নিজের মেয়ে অপেক্ষার সঙ্গে একই ক্লাসে ভর্তি হয়েছিলেন চন্দা। বাড়ি-বাড়ি ঝিয়ের কাজ করেও পরীক্ষায় সমানে সমানে টক্কর দিয়েছিলেন তিনি। এ রকম একটি গল্প নিয়ে গেলো বছর ভারতে মুক্তি পায় ‘নীল বাটে সন্নাটা’ছবি।
Advertisement
কিন্তু এবার এ ঘটনাটি বাস্তবেই দেখা গেলো ভারতের কলকাতার রানাঘাটের আড়ংঘাটা হাজরাপুর উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে। সেখানে ছেলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন মা ও বাবা।
নীল বাটে সন্নাটা’য় অপেক্ষা সহপাঠী হিসেবে পেয়েছিল মা চন্দাকে, আর হাজরাপুর স্কুলের শিক্ষার্থী বিপ্লব সহপাঠী হিসেবে পেয়েছে বাবা-মা দু’জনকেই। এবার তিনজনই একসঙ্গে পরীক্ষায় বসেছেন।
বুধবার ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে ‘সেলুলয়েডের গল্পের মতো’ এমনই খবর জানা গেছে।
Advertisement
পরীক্ষাকে সামনে রেখে কাস্তে হাতে গবাদি পশুর ঘাস কাটতে গিয়েও পড়া আওড়াচ্ছেন ৪৩ বছরের বলরাম মণ্ডল। আর বাড়িতে সংসার সামলানোর পাশাপাশি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ৩৩ বছরের কল্যাণী। পড়াশোনায় ব্যস্ত তাদের ছেলে বিপ্লবও।
ছেলে জানালো, বাবা-মাকে এবার পাস করতেই হবে। এজন্য নিজেই বাবা-মায়ের প্রাইভেট টিউটরের কাজটিও করছে সে নিজেই।
এদিকে,সিনেমায় সহপাঠীদের কাছে চন্দাকে মা বলে পরিচয় দিতে অপেক্ষা লজ্জা পেলেও বাবা-মাকে নিয়ে বেশ গর্বিত বিপ্লব। তার ভাষ্য, প্রথমে খানিকটা লজ্জা লাগতো। পরে নিজেই তাদের (বাবা-মা) পড়াশোনায় সাহায্য করি।
পেশায় কৃষক বলরাম বলেন, অষ্টম শ্রেণির পর স্কুল ছেড়ে দিয়েছিলাম। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের ভার নিয়ে সেভাবে এগুতে পারিনি পড়াশোনা। এখন ছেলে যখন পড়াশোনা করছে,তখন ফের পড়ার ইচ্ছে জাগলো আমার। তাই স্ত্রীকেও সঙ্গে নিয়ে ভর্তি হয়ে গেলাম।২০১৪ সালে রবীন্দ্র মুক্ত বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করি। পরে ছেলের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়ে গেলাম।
Advertisement
স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপ কুমার হোতা বলেন,ওদের উৎসাহ দেখে আমাদের ভালো লেগেছে। তাই ছেলের সঙ্গে মা-বাবার প্রতিও বাড়তি নজর দিয়েছি।
অন্যদিকে,ভর্তির পর স্কুল থেকে সবুজ সাথী সাইকেল পাওয়ার কথাও জানালেন কল্যাণী। বলেন, সপ্তাহে অন্তত চারদিন তিনজন মিলেই স্কুলে যেতাম। আর বাকি সময় কখনও ছেলে আর ওর বাবা যেতো। কখনও ছেলের সঙ্গে আমি যেতাম।
তিনি আরও বলেন,স্কুলে যাওয়া-আসার পথে নিয়মিত পড়শি কিংবা পথচারীদের টিটকিরিও শুনতে হয়েছে। কিন্তু তাতে কান দিইনি আমরা।
বলরাম মণ্ডল বলেন,আমি ক্লাসের অলিখিত ক্যাপ্টেন ছিলাম। শিক্ষকদের চেয়েও সহপাঠীরা আমাকে মানত বেশি। আমি যেমন বন্ধুর মতো মজা করেছি, তেমনই প্রয়োজনে বাবার মতো শাসনও করেছি সহপাঠীদের। স্কুলে সবাই উৎসাহ দিয়েছেন আমাকে।
তবে মধ্যবয়সে পড়াশোনার প্রতি ঝোঁকের একটা কারণ রয়েছে বলেও জানান বলরাম।বলেন,আমাদের অনেক উচ্চশিক্ষিত আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন। কেউ কেউ কলেজশিক্ষকও। আমরা অল্পশিক্ষিত বলে লজ্জায় কথা বলেন না তারা। এমনকি,যোগাযোগও রাখতে চান না।তাই খুব জেদ উঠল বলতে পারেন,দেখি পাস করলে যদি মেশার যোগ্য হই।
আলোচিত এ পরিবারটিকে স্কুলে যেতে দেখে আরও অনেকে অনুপ্রেরণা পাবেন বলে মনে করেন স্থানীয় বিধায়ক সমীর পোদ্দার।
এমএমএ/এসআর/পিআর