তিনদিন আগে স্বপ্ন পুড়ে ছাই। পরনের কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই। এক কাপড়েই তিনদিন পার। এর মধ্যে গোসলও করার সুযোগ হয়নি। ঢুলু ঢুলু চোখে ক্লান্তির ছাপ মিলছে নজর পড়তেই। রাতে খোলা আকাশের নিচে নামমাত্র ঘুম। নাওয়া-খাওয়া নেই বললেই চলে। শুধু ঘর পোড়া নয়, মনও যে পুড়েছে, তা ক্লান্তিতেই প্রকাশ। শরীর আর পোশাক ঘর পোড়া ছাইয়ে মাখামাখি। ছাই আর কয়েক ফালি পোড়া টিনই এখন তার সম্বল। তাই পাহারা দিচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব ফজলুল হক। শনিবার দুপুরে কড়াইল বস্তিতে গিয়ে কথা হয় এই বৃদ্ধার সঙ্গে। বলেন, ‘কয়েক ফালি পোড়া টিন ছাড়া আর কিছুই নেই। তাই পাহারা দিচ্ছি। বিক্রি করব, কিন্তু নিব কিডা? ভাঙাড়ির দোকানে পোড়া টিন নেয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দেড় টাকা সের প্রথমে কেউ কেউ বিক্রি করেছে। এখন আর বিক্রি করতে পারছি না। টিন পাহারা ছুতায় নিজের ভিটা ধরে বসে আছি।’ সর্বনাশা আগুন। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানেই কয়েক হাজার ঘর পুড়েছে গত বৃহস্পতিবার। হাজার হাজার মানুষের লালিত স্বপ্ন যেন কালো ছাইয়ের স্তূপে মিলে গেছে। শূন্যতা আর হাহাকারে শ্মশানে রূপ নিয়েছে কড়াইল বস্তির অধিকাংশ এলাকা। কড়াইল এখন ঘরহীন মানুষের ঠিকানা। খাবারও মিলছে না সহায়-সম্বলহীন মানুষের মুখে। সাহায্য-অনুদান যা আসছে, তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। বেঁচে থাকার তাগিদে শেষ সম্বলটুকুও অনেকে বিক্রি করছেন। বিক্রি করছেন পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রও।১১ বছরের নাবিল একটি পোড়া ব্রিফকেস হাতে বসে আছে। মায়ের স্বপ্নের ব্রিফকেস। ব্রিফকেসটি যে কোনো কাজে লাগবে না এমনকি দু’পয়সায় বিক্রিও হবে না, তা শিশু নাবিলও বোঝে। তবুও আগলে রেখেছে সে। যেখানে মায়ের হাতে জিনিস থরে থরে সাজানো ছিল, তা কি সহজে ফেলে দেয়া যায়?নাবিল জানায়, ২০ কেজি পোড়া টিন বিক্রি করেছি, দেড় টাকা কেজিতে। ছয় টাকা দরে কয়েক কেজি লোহাও বিক্রি করেছি। ঘরের আসবাব পুড়েই লোহাগুলো বের হয়। পোড়া ব্রিফকেসটি তো আর কেউ কিনবে না। ফেলেও দিতে মন চাইছে না। তাই কাছেই রেখেছি।কড়াইল বস্তির ঘাট পাড়ে কথা হয় ভাঙাড়ির দোকানি রঞ্জুর সঙ্গে। বলেন, পোড়া টিন কিনে রাখব কই। হাজার হাজার ঘর পুড়েছে। এগুলো রাখতে গেলে বিশাল জায়গা লাগবে। প্রথমে কিনলেও এখন বাদ দিয়েছি। লোহা-পিতলসহ কিছু ভালো জিনিস ক্রয় করেছি। এএসএস/জেএইচ/ওআর/আরআইপি
Advertisement