খেলাধুলা

অধিনায়ক মুশফিক টেস্টে এক নম্বর

অতিবড় সমালোচকও তার ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না। তোলার কিছুই নেই। এখন বিশ্বের তাবৎ ক্রিকেট বোদ্ধা ও পন্ডিতরা মনে করেন, টেস্টে মুশফিকুর রহীমই নাম্বার ওয়ান ব্যাটসম্যান বাংলাদেশের।

Advertisement

তবে এ মিডল অর্ডার কাম কিপারের দুটি সামর্থ্য কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ। একটি প্রকাশ্য। অন্যটি অপ্রকাশিত। ‘মুশফিক কিপার তেমন ভাল না’- এমন কথা অনেকের মুখে মুখে। এর পাশাপাশি তার দল পরিচালনা ও নেতৃত্ব ক্ষমতা নিয়েও কিন্তু অস্ফুট প্রশ্ন ওঠে।

কেউ কেউ এমনও বলেন, ‘মাশরাফির সাহস আর তেজ কোনটাই নেই মুশফিকের। মাশরাফি যেভাবে খোলা মনে পুরো দলকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেন, ভাল খেলতে উদ্বুদ্ধ করতে পারেন-মুশফিক তা পারেন না।

মাঠে সঠিক সময় সঠিক কাজ করার ক্ষেত্রেও মুশফিকের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে; কিন্তু যারা এমন কথা বলেন, তারা কি জানেন- টেস্টে অধিনায়ক মুশফিকের সাফল্যের ধারে কাছে নেই অন্য কোন অধিনায়ক?

Advertisement

পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানান দিচ্ছে, মুশফিকই সেরা ও সফলতম অধিনায়ক। আজ কলম্বোয় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধেসহ বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত নয়টি টেস্ট জিতেছে। যার ছয়টিই এসেছে মুশফিকের নেতৃত্বে। এর চারটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এছাড়া বাকি দুটি এলো ইংল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।

এর বাইরে আর কোন অধিনায়কের দুই টেস্ট জয়ের রেকর্ডও নেই। হাবিবুল বাশার, মাশরাফি বিন মর্তুজা আর সাকিব আল হাসানের আছে অধিনায়ক হিসেবে একটি করে টেস্ট জেতার কৃতিত্ব।

সর্বাধিক ছয় টেস্ট জেতা অধিনায়ক মুশফিক তারপরও আগের মতই বিনয়ী-অকপট। এ ঐতিহাসিক জয়ের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে অনেক কথার ভীড়ে মুশফিক স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভুল করেননি। প্রথমেই বলেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ’।

কথা বার্তায় পরিষ্কার, ভিতরে বিশ্বাসটা ছিল। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘হ্যাঁ জিততে পেরে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। কারণ আমাদের বিশ্বাস ছিল, আমরা শ্রীলঙ্কার এ দলকে হারাতে পারবো। প্রথম টেস্টে হারের পর আমাদের মনে হয়েছিলো, আমরা যদি নিজেদের সক্ষমতা অনুসারে খেলতে পারি তাহলে এই দলকে হারানো তেমন একটা কঠিন কাজ নয়। যদিও তারা প্রথম টেস্টটা বেশ সহজেই জিতেছে। জানতাম আমরা যদি মাঠে আমাদের পরিকল্পনা ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমরাই জিতবো। সব মিলিয়ে এই জয়ের জন্য খুবই খুশি। জয়টা আমরা অনেক কষ্টে অর্জন করেছি। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে যদি আমরা এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়ি, তখন আরো ভালোভাবে খেলতে পারবো।’

Advertisement

আজকের এ জয় এক নতুন অভিজ্ঞতা- একথা জানিয়ে মুশফিক বলেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে এ রকম পরিস্থিতিতে আমি কখনো পড়িনি। পঞ্চম দিনের উইকেটে এভাবে চেজ করা আমাদের জন্য নতুন। আমাদের লক্ষ্য ছিলো শুরুর দিকে ৫০-এর বেশি রানের জুটি করা। আল্লাহর রহমতে তামিমের দারুন ব্যাটিং, সাব্বিরের সঙ্গে একশর বেশি রানের জুটি, এক সময় মনে হয়েছিলো সহজেই আমরা জিততে পারবো।’

শেষ দিকের কথা বলতে গিয়ে মুশফিক বলেনম, ‘কোনো টিমই তো এভাবে ম্যাচ ছাড়বে না। শেষ দিকে বিশ্বাস ছিলো, দুঃখজনকভাবে সাকিব আউট হয়ে যাওয়ার পরও- কারণ মোসাদ্দেক ও মিরাজ ছিলো। তাই মনে হয়েছিলো এক এক করে নিলেও আমরা ম্যাচটা জিততে পারবো। আমার আউটটা দেয়ার পর (যেটা আসলে রিভিউয়ে ওভারটার্নড হয়েছে), কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। রিভিউ নিতেও ভয় পাচ্ছিলাম। কারণ, পরের দিকের ব্যাটসম্যানদের হয়তো সেটা কাজে লাগবে। একটু টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। তারপরও বলবো আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করেন।’

এই ম্যাচ থেকে আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়েছে বলে মনে করেন মুশফিক, ‘এই ম্যাচ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার ছিলো। একই সঙ্গে এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিবে। কারণ গত কয়েকটি সিরিজে আমরা প্রত্যাশিত ফল পাইনি। এই জন্যই এই ম্যাচটি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। দলের সবাই আনন্দিত। অনেকেই ভালো পারফর্ম করেছে। আমাদের আপাতত লক্ষ্য হলো পরের সিরিজটা, বিশেষ করে ওয়ানডে সিরিজটি জেতা। আশা করি কয়েকদিনের বিশ্রামে দলের সবাই প্রস্তুত হয়ে উঠবে।’

এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম