ইট-পাথর আর কংক্রিটের রাজধানীতে সবুজের সান্নিধ্য খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এ কারণে ঢাকাকে সবুজ করতে দুই সিটি কর্পোরেশন হাতে নিয়েছে দুটি প্রকল্প। কিন্তু সে প্রকল্পের সুফল এখনও দেখা দেয়নি। তার আগেই নগরীর প্রকৃতিতে এখন সবুজের সমারোহ।
Advertisement
নগরীতে অল্প যে গাছপালা রয়েছে তাতে ধরেছে সবুজ পাতা। ঘিঞ্জি ও জঞ্জালপূর্ণ নগরী সেজেছে প্রকৃতির সবুজ পরশে। ফাল্গুনের শেষ ও চৈত্রের শুরুতে নগরীর সড়কের দুই পাশ আর বাসাবাড়ির আঙ্গিনায় থাকা গাছে কচিপাতায় পুরো নগরীই সবুজে পরিণত হয়ে উঠেছে।
গত এক মাস আগে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন ঘটলেও পুরোদমে যেন বসন্তের সমারোহ ঘটেছে এখনই। গত কয়েকদিন রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, শহরের প্রায় প্রতিটি গাছেই নতুন পাতা গজিয়েছে। যেদিকেই চোখ যায় সবুজ আর সবুজ। প্রকৃতিকে রাঙিয়ে সবুজের মাঝে ফুটেছে নানা রঙের ফুল। যেন ঢাকা সেজেছে নতুন সাজে।
তবে ঢাকাকে এ সবুজের সমারোহে সারা বছরের জন্য সাজাতে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশন পৃথক দুটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ‘জল-সবুজে ঢাকা’ আর উত্তর সিটির ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ প্রকল্প। দক্ষিণ সিটির ‘জল-সবুজে ঢাকা’ প্রকল্পে ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠ আন্তর্জাতিকমানের করে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তার ঘোষণা মতে এসব পার্কে হবে জল আর সবুজের সমারোহ। গত বছরের শেষ দিকে মেয়র এ ঘোষণা দিলেও এখন পর্যন্ত কর্পোরেশনের প্রকল্পের কোনো সুফল দেখতে পায়নি নগরবাসী। তবে প্রকৃতির পক্ষ থেকে সাজিয়ে দেয়া নগরী দেখে মুগ্ধ নগরবাসী।
Advertisement
এই প্রকল্পে কলাবাগান মাঠ, বাসাবো মাঠ, লালবাগের দেলোয়ার হোসেন মাঠ, আমলিগোলা মাঠ, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, বালুরঘাট মাঠ ও শহীদ আবদুল আলিম মাঠ, বাবুবাজারের রহমতগঞ্জ মাঠ, বংশালের সামসাবাদ মাঠ, বাংলাদেশ মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ এবং ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খেলার মাঠ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পার্কের মধ্যে কারওয়ানবাজারের পান্থকুঞ্জ, গুলিস্তানের ওসমানী উদ্যান, যাত্রাবাড়ী পার্ক, শরাফতগঞ্জ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, জিন্দাবাহারের সিরাজউদ্দৌলা পার্ক, জগন্নাথ সাহা রোড পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, বংশালের সিক্কাটুলি পার্ক, বংশাল পার্ক, মালিটোলা পার্ক, ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের বশিরউদ্দিন পার্ক, সায়েদাবাদের আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, মতিঝিল পার্ক, ধানমন্ডি ৩ নম্বর পার্ক, হাজারীবাগের গজমহল পার্ক, বকশীবাজার পার্ক ও রসুলবাগ শিশুপার্ক তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ পার্কগুলো দখলমুক্ত করে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
অন্যদিকে ‘গ্রিন ঢাকা, ক্লিন ঢাকা’ উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় ১০ লাখ গাছ রোপণের ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। ঘোষণা অনুযায়ী বিভিন্ন স্কুল ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে চারাগাছ বিতরণ কর্মসূচিও পালন করেন তিনি।
তবে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেয়া প্রকল্পের সুফল এখনও নগরবাসী দেখতে না পেলেও কর্পোরেশনের সে কাজ যেন ক্ষণিকের জন্য করে দিয়েছে প্রকৃতি। এসব মাঠ, পার্ক আর সড়কগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা গাছপালা সবুজে গড়ে উঠলেও গ্রাম-বাংলার মতো এখন আর শিমুল, কদম, কৃষ্ণচূড়া গাছ নেই। নেই পাখির কোলাহল, নেই সেই আগের মতো আনন্দ ও মনোরম পরিবেশ। তাই ফাগুনের রঙে রাঙানো রক্তলাল শিমুল গাছকে নিয়ে কবিতা লেখার মতো মানুষও তৈরি হচ্ছে না।
Advertisement
এমএসএস/জেডএ/ওআর/আরআইপি