‘শ্রীলঙ্কার সাথে আমাদের ১/২ রানের কুফা (সংস্কারমূলক প্রচলিত শব্দ), (আভিধানিক অর্থ অপয়া) আছে। সেই কুফা কাটাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু অল্পের জন্য হলো না। আমার ব্যাটে বলে হচ্ছিল বেশ। ইস শেষ পর্যন্ত থাকতে পারলে হয়ে যেত। রিয়াদ (মাহমুদউল্লাহ) মানসিক চাপ নিয়ে খারাপ খেলেনি। আর একটু হাত খুলে খেলতে পারলে ভালো হতো।তারপরও ৩৫৪ চেজ হয়ে যাচ্ছিল! কি বলেন?’ ড্রেসিং রুম থেকে বাসে উঠতে উঠতে এক নিঃশ্বাসে বলে ফেললেন মাশরাফি।
Advertisement
না পারার হতাশা নয়। তবে একটা অস্ফুট আক্ষেপ আছে চোখে-মুখে। অধিনায়ক অমন আক্ষেপ করতেই পারেন। তার ইনিংসটি আর একটু বড় হলেই হয়ে যেত। তারপরও এটা চরম সত্য যে, সৌম্য, সাব্বির, মোসাদ্দেক ও মাহমুদউল্লাহ ভালো খেললেও মাশরাফির ৩৫ বলে ৫৮ রানের ইনিংসটির কারণেই অত দূর যাওয়া।
তাই তিন বছর আগে টি-টোয়েন্টি সিরিজে খুব কাছাকাছি গিয়ে হারার কথাই মনে হয়েছে। প্রথম লাইনেই আছে তার ইঙ্গিত। ইতিহাস জানাচ্ছে, ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার সাথে মাশরাফির নেতৃত্বে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পর পর দুই খেলায় শেষ বলে গিয়ে হেরেছে মাশরাফির দল।
সময়টা ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি। খেলা হয়েছিল চট্ট্রগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ঠিক আজকের ব্যবধান মানে ২ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ। থিসারা পেরেরার ফুলটচ বলে উইনিং শট হাঁকানোর বদলে উল্টো ক্যাচ আউট হন এনামুল হক বিজয়। লঙ্কানদের ১৬৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ করেছিল ১৬৬ রানে। আর শেষ ম্যাচে বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৩ উইকেটের নাটকীয় জয় পায় লঙ্কানরা।
Advertisement
হোক তা প্রস্তুুতি ম্যাচ, আর শ্রীলঙ্কার মাটিতে মাশরাফির মনে সেই স্মৃতি এখনো কাটা হয়ে আছে। আজ লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি একাদশের কাছে ২ রানে হারের পর তাই উপরের মন্তব্য টাইগার ক্যাপ্টেনের। তবে ওই কথোপকথনটাকে নেতিবাচক ভাবারও কোনো কারণ নেই।
কারন শেষ লাইনে আছে, ‘সাড়ে তিনশো রানও চেজ করে ফেলছিলাম। খারাপ খেলিনি। প্রায় জিতেই গিয়েছিলাম।’ অধিনায়কের এ কথা প্রতিধ্বনিত হলো ম্যানেজার খালেদ মাহমুদের কণ্ঠেও। খেলা শেষে স্বদেশি সাংবাদিকদের সাথে ব্যক্তিগত আলাপে খালেদ মাহমুদ বলেই দিলেন, ‘নাহ, কোনো আক্ষেপ বা আফসোস নেই আমাদের। ছেলেরা দারুণ খেলেছে। গ্রেট ফাইটব্যাক। অত বিশাল লক্ষ্যের পিছু ধেয়ে এর চেয়ে ভালো খেলা কঠিন।’
এর আগে হার্ড-হিটার সাব্বিরও বাংলাদেশের মিডিয়ার সাথে আলাপে একই সুরে কথা বলেন। কোচ চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে কোনো মন্তব্য না করলেও খেলা শেষে প্রায় অন্ধকার হয়ে আসা কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠেও তার চেহারায় ফুটে উঠল পরিষ্কার সন্তুষ্টির ছাপ।
যদিও ক্রিকেটাররা যখন সবাই ব্যাগ গোছানোয় ব্যস্ত, তখন দুই সহযোগী কোর্টনি ওয়ালশ আর থিলান সামারাবিরাকে সাথে নিয়ে ড্রেসিং রুমের বাইরে প্রায় ১৫-২০ মিনিটের একটা ছোটখাটো সেশন কাটালেন হাথুরুসিংহে। বোঝাই গেল, প্রস্তুুতি ম্যাচের পারফরম্যান্সের চুলচেরা বিশ্লেষণ হলো। কে কেমন খেললেন? তার পোস্টমর্টেমও চললো।
Advertisement
তবে তিনজনের কারো চেহারায় এতটুকু হতাশা বা বিষণ্ণতার ছোঁয়া ছিল না। বরং সন্তুষ্টিই প্রকাশ পেল। তা না পাওয়ার কোনোই কারণ নেই। শতভাগ ব্যাটিং কন্ডিশনে প্রথম সেশনে লঙ্কান বোর্ড সভাপতি একাদশের ৩৫৪ রান করা দেখে বোলিং ব্যর্থতার এক প্রতিচ্ছবি মনে হলেও খেলা শেষে আর তা ভাবার কারণ ছিল না।
আসলে উইকেট একদমই ব্যাটিং বান্ধব। সেখানে তামিম-সাকিব নেই। ৩৫৫ রান করার অর্ধ হিমালয়ের চুড়ায় ওঠা। আর সে পথে যাত্রাই শুরু হলো ইমরুলের প্রথম বলে ০ রানে ফেরা দিয়ে। ওই অবস্থার পরও শেষ পর্যন্ত ৩৫২ রানে পৌঁছে যাওয়া যে কোনো মানদণ্ডে, যে কোনো হিসেবে সন্তষ্টির।
আজ কলম্বো ক্রিকেট ক্লাব মাঠে উপস্থিত সবাই টাইগারদের বীরোচিত ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুরুতে সৌম্য-সাব্বির আর পড়ন্ত বিকেলে মাশরাফির ঝড়ো ব্যাটিংয়ে মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় দলের ভক্ত ও সমর্থকরা।
আর সকাল থেকে প্যাভিলিয়রে পাশে খোলা আকাশের নিচে জাতীয় পতাকা হাতে ‘সাবাশ-সাবাশ’, ‘হয়ে যাবে হয়ে যাবে’ বলে গলা ফাটানো ‘টাইগার শোয়েবের কণ্ঠেও কোনো আক্ষেপ নেই। বরং সন্তুষ্টি ‘সাড়ে তিনশো রান কইরা ফালাইছি ভাই। এইডা কি কম?’
প্রতিপক্ষ যেই হোক, একটা প্রস্তুতি ম্যাচে ৩৫৪ রানের আকাশ ছোঁয়া টার্গেট তাড়া করে ৩৫২ রান করা সন্তুষ্টির বৈকি। ২৫ মার্চ উপুল থারাঙ্গা বাহিনীর সাথে মাঠে নামার আগে অাজকের এ প্রস্তুুতি ম্যাচের উজ্জীবিত ব্যাটিং পারফরম্যান্স অবশ্যই ভালো খেলার দারুণ কার্যকর দাওয়াই। রসদ।
এআরবি/এনইউ/জেআইএম