কথায় বলে, ‘ঘর পোড়া গরু নাকি সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পায়।’ বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকদের অবস্থা ঠিক তাই। বারবার আশাভঙ্গের বেদনায় নীল হতে হতে তারা এখন ভয়ে থাকেন, কি জানি শেষ পর্যন্ত এই ভালোর রূপটা থাকবে তো? খুব বেশি দূর যেতে হবে না। ওয়েলিংটন, ক্রাইস্টচার্চ, হায়দরাবাদ আর গলে হওয়া চার টেস্টের চালচিত্র খেয়াল করলেই বেরিয়ে আসবে একই চিত্র। প্রতি ম্যাচেই বাংলাদেশ একটা সময় ভালো খেলেছে। কোনো না কোনো বিশেষ সেশন বা দিনে চালকের আসনেও বসেছে। লড়াই হয়েছে সেয়ানে-সেয়ানে। এক সময় মনে হয়েছে বাংলাদেশের সামনে অমিত সম্ভাবনা।কিন্তু হায়! যখনই অমন মনে হয়েছে, ঠিক তার পরপরই সম্ভাবনার প্রদীপ গেছে নিভে। প্রচণ্ড বাতাস আর কনকনে ঠাণ্ডার মধ্যে ওয়েলিংটন টেস্টে কিউই ধারালো বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সাকিবের ডাবল সেঞ্চুরি, মুশফিকের বিগ হান্ড্রেডে ৫৯৫ রানের বিরাট স্কোর গড়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬০ রানে মুখ থুবড়ে পড়া। একইভাবে ক্রাইস্টাচার্চে তুলনামূলক স্পোর্টিং পিচে প্রথমবার ২৮৯ রান করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৩ রানে অলআউট হয়ে যাওয়া। হায়দরাবাদে ভারতের সাথে ঋদ্ধিমান সাহাকে ৪ রানে জীবন দিয়ে সর্বনাশ ডেকে আনা। আরেক হাফ সেঞ্চুরিয়ান রবীন্দ্র জাদেজারও ক্যাচ ফেলে দেয়া। সব মিলে গল টেস্টের আগের তিন টেস্টে ১৮ থেকে ২০টি ক্যাচ হয়েছে হাতছাড়া। আর তাতেই ধীরে ধীরে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণও গেছে বেরিয়ে। কাজেই আজ পি সারায় লঙ্কানদের চাপে ফেলেও সে অর্থে স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ ভক্ত ও সমর্থকরা। বরং আছে চিন্তা। অস্ফুট শঙ্কাও। কি জানি, এই ভালোর এই রূপ যদি আর না থাকে। সামনের দিনগুলো যদি আর আজকের মতো ভালো না হয়? তাই এ শঙ্কা ও চিন্তাকে অমূলক বলাও যাচ্ছে না। তবে এটা সত্য, আজ কলম্বো টেস্টের প্রথম দিন শেষে স্বাগতিকরা ব্যাকফুটে। বাংলাদেশ সামনে এগোনোর পথ খুঁজে পেয়েছে। পাঁচ স্পেশালিস্ট তথা ফ্রন্টলাইন বোলারের সবাই উইকেট পেয়েছেন। সময় মতো ব্রেক থ্রুও এসেছে। মোস্তাফিজ, মেহেদী হাসান মিরাজ, সাকিব, তাইজুল ও শুভাশিসের সাড়াশি বোলিংয়ের বিপক্ষে গলের দুই সেঞ্চুরিয়ান কুশল মেন্ডিস (৫) আর উপল থারাঙ্গার (১১) কেউ মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারেননি। একজন লঙ্কানই কেবল উইকেট আগলে আছেন, তিনি দিনেশ চান্দিমাল। দিন শেষে লঙ্কানদের স্কোর ৭ উইকেটে ২৩৮। দলকে এতদূর টেনে নিয়ে যাওয়া আর তিন উইকেট অক্ষত রাখার পেছনে অগ্রণী ভূমিকা চান্দিমালের। প্রথম দিন টাইগারদের