‘আমাদের শাসকগোষ্ঠীর নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে স্বাধীনতার ৪৪ বছরেও পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় হয়নি। সব সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বার্থে দেশের স্বার্থ বিকিয়ে সাম্রাজ্যবাদী ভারতের স্বার্থে একের পর এক গণবিরোধী চুক্তি করেছে।’ বৃহস্পতিবার রংপুর টাউন হল প্রাঙ্গণে ভারত কর্তৃক তিস্তা-ব্রহ্মপুত্রসহ অভিন্ন নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহার এবং বাংলাদেশের ওপর তার প্রভাব ও আমাদের করণীয় শীর্ষক দিনব্যাপী কনভেনশনে বক্তারা এসব কথা বলেন।বক্তারা বলেন, দুই দেশের অভিন্ন ৫৪টি নদীর ৫১টি নদীতে আন্তর্জাতিক নদী আইন অম্যান্য করে ভারত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উজানে অসংখ্য বাঁধ, ব্যারেজ দিয়েছে এবং ভিন্নখাতে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ভারতের এই পানি আগ্রাসনের কারণে গোটা বাংলাদেশ আজ মরুকরণের দিকে। ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প আন্তর্জাতিক নদী আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।ভারত কর্তৃক নদীর পানি প্রত্যাহার ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, যেসব নদী দুই বা ততোধিক দেশের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, সেগুলোকে বলা হয় আন্তর্জাতিক নদী। বাংলাদেশের ৫৪টি নদী ভারত থেকে এবং তিনটি এসেছে মিয়ানমার থেকে। অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহার সংক্রান্ত ১৯৬৬ সালের হেলসিংকি নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত রাষ্ট্র অভিন্ন নদীগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই অন্য রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনায় নেবে। ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের জলপ্রবাহ কনভেনশন অনুযায়ী প্রণীত আইনে বলা হয়েছে, নদীকে এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না, যাতে অন্য দেশ মারাত্মক ক্ষতি বা বিপদের মুখে পডবে। বক্তারা আরও বলেন, এসব আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও আইনের তোয়াক্কা না করে ভারত একতরফাভাবে নদীসংযোগ পরিকল্পনা অগ্রসর করছে। দ্বি-পাক্ষিক বাণিজ্য, ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্ট, রামপালে বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ অর্থনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ক্ষেত্রগুলোতে ভারত আধিপত্য বিস্তার করে আছে। অথচ পানি সম্পদের ন্যায্য অধিকারের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে সরকার যথার্থ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে পারেনি। বক্তারা বলেন, নদীবাহিত পলি দিয়ে গঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। শরীরে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে যেমন মানুষের মৃত্যু ঘটে, তেমনি নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে বা বাধাগ্রস্ত হলে ভূ-খন্ডের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। ধীরে ধীরে সেটাই হচ্ছে। সে কারণে একসময়ে এক হাজার ২০০ নদীর দেশে এখন মাত্র ২৩০টি নদী। এক ফারাক্কা বাঁধই দেশের মানচিত্র থেকে মুছে দিয়েছে ২০টি নদী।কনভেনশন থেকে আগামী ৬ এপ্রিল জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়। বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উদ্যোগে দিনব্যাপী কনভেশনে সভাপতিত্ব করেন বাসদ (মার্কসবাদী) গাইবান্ধা জেলা আহ্বায়ক কমরেড আহসানুল হাবীব সাঈদ। এতে বক্তব্য দেন বাসদের (মার্কসবাদী) কেন্দ্রীয় কার্য পরিচালনা কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জল পরিবেশ ইসস্টিটিউটের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক, বিশিষ্ট নদী গবেষক মাহবুব উদ্দিন সিদ্দিকী, কারমাইকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. রেজাউল হক, সিপিবির কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক কমরেড শাহাদৎ হোসেন সাবেক উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোজাহার আলী, অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান, অ্যাডভোকেট মনির চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, ডা. মফিজুল ইসলাম মান্টু প্রমুখ।কনভেশন পরিচালনা করেন বাসদ (মার্কসবাদী) রংপুর জেলা সমন্বয়ক কমরেড আনোয়ার হোসেন বাবলু। জিতু কবীর/আরএআর/জেআইএম
Advertisement