খেলাধুলা

চান্দিমালই হতে পারেন টাইগারদের অনুপ্রেরণা

গলে কুশল মেন্ডিস আর কলম্বোর পি সারায় দিনেশ চান্দিমাল। দুই লঙ্কান চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন ‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়।’ ভালো খেলার স্বদিচ্ছা আর দৃঢ় সংকল্পটাই শেষ কথা। দলের সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে অবিচল আস্থা, অসীম ধৈর্য আর বলের মেধা-গুণ বিচার করে খেলতে চাইলেই লম্বা সময় উইকেটে থাকা যায়। বড় ইনিংসও খেলা যায়।  শুনতে খারাপ লাগলেও সেই দৃঢ় সংকল্প, আর প্রবল ইচ্ছেরই বড় অভাব বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের। তারা যে লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন না। এমন নয়। মুশফিক, তামিম ও সাকিবদেরও টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি আছে। তবে খেলেন কালে ভদ্রে। বেশির ভাগ সময় টাইগাররা দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকে সত্যিকার টেস্ট ইনিংস খেলার চেয়ে ছোটেন স্ট্রোক খেলার পিছনে। কে কতটা বাহারি মার জানেন। কার স্ট্রোক খেলার ক্ষমতা কত বেশি, কে কত দ্রুত পঞ্চাশ হাঁকাতে পারেন এই সব প্রতিযোগিতা চলে বেশি।কিন্তু এটা টেস্ট ক্রিকেট। এখানে শেষ কথা হচ্ছে উইকেটে টিকে থাকা। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটানো নয়। টেস্টে আক্রমণাত্মক অ্যাপ্রোচের কোনই মূল্য নেই। ৭০/৭৫ বলে ঝড়ের গতিতে ১০ বাউন্ডারিতে পঞ্চাশ হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরত গেলে কোনই লাভ নেই। তারচেয়ে তিন চার ঘণ্টা উইকেটে থেকে ২০০ + ডেলিভারির মোকাবিলায় শতরান করতে পারলে সেটাই দলের উপকারে আসে। কিন্তু সেই বোধ উপলব্ধিটাই অনেক কম। এই অ্যাপ্রোচটা এখনো আয়ত্বে আসেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। একমাত্র মুশফিকুর রহীমই ব্যতিক্রম। টেস্ট অধিনায়ক প্রাণপন চেষ্টা করেন যতটা সময় সম্ভব উইকেটে থাকতে। তার ভালোই জানা, আমি যত বেশি সময় উইকেটে কাটাবো, ততই দীর্ঘ ইনিংস খেলা যাবে। তাই টেস্টে তার ব্যাটই সবচেয়ে বিশ্বস্ত। এই ধৈর্য, সংযমটা মুশফিকের পাশাপাশি তামিম-সাকিবের থাকলে তাদের ক্যারিয়ার উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ হবার পাশাপাশি দলও অনেক উপকৃত হত। কিন্তু তামিম-সাকিব মাথা ঠাণ্ডা রেখে খেলেন কম। দেখে ও ধীরে খেলার চেয়ে অযথা হাত খুলে খেলার ইচ্ছে ও প্রবণতা বেশি। যে কারণে বারবার তাদের সম্ভাবনাময় ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটছে। এই ধৈর্য-সংযম বাড়ানো এবং উইকেটের চরিত্র বুঝেও বলের মেধা, গুণ বিচার করে খেলার অভ্যাস তৈরিতে টাইগারদের আদর্শ হতে পারেন কুশল মেন্ডিস ও দিনেশ চান্দিমাল। এ দুই লঙ্কান যুবা দেখিয়েছেন কিভাবে বেশি সময় উইকেটে টিকে থাকা যায়? কেমন অ্যাপ্রোচ, টেম্পারামেন্ট ও কোন কৌশল অবলম্বন করলে লম্বা ইনিংস খেলা যায়? চান্দিমাল দেখালেন, কোন রকম তাড়াহুড়োর দরকার নেই। খেলাটা পাঁচ দিনের। উইকেট স্লো।  বাউন্সও তেমন বেশি না। সুইং ম্যুভমেন্ট ও টার্ন কম। এরকম উইকেটে সবচেয়ে লাগসই অ্যাপ্রোচ ও কার্যকর অ্যাপ্লিকেশন হল নিজের সামর্থের ওপর প্রগাঢ় আস্থা রেখে খেলা। আমি অতিরিক্ত কিছুই করবো না। আমার সামর্থের বাইরে যাবো না। একদিক আগলে রাখবো। ভাল বল মারবো না, ডিফেন্স করবো। বাইরের বলে প্রলুব্ধ না হয়ে ছেড়ে দেব। আর আলগা ডেলিভারি মানে হাফ ভলি, ওভার পিচ আর খাট লেন্থের ডেলিভারি পেলে মারবো। আর উপরে যে সব কথা বলা, ঠিক সে পথে হেঁটে ও একই ফর্মুলায় খেলে প্রায় পৌনে সাত ঘণ্টা (৪০৫ মিনিট) উইকেটে কাটিয়ে দিয়েছেন চান্দিমাল।  এ দীর্ঘ সময়ে ৩০০ বল খেললেও তার অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশন সব সময় একই রকম ছিল না। চাপের মুখে একটু বেশি সতর্ক ও সাবধানী। একদম রক্ষণাত্মক। তারপর অবস্থা বদলের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে একটু হাত খোলা। বাংলাদেশের সাত ব্যাটসম্যানই হাত খুলে খেলতে পারেন। তাদের শট খেলার সামর্থ কম, এমন কথা অতিবড় সমালোচকও বলেন না। শুধু রয়ে সয়ে খেলার মানসিকতায় ঘাটতি। আর তামিম, সৌম্য, ইমরুল, মুশফিক, সাকিব, মোসাদ্দেক ও সাব্বিরদের সামনে আদর্শ উদাহরণ চান্দিমালের ইনিংসটি।পি সারা স্টেডিয়ামের যে উইকেটে শততম টেস্ট চলছে, সেখানে একটু দেখে, সতর্ক হয়ে সাবধানে খেলার চেষ্টা করলে অবশ্যই লম্বা সময় উইকেটে থাকা সম্ভব। আর যাদের শট খেলার সামর্থ আছে, তারা দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকা মানে লম্বা ইনিংস। বিকল্প পথ নেই। কলম্বোর পি সারায় শততম টেস্টে সাফল্য পেতে হলে লঙ্কানদের স্কোর টপকে যেতেই হবে। লিড নিতে পারলেই কেবল সম্ভাবনার সূর্য উকি দিবে। সে লিড নিতে হলে অন্তত এক জোড়া বড় ইনিংস জরুরী। তা কি হবে? টাইগাররা কি তা পারবেন?এআরবি/এমআর/আরআইপি

Advertisement