খেলাধুলা

দু’দলই এখন সমান্তরালে : সাকিব

আগের দিন শেষ বিকেলের ‘ছোট্ট ঝড়’ (সাত বলে ৭ রানে ৩ উইকেট) কতই না চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল! বারবার শঙ্কায় বুক কাঁপছিল, কি জানি তৃতীয় দিন সকালেও যদি ওই দমকা বাতাসের ঝাপটা এসে লাগে? তাহলে তো সব লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। শততম টেস্ট স্মরনীয় সাফল্যে মোড়ানোর বদলে দুঃস্বপ্ন হয়েই থাকবে। এমন সংশয়-শঙ্কা মাথায় নিয়ে খেলা দেখতে বসা। শুরুর পর যত সময় গড়ালো ততই শঙ্কা আর সংশয়ের কালো মেঘ কেটে যেতে থাকলো। শ্রীলঙ্কার রান ছুঁয়ে যাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল, তাও কেটে গেল চা বিরতির আগেই। ৫ উইকেটে ২১৪ রান নিয়ে তৃতীয় দিন শুরু করা বাংলাদেশের ইনিংসের বাকি অর্ধেকে যোগ করলো আরও ২৫৩ রান। আর তাতেই পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা কাটিয়ে ১২৯ রানের লিড। সারা দিনে অনেক কিছুই হলো। আগের দিন শেষ বিকেলের দূরন্ত কিশোর সাকিব আজ যেন ‘সুবোধ বালক।’ এলোমেলো ব্যাট ছোড়া বাদ দিয়ে একদম ব্যাকরণ মেনে যতটা সম্ভব বলের মেধা ও গুনাগুণ বিচার করে খেলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম আর শ্রীলঙ্কার সাথে প্রথম টেস্ট শতরান বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের। আজকের দিনে বাংলাদেশ ইনিংসের শেষ অংশটা অবশ্য সাকিবকে ঘিরেই। মোদ্দা কথা, শ্রীলঙ্কার ৩৩৮ রান টপকে লিড নিতে যা যা করা দরকার ছিল, সাকিবের হাত ধরে তাই হয়েছে। প্রয়োজন ছিল একটি বড় ইনিংস। আর অন্তত একটি বড় পার্টনারশিপ। সাকিব অনেকটা সময় একদিক আগলে রাখায় একজোড়া বড় জুটি গড়ে উঠল। সঙ্গে আরও একজোড়া হাফ সেঞ্চুরির দেখাও মিললো। যার একটি আসলো অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে। সাকিবের সাথে ৯২ রানের পার্টনারশিপে মুশফিকের অবদান ৫২। এরপর আরও একটি কার্যকর জুটি। সেটা সাকিব ও অভিষেক হওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের। টেস্ট ক্যারিয়ারের শুরুতে বুক ভরা সাহস, উদ্যম আর ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে মাঠে নামা মোসাদ্দেকও সাকিবের সাথে সপ্তম উইকেটে দারুণ সঙ্গ দিলেন। গড়ে উঠল ১৩১ রানের পার্টনারশিপ। এ দুজনার হাত ধরেই মিললো লিড। ১২৯ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ বিকেলটা ভালোয় ভালোয় কাটিয়ে দিল লঙ্কানরা। উপুল থারঙ্গা (২৫) আর করুণারত্নের (২৫) উদ্বোধনী জুটি অবিচ্ছিন্ন ৫৪ রানে। তাতে করে তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ এগিয়ে ৭৫ রানে। ম্যাচের এ অবস্থায় কোথায় দাঁড়িয়ে টাইগাররা? আজ খেলা শেষ হবার মুহূর্ত থেকে সবার মনে একটাই প্রশ্ন। শুক্রবার খেলা শেষে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সন্মেলনেও উঠল এ প্রশ্ন, ‘আচ্ছা ম্যাচে এখন বাংলাদেশের অবস্থান কি?  কোন রকম আবেগতাড়িত না হয়ে খুব গুছিয়ে জবাব দিয়েছেন সাকিব আল হাসান। তার অনুভব, ‘তৃতীয় দিনের খেলা শেষে দুই দলই সমান্তরালে দাঁড়িয়ে আছে।’ এখান থেকে কোন দল এগিয়ে যাবে, কারা চালকের আসনে বসবে? আর কোনো পক্ষ পিছিয়ে পড়বে? সাকিবের ধারণা, তা জানা হয়ে যাবে আগামীকাল চতুর্থ দিন সকালের সেশনেই। তাই তো মুখে এমন কথা, ‘আমি বলবো, আমরা খুব ব্যালেন্স অবস্থায় আছি; কিন্তু আমাদের কালকের প্রথম সেশনটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হবে। এখন দুই দলই সমান সমানে আছে। কাল প্রথম সেশনে ওরা যদি ভালো ব্যাটিং করে, তাহলে আমাদের হাত থেকে ম্যাচটা বের হয়ে যেতে পারে। আর আমরা যদি ভালো বোলিং করি, কিছু উইকেট নিতে পারি। তাহলে আমাদের পক্ষে আসতে পারে।’ এটুকু বলেই থেমে গেলেন তিনি। এরপর কাল সকালের প্রথম ঘন্টা ও সেশনে ভাল করার জোর তাগিদ দিলেন সাকিব। তার কথা, ‘গত কয়েকটি টেস্ট ম্যাচের চালচিত্র খুঁটিয়ে দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে, আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে তত ভাল খেলিনি। সেটা যে শুধু ৫০০‘র বেশি রান করে পরেরবার অল্প রানে গুঁড়িয়ে যাওয়া, তাই নয়। বোলিংয়েও ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এ টেস্টে ভাল কিছু করতে হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ভাল করতেই হবে। সেটা বোলিংয়েও যেমন ব্যাটিংয়েও ঠিক তেমনি।’এআরবি/আইএইচএস/পিআর

Advertisement