দেশজুড়ে

সংসার চালাতে চা বিক্রি করছেন পৌর কাউন্সিলর

এক কাপ চা-ই যদি না বানিয়ে খাওয়াতে পারলাম তাহলে কিসের জনপ্রতিনিধি হলাম। কনডেন্স মিল্কের একটি বিজ্ঞাপনে এভাবেই বলেছিলেন নাট্যাভিনেতা মোশাররফ করিম। মোশাররফ করিমের সেই বিজ্ঞাপনটির সঙ্গে হুবহু জীবন কাহিনী মিলে গেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাকের।

Advertisement

অনেকের ধারণা মেম্বার-কাউন্সিলর হওয়া মানেই হোমড়া-চোমড়া বনে যাওয়া। কিন্তু ব্যতিক্রম কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক।

কাউন্সিলর হয়েও তিনি চা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার বাড়ি মির্জাপুর পৌর এলাকার বাইমহাটী গ্রামে। বাবার নাম নজিম উদ্দিন শিকদার। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। চা বিক্রির পাশাপাশি অনেক কষ্টে তিনি এসএসসি পাস করেন।

২০১৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচনে ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন তিনি। এছাড়া মির্জাপুর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Advertisement

কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার আগে বাবার সঙ্গে উপজেলা চত্বরে টংঘরে চা বিক্রি করে পরিবারের ভরণ-পোষণ করতেন। এতে মাসে প্রায় ১৫/২০ হাজার টাকা রোজগার হতো। ভালো ছেলে হিসেবে এলাকাবাসীর অনেকেই তাকে পৌর নির্বাচনে ওই ওয়ার্ড থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য উৎসাহিত করেন। অবশেষে তিনি নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন। কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি অন্যদের মতো নিজেকে হোমড়া-চোমড়া মনে করেননি।

এজন্যই তিনি কাউন্সিলর হয়েও কখনও বাবার সঙ্গে আবার কখনো একা নিয়মিত টংঘরে বসে চা বিক্রি করেন। পাশাপাশি তার নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন ব্যক্তির সমস্যা শোনেন ও সমাধানেরও চেষ্টা করেন। ভালো চা বানাতেও যেমন তার সুনাম আছে, তেমনি একজন কাউন্সিলর হিসেবেও অত্যন্ত সৎ, দক্ষ, বিনয়ী ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সুনাম অক্ষুণ্ন রয়েছে।

প্রতিদিন দোকান সংলগ্ন উপজেলা প্রশাসন জামে মসজিদে ফজরের নামাজ পড়ে চায়ের দোকান খুলে বসেন। উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকার সর্বস্তরের জনগণ তার নিয়মিত কাস্টমার। সদা হাস্যোজ্জ্বল ও বিনয়ী এ তরুণ জনপ্রতিনিধি কেটলি হাতে চা বানিয়ে কাস্টমারকে যেমন খুশি করেন তেমনি সুন্দর ব্যবহার ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন সমস্যার সামাধান, সমাজের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ সামাজিক ও মানবিক কাজে নিয়োজিত থাকেন।

উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতি লিমিটেডের মাঠ সংগঠক আমিরুল ইসলাম আব্দুর রাজ্জাকের চায়ের দোকানের একজন নিয়মিত কাস্টমার। তাকে কাউন্সিলর সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আব্দুর রাজ্জাক সত্যিকারের একজন ভালো মানুষ। নির্বাচিত হয়ে তিনি সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও সততা দিয়ে সমাজসেবা করে যাচ্ছেন। ক্ষমতার কোনো দাপট নেই তার।

Advertisement

ইনস্যুরেন্স কোম্পানি মেটলাইফের ইউনিট ম্যানেজার আহাদ খান বলেন, আমি মির্জাপুর বাজার থেকে এত দূরে আসি কাউন্সিলরের হাতে চা খাওয়ার জন্য। তার হাতের চা সত্যিই অতুলনীয়। তিনি যেমন সদালাপী তেমনি একজন সৎ ও বুদ্ধিমান কাউন্সিলর।

কাউন্সিলর আব্দুর রাজ্জাক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমি মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছি। আমি সর্বদা চেষ্টা করি সৎভাবে উপার্জনের। পৌর কাউন্সিলর হিসেবে আমি মাসে ৪ হাজার টাকা ভাতা পাই। আর চা বিক্রি করে মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা উপার্জন করতে সক্ষম হই।

এ দিয়েই আমার স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা ও ভাইদের নিয়ে কোনো রকমে দিনাতিপাত করি। এতেই আমি সন্তুষ্ট। সৎভাবে উপার্জন করি আর মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকতে পারি।

আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে আমার এটা নৈতিক দায়িত্ব। কাজেই আমি একজন পৌর কাউন্সিলর হিসেবে এলাকাবাসীর সেবায় সচেষ্ট থাকি। যতদিন বাঁচি এ আদর্শকে বুকে লালন করেই বাঁচবো। এটাই আমার ব্রত।

এমএএস/আরআইপি/জেআইএম