হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা গড়াই নদীতে এখন কেবলই শুধু ধু ধু বালুচর। সুন্দরবনসহ দেশের উপকূলভাগে মিঠা পানির সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা ও নোনা পানির আগ্রাসন ঠেকাতে নেয়া গড়াই খনন প্রকল্প ভেস্তে যেতে বসেছে।
Advertisement
টানা সাত বছর ধরে খনন কাজ অব্যাহত থাকলেও এর সুফল পাননি কুষ্টিয়াসহ এ নদী অববাহিকার মানুষ। নদী গবেষক ও সচেতন মহল এর জন্য অপরিকল্পিত খনন আর অনিয়ম দুর্নীতিকে দায়ী করেছেন।
সূত্র জানায়, সুন্দরবনসহ দেশের উপকূল ভাগে মিঠা পানির অন্যতম আধার পদ্মা নদীর প্রধান শাখা নদী হচ্ছে কুষ্টিয়া থেকে উৎপত্তি হওয়া গড়াই নদী। ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে গড়ইা নদীতে পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় দেশের উপকূলভাগে মারাত্মক লবাণাক্ততা দেখা দেয়। তাই শুষ্ক মৌসুমে গড়াই নদীতে পানি প্রবাহ ধরে রাখতে ২০০৯ সালে ৯৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরে গড়াই খনন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়) হাতে নেয় সরকার। চলতি বছর প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে।
তবে সরেজমিন গড়াই নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, শুকনো মৌসুম শুরু না হতেই গড়াই এখন ধুু ধু বালুচর। নদীর উৎসমুখ তালবাড়িয়া থেকে কুমারখালীর চাপড়া পর্যন্ত চর পড়ে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। মাঝে মধ্যে কিছু গর্তে আটকে আছে সামান্য পানি। সেখানেই গোসলসহ অন্যান্য কাজ সারছেন নদী পাড়ের মানুষ।
Advertisement
নদীর ঘোড়া ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে মানুষ পায়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছেন। পানি না থাকায় কয়েক কিলোমিটার হেঁটে লোকজনকে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে।
এর আগে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে গড়াই নদী খনন কাজ শুরু করে। অভিযোগ রয়েছে সে সময় এ কাজে ৪২০ কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও লুটপাট হয়ে যায় বেশির ভাগ অর্থ। ফলে ভেস্তে যায় প্রকল্প।
অপরিকল্পিত নদী খনন আর অনিয়ম দুর্নীতি প্রকল্পটি বার বার ভেস্তে যাওয়ার কারণ হিসেবে মনে করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তাদের মতে শুষ্ক মৌসুমে গড়াইয়ের মাতৃনদী পদ্মায় পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত না করে গড়াই নদীতে করলে জলের টাকা এমন জলেই যাবে, কোনো কাজে আসবে না। এছাড়া ড্রেজিং থেকে উত্তোলিত লাখ লাখ ঘনমিটার বালু ও কাঁদামাটি নদীর দুইপাড়ে ফেলার কারণে বর্ষা মৌসুমে তা ধুয়ে আবার নদীর তলদেশে গিয়ে জমছে এ কারণেও গড়াই নদী খনন প্রকল্পে কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
ক্ষোভ প্রকাশ করে তালবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা করম আলী জানান, নদী খুঁড়ে তারা কোনো লাভ দেখতে পারছেন না। খনন করার সময় বালু তীরে ফেলা হচ্ছে। সেই বালু ফের নদীতেই চলে আসছে।
Advertisement
একই এলাকার বাসিন্দা তবারোক হোসেন বলেন, নদী খুড়ে সাধারণ মানুষের লাভ না হলেও পকেট ভরছে নেতা ও ইঞ্জিনিয়ারদের।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী বলেন, হাজার কোটি ব্যয় করে নদী খনন হচ্ছে অথচ সাধারণ মানুষ এর থেকে কোনো সুফল পাচ্ছেন না। বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা গড়াই নদীকে সচল রাখতে এ প্রকল্প দিয়েছেন। অথচ দুর্নীতি অনিয়মের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পটি। তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলেও আরও টাকা ঢেলেও নদীতে পানি পাওয়া যাবে না।
পরিবেশ বিশ্লেষক গৌতম কুমার রায় বলেন, নদীতে পানি না থাকায় মাছের পাশাপাশি পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। আগে নদীতে নানা জাতের পাখি দেখা গেলেও এখন আর দেখা যায় না।
নদী গবেষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার ভালো উদ্দেশ্যে গড়াই খনন শুরু করেছে। উদ্দেশ্য ছিল সন্দুরবন মিঠা পানি আর নোনা পানি আমাদের এলাকায় আসবে না। এখন খনন করেও নদীতে কোনো পানি প্রবাহ নেই। এতে করে জনগণের টাকা যেমন অপচয় হচ্ছে তেমনি কোনো কাজেও আসছে না এ প্রকল্প। সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গড়াই নদীর লাহিনী এলাকায় বসে হয় মৎসজীবী রুস্তম শেখের সঙ্গে। তিনি বলেন, নদীতে পানি নেই বললেই চলে। মাছও পাওয়া যাচ্ছে। খানা-খন্দে যে পানি জমে আছে সেখানে জাল ফেললে পুটিসহ অন্যান্য মাছ পাওয়া যায়।
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম বলেন, এ বছরই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। নতুন করে প্রকল্প অনুমোদনের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। চলতি বছরের খনন কাজ চলছে। শেষ হলে পানি প্রবাহ বাড়বে বলে তিনি দাবি করেন। এছাড়া প্রকল্পের যে উদ্দেশ্য সেটাও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।
এআরএ/বিএ