রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ৬৩ জঙ্গিকে বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কারাগারে আসার পর থেকেই আলাদা সেলে থাকছেন এরা। সম্প্রতি র্যাব সদর দফতরের ফোর্সেস ব্যারাকে আত্মঘাতী হামলা হলে আবারও আলোচনায় আসে জঙ্গি ইস্যু। ওই ঘটনার পর দেশের সব কারাগারে অধিকতর সতর্কতা জারি করা হয়।
Advertisement
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের জেল সুপার হালিমা খাতুন বলেন, কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশনা মেনে তারাও সতর্কতা জারি করেন। এর অংশ হিসেবে কারাগারে আগত দর্শনার্থীদের কঠোরভাবে শরীর তল্লাশি করা হয়। কারাগার এলাকায় বাড়ানো হয় নিরাপত্তা। আপাতত কারারক্ষীরাই এ দায়িত্ব পালন করছেন। তবে স্পর্শকাতর স্থাপনা হওয়ায় পুলিশি টহল চেয়ে তারা নগর পুলিশ সদরে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন।
জঙ্গি নজরদারি প্রসঙ্গে হালিমা খাতুন বলেন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ৬৩ জঙ্গি (১৯ মার্চ পর্যন্ত)। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠনের হয়ে জঙ্গিবাদে জড়িয়েছেন এরা। সম্প্রতি অভিযানে গ্রেফতার হয়ে এদের একটি বড় অংশ কারাগারে এসেছে। বাকিরা দীর্ঘদিন ধরেই কারাবন্দি। জঙ্গিদের আলাদা সেলে কঠোর নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কেউ দেখা করার সুযোগ পান না। নিকট আত্মীয়দের সাক্ষাতের আগে ছবি ও জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি নেয়া হয়। সাক্ষাৎকালে সেখানে উপস্থিত থাকেন একজন ডেপুটি জেলারসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
Advertisement
সিনিয়র জেল সুপার বলেন, নিয়মিত গোয়েন্দা তৎপরতাসহ তাদের গতিবিধিতে নজর রাখা হচ্ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই বিভিন্ন বিচারাধীন মামলার আসামি। আবার কেউ কেউ দণ্ডিত হয়ে সাজা ভোগ করছেন। গত দুই বছর এ সংক্রান্ত মামলার কোনো আসামি জামিন কিংবা মুক্তি পাননি। এর আগে যারা মুক্তি পেয়েছেন তাদের বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে আগে ভাগেই অবহিত করেছে।
এদিকে বিভিন্ন সময় জেএমবি সদস্য ও চরমপন্থী সদস্য সন্দেহে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে অনেকেই আটক হন। যাচাই-বাছাই শেষে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়। অনেক সময় সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সত্ত্বেও ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখানো হয় তাদের। তাদের বিশেষ সুবিধা দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
তবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার এমন সন্দেহভাজনদের তারা শনাক্ত করতে পারেন না বলে জানিয়েছেন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন। তার দাবি, এজন্যই তারা নজরদারির বাইরেই থেকে যান। এছাড়া মে মাসের আগেই তারা জামিনে বেরিয়েও যান। তবে বিষয়টি তদন্ত করে আইনত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
পুলিশ সদর দফতরের তালিকা অনুযায়ী, রাজশাহী রেঞ্জে জঙ্গি রয়েছে ৫৪৯ জন। এরই মধ্যে বিশেষ অভিযানে প্রায় দেড়শ শীর্ষ জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। অন্যরা পলাতক। তবে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের কেউ কেউ নিজ এলাকায় ফিরছেন। আবার কেউ কেউ অবস্থান নিয়েছেন অন্য জেলায়। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁ সীমান্তবর্তী হওয়ায় ‘সহজেই দেশ ছাড়ার সুযোগ’ কাজে লাগিয়ে তৎপরতা শুরু করেছে জঙ্গিরা।
Advertisement
এ বিষয়ে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, জঙ্গিরা প্রতিনিয়তই তাদের কৌশল পরিবর্তন করছে। শুধু কৌশলই নয়, তাদের অবস্থানও পাল্টে ফেলছে। দীর্ঘদিন এক জায়গায় বা জেলায় থাকছে না। ঘন ঘন এলাকা পরিবর্তন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়িয়ে থাকার চেষ্টা করছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে।
বিভিন্ন সময়ে যেসব জঙ্গি ধরা পড়েছে, তাদের দেয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে পলাতক জঙ্গিদের ধরা হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকেই গ্রেফতার হয়েছে। কাজেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার মতো শক্তি জঙ্গিদের আর নেই।
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এআরএ/পিআর