কাতারে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার, জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করার অভিযোগ ও নতুন শ্রম আইনের বিষয়ে জাতিসংঘে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার জাতিসংঘের শ্রম বিষয়ক সংস্থা আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার এক বৈঠকে ওই শুনানি শুনানি হবে।
Advertisement
গত বছর একটি শ্রম ইউনিয়নের দায়ের করা অভিযোগের বিষয়ে তদন্তের জন্য এর আগে ভোট দেয় আইএলও। পরে কাতারে প্রবাসী শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ পরিদর্শনে যান আইএলও’র কর্মকর্তারা।
অভিযোগে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও তাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে কাতার। শ্রমিকদের সুরক্ষা ও আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয় ওই অভিযোগে। এতে দেশটির সাবেক কাফালা আইনের নিন্দা জানিয়ে বলা হয়, উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে এই আইন অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণমূলক ছিল।
শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠা ও আইনি সংস্কারের পরামর্শ দেয় আইএলও। এই ইস্যুতে গত বছরের মার্চে দেশটিকে এক বছরের সময় দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় আন্তর্জাতিক এই শ্রম সংস্থা। ওই সময় দেশটিতে শ্রম আইন পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় সময় বেঁধে দেয়া হয়।
Advertisement
গত বছরের শেষ দিকে শ্রম আইন সংস্কার করে কাফালা পদ্ধতি বাতিল করা হয়। এর ফলে দেশটিতে শ্রমিক নিয়োগ চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতিতে করা হয়। আগে থেকে সেখানে থাকা শ্রমিকদের চুক্তিও নতুন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত হয়।
গত মাসে কাতারের কর্মকর্তারা নতুন শ্রম আইনের বিষয়ে নথিপত্র আইএলও’র কাছে দাখিল করে। এতে বলা হয়, দেশটিতে শ্রম অধিকারের উন্নতি ঘটছে। এতে বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরা হয়। এছাড়া কাফালা রহিত করা হলেও আইএলও’র কাছে দাখিল করা নথিতে কাতার বলছে, শ্রমিক নিয়োগের কাফালা পদ্ধতি বাতিল করা হয়েছে।
নতুন আইনের ফলে শ্রমিকদের চাকরি ও স্পন্সর পরিবর্তন সহজ হয়েছে। পূর্বে বেতন-ভাতা ঠিক সময়ে না পেলে কিংবা শোষণের শিকার হলেও কাফালা পদ্ধতির কারণে চাকরি ছাড়ার কোনো উপায় ছিল না শ্রমিকদের। তবে পরিবর্তিত নতুন আইনেও শ্রমিকদের দেশত্যাগে নিয়োগকর্তার অনুমতির প্রয়োজন হয়।
২০২২ সালে দেশটিতে বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হবে। বিশাল এ আয়োজন ঘিরে কাতারের নতুন পরিবহন অবকাঠামো, গৃহনির্মাণ ও ৬টি স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ চলছে। দেশটিতে কাফালা পদ্ধতি চালু থাকায় বিশাল কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত বিদেশি শ্রমিকরা চাইলেও চাকরি পরিবর্তন কিংবা দেশ ত্যাগ করতে পারত না।
Advertisement
এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে শ্রম আইন সংশোধনের ঘোষণা দেয় কাতার। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর থেকে কাতারে সংশোধিত আইন কার্যকর হয়েছে। নতুন এ আইনে শ্রমিকদের চাকরি পরিবর্তনে কোনো বিধি-নিষেধ না থাকলেও অভিবাসী শ্রমিকরা শ্রম শোষণের শিকার হতে পারেন বলে সতর্ক করে দেয় অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছে, শ্রমিকরা দেশে ফিরতে চাইলে কাফিলের অনুমতি কিংবা অনাপত্তির প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে একজন শ্রমিকের বিরুদ্ধে যদি কোনো আইনি অভিযোগ না থাকে, সে ইচ্ছা ও প্রয়োজন মতো নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
এসআইএস/এমএস