খেলাধুলা

মুশফিকদের শততম টেস্টের স্মারক পদক পড়িয়ে দিলেন সোমাথিপালা

যে গরম পড়েছিল, তাতে বৃষ্টি অস্বাভাবিক নয়। তারপরও কাল রাতে (মঙ্গলবার) হঠাৎ ঝড়ো বাতাস, সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকানো আর ভারী বর্ষণ। বেশ এক পশলা ভারী বৃষ্টিতে ধুয়ে মুছে গেল কলম্বোর রাস্তা-ঘাট ও মাঠ। রাতেই আকাশ পরিষ্কার। কিন্তু ভোরে আকাশে আবার মেঘের ঘনঘটা। তবে কি শততম টেস্টের সকালটা বৃষ্টিতে পণ্ড হবে? এমন প্রশ্নই জাগলো। কিন্তু ঘড়ির কাটা সকাল সাতটা ছোয়ার পর থেকেই দ্রুত মেঘ কাটতে থাকলো। তারপরও রোদ আর মেঘের খেলা চললো ঘণ্টাখানেক। সকাল সাড়ে আটটার পর থেকে আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার। বাংলাদেশের শততম টেস্টের সকালটা প্রকৃতি মাটি করে দেবে, তা কি হয়? হয় না। প্রকৃতিও সদয় হলো। আকাশ পরিষ্কার। আগের রাতের বৃষ্টির প্রভাবে খানিক তাপমাত্রা ও আর্দতাও কম। অসহনীয় গরম ও ঘামের যন্ত্রণা একটু কমই।  মোদ্দা কথা, সুন্দর সকাল।তারপরও বুধবার, পুরোপুরি কর্ম দিবস। সকাল আটটার পর থেকে অফিসগামী মানুষের রাস্তায় নেমে আসা। স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঘর ছেড়ে রাস্তায়। খুব স্বাভাবিকভাবেই রাস্তায় ট্রাফিক জ্যাম। তবে ঢাকার মত অসহনীয় নয়। সিগন্যালের জ্যাম। সিগন্যাল থেমে যেতেই আবার সরব কলম্বোর বড় বড় সড়ক ও রাজপথ। এরই মধ্যে ‘বোরেল্লা’ নামক জায়গায় একটু বেশি প্রাণ চাঞ্চল্য। এখানেই ‘পি সারা ওভাল।’ লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের প্রথম সভাপতির নামে এ স্টেডিয়াম। তবে আগেরই জানা মাঠের মালিক তামিল ইউনিয়ন ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিক ক্লাব। সকাল আটটার কিছু পরে এসে থামলো বাংলাদেশের টিম বাস। তাজ সমুদ্র থেকে সোজা পি সারা রমুল গেট দিয়ে ড্রেসিং রুমে ঢুকেই পোশাক পাল্টে ব্লেজার পরে নেয়া। শততম টেস্ট উপলক্ষে কলম্বোর অভিজাত এক টেইলারে বানাতে দেয়া হয়েছিল শততম টেস্ট উপলক্ষে বিশেষ নীল ব্লেজার। সে ব্লেজার চাপিয়ে ঠিক নয়টার পর মাঠে ঢুকলেন মুশফিক, তামিম, সাকিব ও মোস্তাফিজ-মিরাজরা। ততক্ষণে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড প্রধান চলে এসেছেন মাঠে। টসের আগে গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের ঠিক সামনে সারিবদ্ধভাবে এসে দাঁড়ালেন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টায় হয়ে গেল টস। টস করে টিভিতে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেই দুই অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম ও রঙ্গনা হেরাথ চলে গেলেন নির্দিষ্ট জায়গায়। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনে হয়ে গেল ছোট অথচ সুন্দর সাজানো গোছানো এক অনাম্বর কিন্তু প্রাণ ছুয়ে যাওয়া আনুষ্ঠানিকতা। শততম টেস্টের স্মারক ব্লেজার গায়ে চাপিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো বাংলাদেশ দল। পাশে স্বাগতিক লঙ্কানরা। গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের সামনে দু`দলের জাতীয় পতাকা উড়ল। তারপর লঙ্কান ক্রিকেট বোর্ড প্রধান সোমাথিপালা ও বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন একে একে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের গলায় পড়িয়ে দিলেন স্মারক মেডেল। এ যেন শততম টেস্টে অতিথি বোর্ডের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বরণ করে নেয়া। সে পর্ব শেষে বাজল দু`দেশের জাতীয় সঙ্গীত। আকাশে উড়লো নান রংয়ের বেলুন। ছোট আনুষ্ঠানিকতা শেষে দু`দল চলে গেল ড্রেসিং রুমে। বাংলাদেশের মাটিতে এমন আনুষ্ঠানিক কোন পর্ব মানেই খেলা শুরুতে অন্তত দশ পনের মিনিট দেরি হয়ে যাওয়া। কিন্তু পি সারায় আজ কিছুই হলো না। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঠিক সকাল ১০টায় শুরু হয়ে গেল খেলা। প্রথম, পঞ্চাশতম, শততম টেস্টের তিন সকালে মুদ্রা ভাগ্যের তিনরকম চিত্র। ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর টস জিতে ব্যাটিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন প্রথম অধিনায়ক নাঈমুর রহমান। ২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি ডানেডিনের ইউনিভার্সিটি ওভালে পঞ্চাশ নম্বর টেস্টেও টসে কিউই অধিনায়ক ড্যানিয়েল ভেট্টরির কাছে হারেন তখনকার অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল। আর আজ ১০০ নম্বর টেস্টের সকালে মুদ্রা ভাগ্যে আবার হারলেন মুশফিকুর রহীম। পার্থক্য একটাই। প্রথম ও পঞ্চাশ নম্বর টেস্টে আগে ব্যাট করা। আর শততম টেস্টে এসে প্রথম ফিল্ডিং। দেখা যাক ১ ও ৫০ নম্বর ম্যাচে অতি কাকতালীয়ভাবে ৯ উইকেটে হারের পর এবার পরে ব্যাট করায় ভাগ্য বদলায় কিনা?এআরবি/এমআর/পিআর

Advertisement