আইসিসি চেয়ারম্যানের পদ থেকে হঠাৎই পদত্যাগ করে বসলেন শশাঙ্ক মনোহর। আইসিসি পূনর্গঠন করে এর মধ্যে একটা স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যেই যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন শশাঙ্ক মনোহর। আইসিসিকে বিগ থ্রির প্রভাবমুক্ত করে রাজস্ব আয়ের সুসম বন্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগও নিয়েছেন তিনি; কিন্তু চূড়ান্তভাবে নতুন সংবিধান পাশ হওয়ার আগেই সরে দাঁড়ালেন শশাঙ্ক মনোহর। কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন তিনি, ব্যক্তিগত।কিন্তু তিনি যতই ব্যাক্তিগত কারণ দেখাক না কেন, ভেতরে তো অন্য কোনো কারণ থাকতেও পারে। শশাঙ্ক মনোহর যখন পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, তার কিছুক্ষণ পরই ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রাহুল জোহরিকে নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে আসেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। প্রসঙ্গক্রমেই সেখানে উঠলো শশাঙ্ক মনোহরের পদত্যাগের বিষয়টি। সেখানে পাপনের কাছে জানতে চাওয়া হলো, আইসিসির পূনর্গঠনে বাধা ভারত। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে গুজব উঠেছে, বাংলাদেশ এখন ভারতের পক্ষ নিয়েছে। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?জবাব দিতে গিয়ে পাপন জানালেন, তারা আইসিসি পূনর্গঠনে দুটি বিষয়ে আপত্তি তুলেছেন। সেই দুটি বিষয়ে কোনোভাবেই একমত হতে পারবে না বাংলাদেশ। একটি হচ্ছে, টেস্টে রেলিগেশন সিস্টেম। এটা মেনে নেয়ার মত নয়। আরেকটা হচ্ছে, আইসিসির পূর্ন সদস্য পদকে স্থায়ী না করে প্রতি পাঁচ বছর পর পর রিভিউ করার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, সেটাও মেনে নিতে পারবে না বাংলাদেশ।আইসিসি প্রস্তাব পাশ হওয়ার জন্য প্রয়োজন ৮ ভোট। ইতিমধ্যে ৭-২ ভোটে এগিয়ে রয়েছে সংবিধান সংশোধন প্রস্তাবটি। যে ৭টি ভোট এর পক্ষে পড়েছে, সেখানে রয়েছে বাংলাদেশও। আগামী মাসেই (এপ্রিলে) আইসিসি কার্যনির্বাহী বোর্ডের আরেকটি সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে আরেকটি ভোট পেলেই সংশোধিত সংবিধানটি পাশ হয়ে যাবে। বাংলাদেশ এর পক্ষে থাকলেও এখন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বললেন ভিন্ন কথা।কলম্বোয় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, ‘আইসিসির রিফর্মেশনের দুটি ব্যাপার আছে। একটি সংবিধানসংক্রান্ত, অন্যটি অর্থ বিষয়ক। অর্থনৈতিক বিষয়ে আমরা বাধা দেইনি; কিন্তু সংবিধানসংক্রান্ত ব্যাপারে যে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি সেটার মেম্বার ছিলাম; ওখানে যে ব্যাপারগুলো তোলা হয়েছে সেখানে আমরা অভিযোগ তুলেছি। এমন কিছু ব্যাপার ছিলো।’ আগে তো অভিযোগ তোলা হয়নি। বরং ভোট দিয়েছে বিসিবি। এখন ভিন্ন পরিস্থিতি কেন? নাজমুল হাসান বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে সামগ্রিক বিবেচনায় আমরা রাজি হয়েছিলাম। পরের মিটিংয়ে একটা একটা করে ব্যাপার সামনে এনে ভোটাভুটি করে তা পাস করানোর ব্যাপার ছিলো। এই বলে গত মিটিংটা শেষ হয়েছিলো। আমাকে অনেকে বলেছিলো, আইসিসির রিফর্মেশনের পুরো ব্যাপারটাতে না করে দিতে। কিন্তু আমি বলেছি, বাংলাদেশ যদি বেশি টাকা পায়, বেশি লাভবান হয় সেটা আমি না করবো কী করে! নিজের স্বার্থও তো আমাদের দেখতে হবে।’তাহলে বিরোধিতা করেছে কোন বিষয়গুলোতে? বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমি বলেছি, সব কিছুতে আমি তোমাদের পক্ষে যেতে পারবো না। আমরা চিঠি দিয়ে আইসিসিকে বলে দিয়েছি যে, দুটি ব্যাপার আমরা মানি না। এর মধ্যে একটা হলো , যেটা আগেও চেষ্টা করা হয়েছিলো, রেলিগেশন। টেস্টের পূর্ণ সদস্য থেকে যেটার মাধ্যমে নিচে নামার শঙ্কা আছে। আমরা বলেছি কোনো অবস্থাতেই এটা মানবো না। এখন সম্ভাবনা আছে জিম্বাবুয়ের বাদ পড়ে যাওয়ার; পরে অন্যদেরও হতে পারে।’শুধু রেলিগেশন নয়, পূর্ণ সদস্যপদের স্থায়ীত্ব কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। বিসিবি সভাপতির বক্তব্য, ‘আমরা বলেছি পূর্ণ সদস্যপদের স্ট্যাটাস কখনো চেঞ্জ করা যাবে না। এটা আমরা মানি না। এটা একটা। আরেকটা হলো, ভোটের অধিকার। এটা নিয়েও আমরা আপত্তি জানিয়েছি। এখন আমাদের ৭৫ শতাংশ অধিকার। এখন নতুন স্বাধীন পরিচালক নিচ্ছে, অ্যাসোসিয়েট মেম্বার বাড়ছে; আমাদের আগে সবগুলো বিষয় বুঝতে হবে। এই সব বিষয় জানিয়ে আমরা আইসিসিকে চিঠিটা দিয়ে দিয়েছি।’বিসিবি বিরোধিতা করলেও কী সংশোধিত সংবিধান পাশ করানোর সুযোগ আছে? পাপন বললেন, ‘না, আমাদের মতামতছাড়া এসব বিষয় পাশ করানোর সুযোগই নাই।’ শশাঙ্ক মনোহর কেন পদত্যাগ করলেন? বিসিবি সভাপতি বললেন, ‘শশাঙ্কের পদত্যাগের ব্যাপারটা জানা নেই। আমি মিটিংয়ে ছিলাম। তিনি ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।’আরেক প্রশ্নের জবাবে পাপন বলেন, ‘আইসিসির সংবিধানে আগে যা ছিলো, তাই আছে। যে সব বিষয়ে আমাদের স্বার্থ জড়িত, আমরা এর বিরুদ্ধে যাবো না। এটা আগেও আমি বলেছি। এখনও বলছি।’আইএইচএস/জেআইএম
Advertisement