খেলাধুলা

হেরাথের মাইন্ড গেমের পাল্টা জবাব মুশফিকের!

‘আচ্ছা ক্রিকেট কি শুধুই ব্যাট ও বলের লড়াই। খেলাটা কী শুধু ২২ গজের পিচেই সীমাবদ্ধ থাকে? না, এর বাইরেও কোথাও হয়? হ্যাঁ, হয়। সব সময় না হলেও কখনো কখনো উইলো-চেরির লড়াই ২২ গজ ও ৭৫-৮০ গজের সীমানা ছাড়িয়ে অন্য কোথাও পৌঁছে যায়। তবে সেটা ব্যাট-বলের লড়াই নয়। ক্রিকেটীয় পরিভাষায় যাকে ‘মাইন্ড গেম’ বলে। বাংলায় মনস্তাত্বিক লড়াই। কখনো কথার যুদ্ধও হয়। উপমহাদেশের দলগুলো সচরাচর এমন মাইন্ড গেম বা মনস্তাত্বিক লড়াই কমই খেলে। এমন মাইন্ড গেমের হোতা অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডও মাঝে মধ্যে মাইন্ড গেমে অংশ নেয়। এটা আসলে মাঠের লড়াই শুরুর আগে এক ধরনের মানসিক লড়াই। যার মূল লক্ষ্যই থাকে প্রতিপক্ষকে মনের দিক থেকে দুর্বল করে দেয়া। প্রতিপক্ষকে মানসিক উৎপীড়নে ফেলে দেয়া। তাদের শক্তির জায়গা নিয়ে কটাক্ষ-অবজ্ঞা করা। যাতে করে সে শক্তি দুর্বল বা এলোমেলো হয়ে যায়। অজিরা বেশিরভাগ সময় প্রতিপক্ষকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য, প্রতিদ্বন্দ্বীর মনের জোর কমাতে কোনো কোনো সময় মাইন্ড গেম খেলে থাকে। সেটা শুরু হয় সিরিজ বা সফর শুরুর কিছু সময় আগে। বাংলাদেশ যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে যায়, তখন যেমন বলা হয়েছিল, বাংলাদেশ দুদিনে হেরে যাবে। যে মুত্তিয়া মুরালিধরনের বলে সারা বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা বারবার পরাস্ত হয়েছেন। তাকে দূর্বল করার জন্য অস্ট্রেলিয়া ও ইংলিশ ক্রিকেটার, ধারাভাষ্যকার, বিশেষজ্ঞরা এমনকি মিডিয়াও পেছনে লেগেছে বারবার। এমনও বলা হয়েছে, মুরালি চাক করেন। তার বোলিং অ্যাকশন সিদ্ধ নয়। এশীয় দেশগুলোর মধ্যে এমন মাইন্ড গেম খেলার প্রবণতা এমনিই খুব কম। তবে কলম্বোয় শততম টেস্টের আগে লঙ্কান অধিনায়ক এক মাইন্ড গেম খেলে বসলেন। টেস্ট শুরুর ২৪ ঘণ্টা আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক বলে বসলেন, ‘পি সারার উইকেটে পেসাররা বাড়তি সহযোগিতা পায়। এ উইকেটে পেসারদের বল বাড়তি গতি পায়। বাউন্সও থাকে একটু বেশি।’ সবার জানা, কলম্বোর এ মাঠ স্পিনারদের স্বর্গ। এখানে বরাবরই স্পিনাররা ভাল করে। অথচ যারা সারা বছর এ মাঠে খেলেন, এ পিচের চরিত্র সম্পর্কে যাদের ধারনা অনেক বেশি পরিষ্কার, সেই হেরাথ যখন টেস্ট শুরুর আগে হঠাৎ উইকেটকে পেস ফ্রেন্ডলি বলেন, তখন বিভ্রান্তি জাগে বৈকি; কিন্তু সেটা কেন? এটাই আসলে মাইন্ড গেম। বাংলাদেশ গলে তিন পেসার আর দুই স্পিনার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। সেখানে স্বাগতিকরা খেলেছে দুই পেসার ও তিন স্পিনার। এখন কোনরকমে কায়দা করে যদি বাংলাদেশকে আবারো ওই তিন পেসার ফর্মুলায় ঠেলে দেয়া যায়, তাহলেই কেল্লাফতে। তাই প্রেস মিটে কায়দা করে কথাটা পাতা। যাতে তার কথার আঁটা ফাঁদে ভুল পথে হেটে পি সারায়ও বাংলাদেশ তিন পেসার নিয়ে মাঠে নামে। নিশ্চয়ই লঙ্কান ক্যাপ্টেন চেয়েছিলেন, টাইগার ম্যানেজমেন্ট হয়ত ভাববে- ওরে বাবা, হেরাথ নিজে স্পিনার হয়ে যখন পেসারদের পক্ষে কথা বলছে। তখনো আমরা তিন পেসার নিয়েই মাঠে নামি; কিন্তু না। এবার আর বাংলদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট একাদশ সাজাতে ভুল করেনি। তাই তো তিন পেসার থেকে একজন কমিয়ে তিন স্পিনার নিয়ে মাঠে নামা। যার কার্যকরিতাও মিলেছে। প্রথম দিন যে ৭ উইকেটের পতন ঘটেছে, তার চারটিই জমা পড়েছে স্পিনারদের ঝুলিতে। অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ দুটি আর দুই বাঁ-হাতি সাকিব ও তাইজুল একটি করে উইকেট দখল করেছেন। ওদিকে লঙ্কানরা মুখে পেস সহায় উইকেটের কথা বলে নিজেরা একাদশ সাজিয়েছে একগাদা স্পিনার দিয়ে। হেরাথের দলে আছেন চার চারটি স্পিনার। গলে খেলা লাহিরু কুমারের বদলে এসেছেন ব্যাটসম্যান কাম অফস্পিনার ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। তার মানে বাঁ-হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ, অফস্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা আর বাঁ-হাতি চায়নাম্যান ল²ণ সান্দাকানের সঙ্গে অফব্রেক ধনঞ্জয়া ডি সিলভাসহ চার চারজন স্পিনার। স্বাগতিক দল যখন এক হালি স্পিনার নিয়ে নামে, তখন কী আর বুঝতে বাকি থাকে উইকেট পেসারদের, নাকি স্পিনারদের? এআরবি/আইএইচএস/এমএস

Advertisement