বিনোদন

হাজারও ছেলেমেয়ের মুখে মা ডাক আমাকে গর্বিত করে : শিমূল ইউসুফ

শিমূল ইউসুফ। যিনি একাধারে অভিনেত্রী, নির্দেশক, সংগীতশিল্পী, আবৃতিকার। টেলিভিশন, মঞ্চ, বেতারে সমানতালে কয়েকযুগ ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। এর স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন একাধিকবার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কার। কিংবদন্তিতুল্য এই মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ‘মঞ্চকুসুম’ নামেও সম্মানিত।

Advertisement

১৯৭৪ সালে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানের সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদের বোন শিমুল ইউসুফ ঢাকা থিয়েটারে যোগ দেন এবং এ পর্যন্ত ঢাকা থিয়েটারের ৩৪টি নাটকে অভিনয়শিল্পী, সংগীত পরিচালক, কোরিওগ্রাফার ও পোশাক পরিকল্পনা, সহযোগী নির্দেশক এবং পাণ্ডুলিপি সম্পাদনার কাজ করেছেন। ১৯৮১ সালে গ্রাম থিয়েটার আন্দোলনকে সংগঠিত করতে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। দীর্ঘ পাঁচ দশকের জীবনে শিমূল ইউসুফ দুই সহস্রাধিক নজরুল সংগীত, গণসংগীত-রেডিও, টেলিভিশন ও মঞ্চে পরিবেশন করেন এবং মঞ্চের ৩৩টি নাটকের ষোল শতাধিক মঞ্চায়নে সফল অভিনয় করেন।

তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক- ‘মুনতাসীর ফ্যান্টাসি’, ‘কসাই’, ‘চর কাঁকড়া’, ‘শকুন্তলা’, ‘ফণীমনসা’, ‘কিত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘হাতহদাই’, ‘চাকা’, ‘একাত্তরের পালা’, ‘যৈবতীকন্যার মন’, ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’, ‘বনপাংশুল’, ‘প্রাচ্য’, ‘বিনোদিনী’ প্রভৃতি। টেলিভিশন নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘ঘরোয়া’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘গ্রন্থিকগণ কহে’ ও ‘নির্বাসন’।তার আজ জন্মদিন। এবারে তিনি ষাটে পা রাখলেন। এবারে তিনি বললেন তার ‘জন্মদিনটা বালাইষাট’। বয়সকে জয় করে তিনি কাজ করে যেতে চান আরও অনেক, অনেক বেশি। জীবনের বিশেষ এই দিনে শিমূল ইউসূফ কথা বললেন জাগো নিউজের বিনোদন বিভাগে-

জাগো নিউজ : শুভ জন্মদিন আপা.....শিমূল ইউসুফ : ধন্যবাদ, অনেক শুভেচ্ছা।

Advertisement

জাগো নিউজ : জন্মদিন কীভাবে কাটাচ্ছেন?শিমূল ইউসুফ : আমি বাসাতেই আছি। আর নিজ থেকে কখনোই জন্মদিন পালন করি না। আমার মেয়ে এষা ইউসুফ ও তার বাবা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু রাত ১২ টার পরই আমাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। এটা প্রতিবছরই করে থাকে। তাছাড়া সকাল থেকে দেশ-বিদেশ বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য মানুষ আমাকে ফোন করে উইশ করছেন। এ এক অভিভূত হওয়ার মত ভালোবাসা।

জাগো নিউজ : ছোটবেলার জন্মদিনের বিশেষ কোনো স্মৃতি মনে পড়ে?শিমূল ইউসুফ : অনেক স্মৃতিই তো মনে পড়ে। তবে বিশেষ একটার কথা বলি। আমার জন্মদিনে মা আমাকে পায়েশ রান্না করে খাওয়াতেন। তখন তো কেকের প্রচলন এত ছিল না। অনেক চমৎকার করে মা পায়েশ মুখ দিয়ে খাওয়াতেন। এই স্মৃতিটা প্রতিবার জন্মদিনে আমাকে নাড়া দেয়। আর শৈশবের ওইসব স্মৃতি আজও চোখে ভেসে ওঠে।

জাগো নিউজ : সাংগাঠনিকভাবে জন্মদিন পালন করা হচ্ছে?শিমূল ইউসুফ : হ্যাঁ। আজ সন্ধ্যা ৬ টায় শিল্পকলার নৃত্য ও সংগীতভবনে আমাকে ইনভাইট করা হয়েছে। নাট্যকর্মী ও শিল্পকলার বিভিন্ন সংগঠন থেকে আমার জন্মদিন পালন করা হবে। তারা যে কে কী আয়োজন করেছে সেটা আমি জানিনা। আমাকে বলেছে আমি যেন অবশ্যই উপস্থিত থাকি। অনেক সারপ্রাইজ নাকি আমার জন্য অপেক্ষা করছে। দেখো বাবা, আমি জানি সেখানে আর কিছু না থাকুক, ভালোবাসার বন্যা বয়ে যাবে। এই ভালোবাসার লোভই আমাকে বাঁচার তাগিদ দেয়, আরও অনেক কিছু করে যাবার তাগিদ দেয়।

জাগো নিউজ : এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। নতুন যারা মঞ্চে কাজ করছে তাদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?শিমূল ইউসুফ : আমরা যখন মঞ্চে কাজ শুরু করেছিলাম তখন কাজের পরিধি এত বড় ছিল না। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা ছিল। এখন তো অভিনয়ের নানা মাধ্যম আছে। এতকিছু থাকা সত্বেও যারা মঞ্চকে ভালোবেসে, মঞ্চ আঁকড়ে আছেন তাদেরকে আমি স্যালুট জানাই। তারা অনেক ভালো করছে, সেকারণে আমার পক্ষ থেকে তাদের অভিবাধন।

