮ রান। তার প্রিয় সংস্করণ টি-টোয়েন্টিতেও ব্যর্থ ছিলেন তিনি। মাত্র ৬ রান করেছিলেন এ ক্যারিবিয়ান।

গেইলের এ ঘটনা শুধুই একটি উদাহরণ। এমন অনেক সাফল্যের গল্প রচিত হয়েছে এ কম্পিউটার অ্যানালিস্টদের হাত ধরে। যদিও কাজের কাজটা মাঠে টাইগারদেরই করতে হয়েছে। তবুও তাদের কৃতিত্বও কম নয়। বাংলাদেশ দলে টানা ১৫ বছর অ্যানালিস্ট হিসেবে কাজ করা নাসির আহমেদ নাসু এখন বাংলাদেশ দলের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম ম্যানেজার।

Advertisement

পুরনো স্মৃতি মন্থন করে তিনি বলেন, ‘ক্রিস গেইলের বিরুদ্ধে কখনও অফ স্পিনার দিয়ে শুরু করা হয়নি। আমি অনেক ভিডিও অ্যানালাইসিস করে দেখছি যে, এই একটা বিষয় করা যেতে পারে। তখন এক সাংবাদিক বলেছিলেন, গেইলও দারুণ ফর্মে। আপনারা তো গেইলকেই আউট করতে পারবেন না। আমি বলেছিলাম, একটা নতুন জিনিস চেষ্টা করবো আমরা। আমরা তখন অফস্পিনার দিয়ে শুরু করেছি এবং সফলতা পেয়েছি। এভাবেই দল লাভবান হয়েছে।’টেস্ট ক্রিকেটের অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হবার প্রায় দেড় যুগ পর বাংলাদেশ এখন সমীহ করার মতোই দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করেছে আরও দু’বছর আগেই। এখন কোনো দল বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেয়ার সাহস পায় না। যেমন বদলে গেছে বাংলাদেশ দল তেমনি বদলে গেছে অ্যানালাইসিস সিস্টেমও। এখন ছয়টি উন্নতমানের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয় ক্রিকেটের উন্নতির জন্য। পাশাপাশি এখন নিজেদের জন্য সব আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের রেকর্ডও করা হচ্ছে আর্কাইভ। যা বিসিবির নিজস্ব সার্ভারে জমা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন কোনো রেকর্ডের জন্য বাইরের দেশে হাত পাততে হয় না। আর কম্পিউটার অ্যানালিস্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছেন বিদেশি।

বিসিবিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে নাসু বলেন, ‘বিসিবিতে এখন আমরা ছয় ধরনের সফটওয়্যার ইউজ করি। জাতীয় দলে ব্যাকহ্যান্ড সার্ভিস বলে সার্ভিস আছে, যার সার্ভার এখানেই। এটার কাজ হলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যত ক্রিকেট ম্যাচ এটা অনূর্ধ্ব-১৯, মেয়েদের কিংবা জাতীয় দলের সব ম্যাচ যা টিভিতে সম্প্রচার হয় তার সব রেকর্ড বল টু বল ক্যাপচার করে এ সার্ভারে আপলোড করা হয় এই ৭২ ঘণ্টার ভেতরে। এছাড়াও আমাদের কোচিং সফটওয়্যারের জন্য আছে সিলিকন সফটওয়্যার, এইচপির জন্য অ্যাথলেট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সফটওয়্যার, বোলিং রিভিউ কমিটির জন্য পিচ ভিশন সফটওয়্যারসহ আরও বেশ কয়েকটি সফটওয়্যার ব্যবহার হচ্ছে।’

বর্তমান বিশ্বে খেলাধুলা অনেকটাই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ক্রিকেটেই ব্যবহার হয় সবচেয়ে বেশি প্রযুক্তি। মাঠের গণ্ডি ছাড়িয়ে এখন খেলোয়াড়দের প্রস্তুতিতেও ব্যবহার করা হচ্ছে প্রযুক্তি। কোনো ম্যাচে নামার আগেই কোচরা খুঁজে ফেরেন প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের দুর্বলতা। আর এর জন্য সবার আগে খোঁজা হয় অ্যানালিস্টদের। কোন ব্যাটসম্যান কোন সময়ে কেমন খেলেন। কোন ধরনের বোলারের বিপক্ষে কত রান করেন। কিংবা কোন বোলারের কোন ধরনের বল বেশি বিপজ্জনক। আর এ ধরনের বল ওভারের কোন সময়ে করেন এ নিয়ে নানা অ্যানালাইসিস। তাই আধুনিক কোচরা তাই অনেকটাই নির্ভরশীল অ্যানালিস্টদের ওপর।

নাসুর ভাষায়, ‘সার্বিকভাবে খেলাধুলা এখন প্রযুক্তি ছাড়া নড়তেই পারবে না। এখন কোনো অ্যানালিস্ট ছাড়া কোনো কোচ কিন্তু টিকতেই পারবে না। আপনি যদি বলেন, এই সিরিজে তোমার সঙ্গে কোনো অ্যানালিস্ট নেই। তাহলে ওই কোচ ওখানেই শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং এটা যত আরও দিন যাবে তত আরও বাড়তে থাকবে। আগে যেমন আমরা শুধু জাতীয় দলের জন্য একটা জিনিস নিয়ে কাজ করতাম। এখন দেখেন কত কত জিনিস চলে আসছে। এখন আরও বেশি গবেষণা হচ্ছে। এটা এখন পুরোপুরি গবেষণার কাজ হয়ে গেছে। ভারতে এমনও কোম্পানি আছে যারা ৪০-৫০ জন মিলে সারাদিন শুধু গবেষণা করছে।’

Advertisement

আরটি/বিএ