‘এই সোহেল ভাই পানি দেন না। পানি। নাসির পানির বোতল দাও তো।’ গত দু’দিন কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের ঠিক হাত মেলানো দূরত্বের ম্যাক্স একাডেমি প্র্যাকটিস কমপ্লেক্সে বাংলাদেশের প্র্যাকটিসে সর্বাধিক উচ্চারিত সংলাপই যেন এটা।
Advertisement
ব্যাটিং-বোলিং করে এসেই ম্যাসাজম্যান সোহেল আর টিমবয় নাসিরের কাছে ঠান্ডা পানি চাওয়ার রীতিমতো লাইন। কেউ বাদ নেই। সবার কিছুক্ষণ পর পর পানি চাই। টিম বাংলাদেশের জন্য তিন আইসবক্স ভরা পানির বোতল।অন্য সময় তার দুই বক্সও লাগে না। বোতল থেকে যায়। আর আজ প্র্যাকটিস শেষে এক বোতল পানিও নেই। সব শেষ। তিন আইস বক্স ভরা পানির বোতল শেষ- এত ঠান্ডা পানি পান কেন? নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে।
হয়তো একেক জন একেকরকম চিন্তা-ভাবনা করছেন। বেশিরভাগই হয়তো ভাবছেন, কঠোর প্র্যাকটিস হচ্ছে, তাই বুঝি ক্লান্ত হয়ে সব ক্রিকেটার ঠান্ডা পানির খোঁজে। হ্যাঁ কঠোর অনুশীলন হচ্ছে ঠিক। সময়টাও বেখাপ্পা। বাংলাদেশে যখন বেলা ৩টা, (কলম্বোয় বেলা আড়াইটা) ঠিক তখন শুরু প্র্যাকটিস। সূর্যি মামা তখন মাথার ওপরে।
শ্রীলঙ্কায় বিশেষ করে কলম্বোয় সূর্য একদম লম্বাভাবে কিরণ দেয়। যে কারলে সূর্যের ঝাঁঝ শরীরে বেশি লাগে। তারচেয়ে বড় কথা, প্রচণ্ড ঘাম হয়। একজন ব্যাটসম্যান ১৫ থেকে ২০ মিনিট নেটে ব্যাট করে আসার পর দেখা যাচ্ছে তার প্র্যাকটিস জার্সি ভিজে একাকার। শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।
Advertisement
ঘামের কারণে শরীর থেকে প্রয়োজনীয় পানি বের হয়ে যাচ্ছে। টিমবয় নাসির স্যালাইনযুক্ত পানি ও এনার্জি ড্রিঙ্ক তৈরির কাজে ব্যস্ত। এমন গরমেও অবিরাম অনুশীলন।
এবার শ্রীলঙ্কায় ওয়ানডে সিরিজের আগে গত দুদিনের প্র্যাকটিসে একটা বিষয় চোখে পড়ছে, তাহলো ক্রিকেটারদের পাশাপাশি কোচিং স্টাফরাও সবাই সিরিয়াস। কেউ একদণ্ড বসে নেই। সবাই ব্যস্ত। যথারীতি বেশি ব্যস্ত ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসল।
টিমবয় নাসিরকে সাথে নিয়ে মেশিনে নুরুল হাসান সোহানকে টানা প্রায় এক ঘণ্টা কিপিং প্র্যাকটিস করানো ছাড়াও ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকারকে ¯িøপ ক্যাচিং করানোর কাজেই প্রায় দেড় ঘণ্টা কাটিয়ে দিলেন হ্যালসল। ওদিকে হেড কোচ হাথুরুসিংহেও আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি কর্মতৎপর। নেটে বোলিং করছেন নিয়মিত। পাঁচ-ছয় পা দৌড়ে স্লো মিডিয়াম বোলিং করছেন। আবার কোনো সময় প্লাস্টিকের ‘বোলিং হাতার’ ভিতর বল ভরে নেটে ব্যাটসম্যানকে প্র্যাকটিস করাচ্ছেন। একটা সময় তিনি নেটের একদম মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পাখির চোখে ব্যাটিং পর্যবেক্ষণও চলছে।
আর পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ পেসারদের নিয়েই ব্যস্ত। নেটে পেসারদের বোলিং দেখার পর শেষ দিকে তাসকিন-রুবেলকে নিয়ে বেশ খানিকক্ষণ ইয়র্কার ও স্পট বোলিং প্র্যাকটিস পর্ব পরিচালনা করলেন ক্যরিবীয় গ্রেট ওয়ালশ।
Advertisement
এদিকে ইয়র্কার ছোড়ার প্র্যাকটিসে এক সময় সৌম্য সরকারকেও ডেকে নিলেন পেস বোলিং কোচ। এ জেন্টল মিডিয়াম পেসারকেও ইয়র্কার ছোড়ার বিশেষ তালিম দিলেন ওয়ালশ। ওদিকে ব্যাটিং প্র্যাকটিসটাও চলছে জোরে সোরে।
শততম টেস্টে অবিস্মরণীয় জয়ের পর একদিন ছুটি ও বিশ্রামে থাকার পর তামিম-সাকিব ছাড়া পুরো ওয়ানডে স্কোয়াড মাঠে। তবে এর মধ্যে মোস্তাফিজ আর শুভাশিস ব্যাটিং-বোলিং প্র্যাকটিস করেননি। মাঠে এসে বসে ছিলেন শুধু।
আগের দিনের মতো এদিনও নেট হলো কয়েক ভাগে। একসাথে তিন নেটে তিনজন করে ব্যাটসম্যান ব্যাটিং করলেন। এক নেটে শুধু পেস বোলিং। অন্য নেটে বাঁ-হাতি স্পিনার আর পেসার। আরেক নেটে অফস্পিনার কাম পেস বোলিং।
বেশ কজন স্থানীয় তরুণ নেট বোলারও আজ নিয়ে দ্বিতীয় দিন মাশরাফি বাহিনীর নেটে। ব্যাটিংয়ের ধরনই বলে দিল তিন নম্বরে ব্যাট করবেন সাব্বির রহমান রুম্মন। প্রথম ভাগে ওপেনার সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহিমের সাথে ব্যাট করলেন সাব্বির রহমান।
পরের অংশে ইমরুল, মাহমুদউল্লাহ ও মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর শেষ অংশে নুরুল হাসান সোহান, শুভাগত হোম, তাসকিন আহেমদ ও সানজামুল ইসলাম নয়ন- সবাইকে অন্তত আধ ঘণ্টা ব্যাটিংটা ঝালিয়ে নিলেন।
একজন যথারীতি সবার চেয়ে বেশি সময় ধরে ব্যাট করলেন। এমনিতেই একেক সময় নেটে একেক ক্যাটাগরির বোলিংয়ে ১০ মিনিট করে নেটে ৩০ মিনিট ব্যাটিংয়ের পর প্রায় ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নিয়ে আবার একা অনুশীলন মুশফিকের।
এআরবি/আইএইচএস/এমএস