গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার হরিনাথপুর ইউনিয়নের হরিনাথপুর গ্রামজুড়ে এখন ঋণগ্রস্ত মানুষের আহাজারি। সমবায় ব্যাংকের ঋণের চিন্তায় ঘুমাতে পারছেন না গ্রামের মানুষ। চিন্তা বেশি হওয়ার কারণ ঋণ না নিয়েও ঋণের জালে বন্দি হয়েছেন তারা। ওই গ্রামের ৪২ জন মানুষের নামে ঋণের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন একই গ্রামের প্রতারক আবু ইউসুব সিদ্দিক। বিষয়টি জানাজানি হবার পর চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঋণের তালিকায় নাম থাকা মানুষেরা। এমনি একজন অসহায় নারী স্বামীহারা রবিলা বেওয়া। স্বামী মারা যাওয়ার পর বাবার বাড়িতে একটি কুঁড়েঘরে থাকেন তিনি। ছেলেমেয়ে আর আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতা নিয়ে কোনমতে দিন কাটে তার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ২০১৩ সালে আবু ইউসুব সিদ্দিক ওই গ্রামের বেশ কিছু নারী-পুরুষকে নিয়ে গড়ে তোলেন নাকাই বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড। সমিতির সদস্যদের কাজ দেয়ার কথা বলে, প্রত্যেকের কাছ থেকে ছবি, ভোটার আইডি কার্ড এবং ১ হাজার করে টাকা নেন। তাদেরকে দিয়ে বিভিন্ন রাস্তা ও খাল খনন করে নেন ঠিকই কিন্তু কাউকেই কোন মজুরি পরিশোধ করেনি ইউসুব। নানা তালবাহানা করে তাদের ঘোরাতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত রবিলা বেওয়ার নামেও সমবায় ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করেন ইউসুব।ভুক্তভোগী আনিছুর জামান বলেন, কিছুদিন আগে আমি শুনতে পারি আমার নামে ব্যাংক থেকে লোন তোলা হয়েছে। খবর পেয়ে আমি ব্যাংকে গিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখি আমার ছবির জায়গায় অন্য মানুষের ছবি লাগানো। সইটাও তার নয়। বিষয়টি সমবায় ব্যাংকের ম্যানেজারকে জানালে, তিনি পদক্ষেপ নেবেন বলে আনিছুরকে আশ্বস্ত করেন। আনিছুর জামান বলেন, সমবায় ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সাথে প্রতারক ইউসুবের যোগসাজস না থাকলে কিভাবে এতো বড় জালিয়াতি সম্ভব হলো। গ্রামের অসহায় নিরীহ মানুষদের হয়রানি না করে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থার দাবি জানান তিনি। রাজেদা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, কোনদিন ব্যাংকোত যাই নাই, সই সিগনেচার দেই নাই। হামরা ট্যাকা তুললাম কখন। তিনি বলেন, টাকা পয়সা গ্রহণ না করেও কি ঋণী হওয়া যায়? ওই এলাকার যুবক রাব্বী মিয়া বলেন, মৎস্য প্রকল্পের নামে নাকাই বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি প্রতারক আবু ইউসুব সিদ্দিক সমবায় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় গ্রামের অসহায় মানুষদের নাম ভাঙিয়ে ঋণের টাকা আত্মসাত করেছেন। ইউসুব এর আগেও একাধিকবার মানুষের সাথে নানা প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাত করেছেন। ২০১৩ সালে নাকাই বিল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি গঠন করে ইউসুব নিজে ওই সমিতির সভাপতি এবং তার নিকটাত্মীয় মেরিনা বেগমকে সাধারণ সম্পাদক করেন। ওই সমিতির সদস্যদের নামে মৎস্য প্রকল্প দেখিয়ে ২০১৫ সালের মার্চ মাসে তিনি নিজের স্ত্রী, মেয়েসহ গ্রামের ৪২ জন খেটে খাওয়া নিরীহ মানুষের নাম ভাঙিয়ে ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।এ ব্যাপারে অভিযুক্ত আবু ইউসুবের সাথে কথা বলতে তার বাড়িতে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি। তিনি বাড়িতে নেই বলে জানান তার পরিবারের এক সদস্য। জেলা সমবায় অফিসের কর্মকর্তা উপ-সহকারি নিবন্ধক আব্দুল বারী শাহ বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কি প্রক্রিয়ায় আবু ইউসুব এতো বড় জালিয়াতি করলেন এই বিষয়টি খুঁজে দেখা হবে। তবে সমবায় কর্তৃপক্ষ জড়িত কিনা এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমজেড/পিআর
Advertisement