Advertisement

জাগো নিউজ : মঞ্চে কাজ না করে অনেকেই অভিনয়ে আসছেন আজকাল। তারা কি অভিনয়ের মূল ভিত্তিটা পাচ্ছে বলে মনে করেন?শিমূল ইউসুফ : এটা আসলে সত্যি যে অনেকসময় মানুষের ভিতরে শিল্পটা সহজাত থাকে। অনেকের খুব খেটে অভিনয়শিল্পী হতে হয় না, জন্মগতভাবেই ধারণ করে। তাদের ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে তারা মঞ্চ, থিয়েটারে কাজ না করেও নাটক-চলচ্চিত্রে খুব ভালো পজিশনে আছে। আর যারা অভিনয়ে পোক্ত হতে চায় তাদের আমি বলব মঞ্চে কাজ করা উচিত। এখানে ভিত্তিটা মজবুত হয়। মোটকথা ক্যারেকটার এনালাইসিস বলে একটা জিনিস আছে। থিয়েটার কিন্তু এটা খুব ভালোভাবে শেখায়।

জাগো নিউজ : একজন নারী হিসেবে আপনি সফল। নিজের সাফল্যের ব্যাপারটি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?শিমূল ইউসুফ : আমি কাজের ক্ষেত্রে কোনো সময়ই নিজেকে নারী ভাবি না। সবসময় নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে বিচার করি। মানুষ হিসেবে যদি মনে করি আমি সফল তখন আমি নিজেকে সফল ভাবি। তাছাড়া আমি মনে করি, আমি সফল নই। এখনও আরও অনেক কিছু করার আছে। কারণ আমি মনে করি সফল হওয়া মানেই ফুরিয়ে যাওয়া। আমি ফুরিয়ে যেতে চাই না।

জাগো নিউজ : অভিনেত্রী, নির্মাতা, শিল্পী ছাড়া আরও অনেকে পরিচয়ে পরিচিত আপনি। আলাদা টান কিংবা ভালো লাগা খুঁজে পান কোথায়?শিমূল ইউসুফ : অবশ্যই অভিনয় আমাকে টানে। তা না হলে গায়িকা থেকে অভিনেত্রী হতাম না। সত্যি কথা বলতে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করার জন্য অভিনয়ে এসেছি। স্বাধীনতার পর আমাদের যে অবস্থা ছিল তাতে আমার মঞ্চে অভিনয়ের ইচ্ছে জন্মেছিল। পরে এই ইচ্ছেটা নেশা হয়ে গেছে।

জাগো নিউজ : আপনার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি আছে?শিমূল ইউসুফ : আমার জীবনে কোনো অপ্রাপ্তি নেই। আর সেই অর্থে কোনো চাহিদাও নেই। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসবে তখনই আসে, যখন চাহিদা বেড়ে যায়। আমার তেমনটা নেই। আমি সবমিলিয়ে খুব সুখি মানুষ। তাছাড়া হাজারও ছেলে-মেয়ে আমাকে মা বলে ডাকে এটা আমার জীবনে সেরা প্রাপ্তি।

জাগো নিউজ : অবসরে কী করেন?শিমূল ইউসুফ : হ্যাঁ, এখন তো শারীরিকভাবে কিছু অসুস্থ তাই বেশিরভাগ সময় অবসরেই থাকি। আর অবসরে থাকলে বই পড়ি, নাটক দেখি, খবর-টক শো এই গুলোই দেখি ও শুনি।

জাগো নিউজ : আপনার শৈশব কেটেছে কোথায়?শিমূল ইউসুফ : ঢাকা কমলাপুরে আমাদের বাড়ি ছিল। সেখানেই আমার জন্ম, শৈশব-কৈশোর কেটেছে।

জাগো নিউজ : আপনার তত্বাবধানে ‘শিল্পী মঙ্গল’ নামে একটি ফান্ড আছে। ওটার কী অবস্থা? শিমূল ইউসুফ : হ্যাঁ, আছে। সেলিম আল দীন মারা যাওয়ার পর তার রেখে যাওয়া ৪ লাখ এবং আমি পড়ে ৩ লাখ দিয়ে মোট ৭ লাখ টাকা দিয়ে ‘শিল্পী মঙ্গল’ নামে একটি ফান্ড তৈরি করি। ওই টাকা এখন ডিপোজিট করা আছে। অসহায়, দুস্থ শিল্পীদের ওখান থেকে অর্থ দিয়ে সাহায্য করা হয়। কেউ যদি সাহায্য করতে চান তাহলে সেই অর্থ নিয়ে ওখানে জমা রাখি। অনেকদিন হলো ওই ফান্ডে কেউ অর্থ দিচ্ছেন না। অভাবে আছে। আমিও শারীরিকভাবে দুর্বল। খাটতে পারছি না। ফান্ডটিকে নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবতে হবে।

জাগো নিউজ : কিছুদিন আগে আপনার শারীরিক অবস্থা তেমন ভালো ছিলনা। এখন কেমন আছেন?শিমূল ইউসুফ : এই এক মাস ধরে জ্বর আর কাশিতে ভুগছি। জ্বরের চিকিৎসা নিচ্ছি। তাছাড়া তিন-চার মাস আগে আমার কোমরের হাড় ক্ষয় হওয়া ধরেছিল। ওটার চিকিৎসা নিতে হয়েছে দীর্ঘদিন হাসপাতালে থেকে। তবে আমার মনোবল শক্ত রেখেছি। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসে থেকে আবার মঞ্চে ফেরার ইচ্ছে আছে।

জাগো নিউজ : অনেক অনেক ধন্যবাদশিমূল ইউসুফ : শুভেচ্ছা আবারও, ভালো থেকো।   এনই/এলএ