ভালো করার দৃঢ় সংকল্প, উজ্জীবিত বোলিং আর অনুপ্রাণিত ফিল্ডিং ও নির্ভুল ক্যাচিংয়ে যত আশার প্রদীপই জলুক না কেন, পি সারায় কিছু করতে হলে দ্বিতীয় দিন আগে চান্দিমালকে সকাল সকাল আউট করতে হবে। সঙ্গী যেই থাকুন না কেন, চান্দিমাল থেকে গেলেই বিপদ। কেমন বিপদ? শুনবেন? শুনুন তাহলে। এবার শ্রীলঙ্কা সফরে বাংলাদেশ লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি একাদশের সাথে মোরাতোয়ায় যে দুই দিনের প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলেছে, সেখানে প্রায় একই রকম অবস্থায় বিশাল এক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে খেলার চিত্রই পাল্টে দেন চান্দিমাল। তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি (১৩৭) আর মুমিনুল হকের (৭৩ ) ও লিটন দাসের (৫৭*) জোড়া ফিফটিতে বাংলাদেশ ৩৯১ রানের বড় স্কোর গড়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিল। ঠিক পর দিন সেই পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ান চান্দিমাল। ১৬৩ রানে ইনিংসের অর্ধেক শেষ হওয়ার পরও শেষ পর্যন্ত টাইগারদের স্কোর টপকে ৪০৩-এ গিয়ে থামে লঙ্কান বোর্ড সভাপতি একাদশ। চান্দিমাল একাই যা করার করেন। শেষ পর্যন্ত ১৯০ রানে অপরাজিত থাকে তার ব্যাট। সেই চান্দিমাল আবার নট আউট। চিন্তাটা তাকে নিয়েই। কুশল মেন্ডিসের মতো তারও বড় ইনিংস খেলার পর্যাপ্ত সামর্থ্য আছে। সেই ব্যাটসম্যান যত বেশি সময় উইকেটে থাকবেন। ততই লঙ্কান ইনিংস বড় হবে। গলে কুশল মেন্ডিস ০ রানে বেঁচে করেছিলেন ১৯৪। আজ কলম্বোয় অবশ্য কেউ চান্দিমালের ক্যাচ ফেলেননি। তারপরও চান্দিমাল ভাগ্যের আশির্বাদ পেয়েছেন। তিনবার আউট হওয়ার মদো অবস্থা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই কোনো না কোনোভাবে বেঁচে গেছেন চান্দিমাল। প্রথমবার ৩৮ রানে সাকিবের বলে আউট হওয়ার হাত থেকে বেঁচে গেছেন রিভিউ নিয়ে। এরপর ৪৬-এ তাইজুলের বলে মিরাজ ফাইন লেগ থেকে দৌড়ে গিয়ে তা ক্যাচ ধরে ফেললেও আম্পায়ারের ধারণা ছিল বল মাটি স্পর্শ করেছে। সর্বশেষ ৫৫ রানে শুভাশিসের বলে কট বিহাইন্ড হতে হতে বেঁচে গেছেন। শুভাশিসের ইনকাটার তাকে পরাস্ত ও বিব্রত করে ব্যাটের ভেতরে লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে। কিন্তু বল গিয়ে পড়ে কিপার মুশফিকের নাগালের সামান্য আগে। তাই বেঁচে যান চান্দিমাল। দিন শেষে শ্রীলঙ্কান কোচ গ্রাহাম ফোর্ড জানিয়ে দিলেন, বর্তমান অবস্থায় ৩০০-র মতো স্কোর হলেই তিনি সন্তুষ্ট। চান্দিমাল ছাড়া লঙ্কানদের অত দূর যাওয়া কঠিন। এটা গলের উইকেট নয়। রান করতে কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে।পিচের যা অবস্থা, তাতে ৩০০-ও কম নয়। এআরবি/এনইউ/জেআইএম
Advertisement