তবে কি শততম টেস্টের আগে ঘুমন্ত সাকিবকে জাগিয়ে তুলতে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিনে হাথুরুসিংহে? মাঝে খানিক অনুজ্জ্বল সাকিব, সত্যিই ব্যাট ও বলে নিজের ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে ফেলেছিলেন খানিকটা!
Advertisement
তা বাড়াতেই কি কলম্বো টেস্টের আগে গরম কড়াইতে ঘি ঢেলেছিলেন বাংলাদেশ কোচ? বাংলাদেশের বোলিং শক্তি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে হঠাৎ সাকিবকে টেনে এনে বলে বসেন, ‘আমি ২০১০-এর দিকে যে সাকিবকে দেখেছি। এখন ঠিক সেই সাকিব নেই।’
কোচের মুখে অমন কথাই কি বদলে দিল সাকিবকে? নাকি কোচকে ভুল প্রমাণ করতে মরিয়া সাকিব নিজেকে মেলে ধরলেন অবারো? দ্বি-মুখি প্রশ্ন আছে।
সে যাই হোক। আসল সত্য হলো কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে শততম টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্যের অন্যতম প্রধান রুপকার সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে প্রথম ইনিংসে অনবদ্য শতরানসহ দু’বারে (১১৬+১৫) = ১৩১ রান আর ৬ উইকেট (২/৮০ + ৪/৭৪) দখল করে ম্যাচ সেরা না হলেও তারও বড় সিরিজ সেরার পুরস্কার সাকিবের হাতে।
Advertisement
এ পুরস্কার পেয়ে যতটা উল্লসিত হবার কথা, কেন যেন সাকিবকে দেখে তত খুশি মনে হলো না। প্রেস কনফারেন্স আসলেন মোবাইল হাতে। সারাক্ষণ মোবাইল টেপাটেপি করলেন। দেখতে দৃষ্টিকটু লাগলো।
একটা টেস্ট শেষে অফিসিয়াল প্রেস কনফারেন্স। যা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার একাধিক টিভি চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল। সেখানে পাশে বসা অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম যতক্ষণ মিডিয়ার সাথে কথা বললেন, সাকিব আল হাসানের মনোযোগ আর চোখ ও হাত ততক্ষণ মোবাইলে।
তার প্রতিই প্রশ্ন উঠলো, কোচতো আপনার বোলিংয়ের ধার কমে গেছে বলে মন্তব্য করেছিলেন; কিন্তু আপনিতো এ ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল বোলার। এ নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
সাকিবের ভাবলেশহীন জবাব, ‘সব সময় চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার। কখনও হয়, কখনও হয় না। হয়তো এই ম্যাচে ভালো করেছি, তাই এখন বলতে পারেন আগের মতো বল করেছি।` এরপর হাসতে হোসতে রসিকতা করে সাকিব বললেন, ‘এ টেস্টের পরে হয়তো আবার বলবেন যে না ঠিকই আছে। আগের সাকিব আবার ফিরে এসেছে।’
Advertisement
তার পারফরমেন্স নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। তা নিয়ে এতটুকু মাথা ব্যাথা নেই- একথা জানিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমার মনে হয় একটু লাকি। কারণ এ রকম পরিস্থিতিতে আমি দলের জন্য পারফরম করতে পেরেছি। দলের জন্য ভূমিকা রাখা আমার জন্য অনেক বড় একটা ব্যাপার। যেভাবে খেলেছি, দলের জন্য অবদান রাখতে পেরে খুশি। বারবার এর পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করবো। আশি করি, আমরা আরও বেশি ম্যাচ জিতবো।’
এরপর কোচ হাথুরুরকে যখন বলা হলো, আপনি বলেছিলেন ২০১০ এর সাকিব আর নাই। এখন কী বলবেন? তিনি হেসে বললেন, ‘কই আমি কী এমন কথা বলেছিলাম?’ তখন সাংবাদিকদের মধ্য থেকে বলা হলো- হ্যাঁ, সেটা অনরেকর্ড আছে আপনি বলেছিলেন।
এরপর হাতুরু হাসতে হাসতে ব্যাখ্যা করলেন, ‘আমি সাকিবকে প্রথম ভালোমত লক্ষ্য করেছিলাম ২০১০ এর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তখন তাকে খুবই বিপজ্জনক বোলার মনে হয়েছিল এবং তখন সে যা যা করতো, তাও আমার খুব ভালো লাগেতো।’
এরপরের সাকিবের সঙ্গে আর ২০১০ এর সাকিবের মিল পাচ্ছিলেন না হাথুরু। তিনি বলেন, ‘সেই ২০১০ এর সাকিবের সঙ্গে, মাঝখানের সাকিবের বোলিং ধার কম মনে হওয়ায় আমি তার সাথে বসি এবং বোলিং নিয়ে খোলামেলা আলাপ করি। সেখানে কিছু টেকনিক্যাল বিষয়ও তার সঙ্গে আলোচনা করি। আমার মনে হয় সেটাই এই টেস্টে তার ভালো করার পেছনে ভুমিকা রেখেছে।’
বোঝাই যাচ্ছে, কোচ হাথুরুসিংহের দাওয়াই বেশ কাজে দিয়েছে। এআরবি/আইএইচএস