কুমার সাঙ্গাকারা আর মাহেলা জয়াবর্ধনে নেই- এখন আর শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বড় ইনিংস খেলার পারফরমারও নেই! এবার আর মোস্তাফিজ, সাকিব, মেহেদী হাসান মিরাজদের পায় কে? নির্ঘাত তাদের সাড়াশি আক্রমণ সামলাতে হিমশিম খাবেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে এমন চিন্তাই ছিল বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের মনে। শততম টেস্ট এমনিতেই এ সিরিজকে এনে দিয়েছে অন্যমাত্রা। একটা উৎসব উৎসব ভাব। তার ওপর মাহেলা-সাঙ্গাকারা, তিলকারত্নে দিলশান আর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ ছাড়া লঙ্কান ব্যাটিং সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় বাংলাদেশের সম্ভাবনা নিয়ে একটু বেশিই হৈচৈ হয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা এসে গল ও কলম্বোর পি সারা স্টেডিয়ামে বসে একটা কঠিন সত্য অনুভব হয়েছে। বাংলাদেশের বোলিং তোড় সামলানোর পর্যাপ্ত সামর্থ্য নেই লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। এমন ভাবনাই ছিল বড় ভুল। অমন চিন্তা করে যারা বসেছিলেন, তাদের জন্য খবর- দিনেশ চান্দিমাল আর কুশল মেন্ডিস তৈরি হচ্ছেন। এবং হয়তো খুব বেশি দিন লাগবে না, যেদিন এই দুই তরুণ হয়ে যাবেন সাঙ্গাকারা ও মাহেলার বিকল্প। তারা দুজন যে সব দায় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে পরিণত ক্রিকেটারের মতো বোলারদের সাথে করে শেষ দিকে ইনিংসকে এগিয়ে নিতে পারেন, তার প্রথম প্রমাণ মিলেছে গলে। যেখানে একা ত্রাণকর্তার ভূমিকায় ছিলেন কুশল মেন্ডিস। একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানও সে অর্থে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেননি। কুশল মেন্ডিস একা করে ফেলেছেন ১৯৪। তার হাত ধরেই ৫০০‘র দোরগোড়ায় পৌঁছে জয়ের ভিত মজবুত করে ফেলে হেরাথের দল। আর কলম্বোয় এসে ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়ে একা লড়লেন দিনেশ চান্দিমাল। আগের দিন টাইগারদের উজ্জীবিত-অনুপ্রাণিত ও তেজদ্দীপ্ত মানসিকতা এবং মাপা ও সমীহ জাগানো বোলিংয়ের মুখেও চান্দিমাল ছিলেন অনড়। অনমনীয়। ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে দিন শুরু। ঠিক সেঞ্চুরি করে মাঠ ছাড়া। তাও শতরান করেই দায়িত্ব-কর্তব্যের ইতি টানা নয়। এগিয়ে গেছেন আরও খানিকটা পথ। শেষ পর্যন্ত মেহেদী হাসান মিরাজের বলে মিড উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতেরর হাতে ক্যাচ দিয়ে যখন ফিরলেন ততক্ষণে নামের পাশে জমা হয়ে গেছে ১৩৮ রান। তিনি পারেন। তার লম্বা ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে। তা আগেই জানা। সর্বশেষ সেঞ্চুরি করেছিলেন ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট। দিনক্ষণের হিসেবে ছয় মাস পর হলেও টেস্ট খেলার হিসেবে খুব বেশি দিন আগে নয়; চার টেস্ট আগে। সেটাও কলম্বোয়। তবে পি সারায় নয়। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ৪৭৪ মিনিট ৩৫৬ বলে ১৩ বাউন্ডারি ১ ছক্কা ৩৭.০৭ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন ১৩২। তারপর ৪৩+২৮+৮+৪+৩০+৫+১০+৫+৫০। তারও আগে ২০১৬ সালের ২৭ মে চেস্টারলি স্ট্রিটে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১ মিনিটে ২০৭ বলে ১২৬ (১৩ বাউন্ডারির সঙ্গে এক ছক্কা।) তার পুরো টেস্ট ক্যারিয়ার ঘেটে দেখার দরকার নেই। এক বছরের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে চান্দিমালের ভেতর বড় ইনিংস খেলার সব রকম গুণ ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদানই আছে। এই পি সারায় যে ইনিংসটি খেললেন তার পরতে পরতে ধৈর্য-সংযম। কোনো রকম তাড়াহুড়ো নেই। নিজের সামর্থ্যের ওপর প্রগাঢ় আস্থা। ‘একদিক আগলে রাখবো। ভালো বল মারবো না, ডিফেন্স করবো। বাইরের বল না খেলে ছেড়ে দেবো। আর আলগা ডেলিভারি মানে হাফ ভলি, ওভার পিচ আর খাটো লেন্থের ডেলিভারি পেলে মারবো’- এ ফর্মুলায় খেলে কাটিয়ে দিলেন প্রায় পৌনে সাত ঘণ্টা (৪০৫ মিনিট)। এ দীর্ঘ সময়ে ৩০০ বল মোকাবিলায় করলেও সব সময় তার অ্যাপ্রোচ যে একই রকম ছিল তা নয়। আজ সকালে প্রথম আধ ঘণ্টা একদম রক্ষণাত্মক। ৮৬ থেকে ৯০-তে গেলেন প্রায় ২৫ মিনিট খেলে। তারপরও ৯০ থেকে একটু হাত খোলা। প্রথমে শুভাশিসকে ডিপ মিডউইকেটে পুল করে বাউন্ডারি মেরে ৯০ থেকে ৯৪-তে পা রাখা। তারপর একটা সিঙ্গেলস আর ঠিক পরের ওভারে সাকিবকে রিভার্স সুইপে ব্যাকওয়াড স্কোয়ার লেগ দিয়ে বাউন্ডারি হাকিয়ে ৯৯-তে পৌঁছে যাওয়া। পরের ওভারে তাইজুলের বলে কভারে পুশ করে শতরান পূর্ণ। ৩৫২ মিনিট ২৪৪ বলে ১০০। এ দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকেও বাউন্ডারি মোটে ছয়টি। কিন্তু হেরাথ আউট হওয়ার পর অ্যাপ্রোচে অাসলো বড় ধরনের পরিবর্তন। তারপর ধরেই নিলেন, এখন থেকে যা করার তা আমাকেই করতে হবে। তাইতো পরের ৩৮ রান করলেন অনেক দ্রুত; ৫৬ বলে। যার ২৬ (চারটি বাউন্ডারি ও এক ছক্কা) আসলো শুধু বাউন্ডারি ও ছক্কায়। চান্দিমাল বড় ইনিংস খেলায় লঙ্কানরা প্রত্যাশার চেয়েও বেশি দূর এগিয়ে গেল। আগের দিন কোচ গ্রায়েম ফোর্ড বলেছিলেন, ‘আমি ৩০০ রান হলেই সন্তুষ্ট।’ চান্দিমালের হাত ধরে তার চেয়ে ৩৮ রান বেশিই আসলো।এআরবি/এনইউ/পিআর
Advertisement