রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের সমস্যাগুলো আলাদাভাবে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
Advertisement
তিনি বলেছেন, এখন থেকে সমস্যার বিষয়ে বেসিক ব্যাংককে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় ব্যাংক থেকে পৃথক করে দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কারণ এ ব্যাংক এতটাই সমস্যাগ্রস্ত যে মূলধন ঘাটতির বিষয়ে আলোচনায় বেসিক ব্যাংক থাকলে অন্য ব্যাংক বিষয়ে আলোচনাই করা যায় না। তাই আগামীতে বেসিক ব্যাংককে আলাদাভাবে নার্সিং করা হবে।
রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
এর আগে মূলধন ঘাটতির বিষয়ে সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী বৈঠক করেন মন্ত্রণালয়ে।
Advertisement
বৈঠকে অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান, মূলধন ঘাটতি থাকা সোনালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, অগ্রণী, জনতা, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত বলেন, ‘বেসিক ব্যাংক কমপ্লিটলি আলাদা। এটি একটি বিশেষ ব্যাংক হয়ে গেছে। এটা সম্পর্কে আমরা যথেষ্ট জানি। এটার দেনাদার কারা। কার দেনা কতটুকু সেটা সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য আছে।
‘বেসিক ব্যাংক বলে তাদের কেপিটালাইজেশন এ রকম করতে হবে। এটা হতেই পারে না। এটা ইমপসিবল।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা সেজন্য আপনারা অপেক্ষা করেন। দেখেন কী হয়। এটা নিয়ে দুদকে রিপোর্ট গেছে।’
Advertisement
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে সাতটি ব্যাংক যে দাবি দাওয়া দিয়েছে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এগুলো নিয়ে আলোচনা চলবে। আলোচনার পর আগামী মাসে সিদ্ধান্ত হবে।’
তিনি জানান, ‘ক্যাপিটাল শর্টফল কিছু কিছু সব ব্যাংকই পাবে। তবে সেটা এখনই চূড়ান্ত নয়। নেক্সট মাস থেকে বাজেটের দুই হাজার কোটি টাকা থেকে ক্যাপিটাল শর্ট ফল দেয়া শুরু হবে। তবে কাকে কতটুকু দেয়া হবে সে বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।’
এদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, রাষ্ট্রীয় খাতের ব্যাংকগুলো চরমভাবে মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। সোনালী, বেসিক, কৃষিসহ পাঁচ ব্যাংকেরই মূলধন ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
ঘাটতির কারণে সরকার এর আগে ৮ হাজার কোটি টাকা নগদ দিয়েছে সাত ব্যাংককে। এ ব্যাংকগুলোই আবার নতুন কৌশলে ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা দাবি করছে।
এবারের দাবি নগদ টাকা নয়, বন্ড। এসব বিষয় নিয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিশেষ বৈঠকে করেন।
মূলত বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণ আদায় করতে না পারার কারণেই ব্যাংকগুলোতে মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যেই সোনালী, জনতা ও বেসিক ব্যাংক থেকে বেরিয়ে গেছে ১২ হাজার কোটি টাকা।
এর বাইরে রূপালী, অগ্রণী ব্যাংকসহ বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর দুর্নীতির তথ্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন তদন্তে উঠে এসেছে। এরপরের তিন বছরে (২০১৪ থেকে ২০১৬) সরকার সোনালী, বেসিক, জনতাসহ সাত ব্যাংককে ৭ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকা দিয়েছে।
এগুলো দেওয়া হয়েছে কখনও মূলধন ঘাটতি পূরণ, কখনও বা মূলধন পুনর্গঠন অথবা মূলধন পুনর্ভরণের নামে। এরপরও নতুন করে বেসিক, জনতা ও রূপালী ব্যাংক আরও ৪ হাজার ১০০ কোটি টাকা চেয়েছে।
এমইউএইচ/এসএইচএস/পিআর/জেআইএম