প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমূল পরিবর্তন আসছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষায়। এখন থেকে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে বিসিএস ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগ দেয়া হবে। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতাসহ বিসিএস নিয়ে নানা জটিলতা নিরসন হবে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। পিএসসির অধীনে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার নানা দিক, মানবণ্টন ও আধুনিকায়ন নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক। তিনি বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিসিএস পরীক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন ও সংস্কার করা হচ্ছে। সিলেবাসের আধুনিকায়ন, পরীক্ষা পদ্ধতি ও নম্বর বণ্টনে পরিবর্তন ছাড়াও যুগোপযোগী হচ্ছে দেশের সরকারি চাকরি প্রার্থীদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় এ পরীক্ষার নানা দিক।‘বিসিএসের পরীক্ষা পদ্ধতি, নম্বর বণ্টন ও সিলেবাস নিয়ে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের আপত্তি বহুদিনের। প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরাও। তাই উন্নত দেশতো বটেই, এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থাৎ তাদের সিলেবাস, মানবণ্টন ও পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমাদের সিস্টেমও আধুনিক ও শিক্ষাবান্ধব করা হবে।’ বিসিএসের যেকোনো পরীক্ষার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এক বছরের মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। সাবেক নির্বাচন কমিশনের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা অভিজ্ঞ এ কর্মকর্তার মতে, প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতিতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়। একজন প্রার্থীর পক্ষে মাসের পর মাস ধরে পরীক্ষা দিতে হয়, যা বেশ কষ্টকর। যে কারণে অনেক মেধাবী প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় অংশ নেন না। তবে প্রচলিত পদ্ধতি তো রাতারাতি পাল্টে ফেলা যাবে না। ধীরে ধীরে সংস্কার করা হবে। ‘লিখিত পরীক্ষার নম্বর কমালেও প্রার্থীদের মেধা ও যোগ্যতা যাচাইয়ে কোনো ঘাটতি হবে না। কারণ কম নম্বরের মধ্যেও মানসম্পন্ন প্রশ্ন করে প্রার্থীর মেধা ও যোগ্যতা যাচাই করা সম্ভব’ বলেন সাবেক এ শিক্ষা সচিব।বিসিএস’র লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে একক পরীক্ষকের পরিবর্তে দ্বৈত পরীক্ষক পদ্ধতি চালু করা হবে জানিয়ে ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের এ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ আসছে। প্রায় দুই যুগ বন্ধ থাকার পর বাংলার পাশাপাশি এবার থেকে ইংরেজি ভার্সনে পরীক্ষা দিতে পারবেন চাকরি প্রার্থীরা। বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্ন প্রসঙ্গে ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, বিসিএসে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে একশ’ নম্বরের প্রশ্ন যোগ হচ্ছে। সময় বাঁচিয়ে স্বল্প সময়ে উপযুক্ত প্রার্থী মনোনয়নের লক্ষ্যে পরীক্ষার খাতা বাসায় না নিয়ে পিএসসি কার্যালয়ে বসেই দেখা হবে। পিএসপির আধুনিকায়ন ও কর্মকাণ্ডের বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, পিএসসিকে ডিজিটালাইজড করার সঙ্গে নানা উদ্যোগ হাতে নেওয়া হয়েছে। যার অনেকগুলো আগামী বিসিএস পরীক্ষাতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছে। পরিকল্পনা আছে আরও নতুন নতুন বেশকিছু সংস্কার নিয়ে। অধিকাংশ বিষয় নিয়েই কাজ চলছে। বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতার বিষয়ে তিনি বলেন, প্রচলিত এ পদ্ধতিতে লাখো তরুণ-তরুণীর মূল্যবান সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতি নিরসনে পরীক্ষা পদ্ধতি পাল্টানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে পিএসসি। বিসিএস পরীক্ষা সংস্কারের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে পিএসসির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা একাধিক বৈঠক করেছেন বলেও জানান প্রতিষ্ঠানটির এ কর্তাব্যক্তি। তিনি বলেন, এ বিষয়ে জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরই এসব পরিবর্তন নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। পিএসসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে কমিশন কারিগরি দিকগুলো উন্নয়নে কাজ করছে। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যতে বর্তমান সময়ের চেয়ে আরও কম সময়ে ফল প্রকাশ সম্ভব হবে। বর্তমানে ফল প্রকাশে সময় লাগে প্রায় দুই বছর। ‘কিন্তু আমরা সার্কুলার (নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি) জারি করা থেকে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ পর্যন্ত সব কাজ এক বছরের মধ্যে সম্পন্ন করার চেষ্টা করছি। পিএসসি এখন একটি সার্চ ইঞ্জিনের উন্নয়ন করছে, যার মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত সময়ে মেরিট ও কোটা নির্ধারণ সংক্রান্ত সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব হবে’ যোগ করেন তিনি। বর্তমান বিসিএস পরীক্ষা পদ্ধতি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়। ২০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতির প্রিলিমিনারি পরীক্ষার পর হয় লিখিত পরীক্ষা। ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার পর তৃতীয় ধাপে হয় ২০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি ও বাংলাদেশ বিষয়ে ২০০ করে ৬০০ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী, গাণিতিক যুক্তি ও মানসিক দক্ষতা এবং সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ১০০ করে মোট ৯০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হয় একজন প্রার্থীকে। এসব পরীক্ষা নিতে প্রায় এক মাসের মতো সময় লাগে পিএসসির। কোটা পদ্ধতির নানা বির্তক প্রসঙ্গে পিএসসির চেয়ারম্যান বলেন, প্রকৃতপক্ষে মেধাবীরাই কোটা সুবিধার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। তাই কোটার জন্য মেধাবীরা বিসিএস পরীক্ষায় বঞ্চিত হচ্ছেন- এটি বলার অবকাশ নেই। কোটা দিয়ে মেধাবীদের বঞ্চিত করা হচ্ছে- এ অভিযোগও ঠিক নয়। ‘সুনির্দিষ্ট নীতিমালা মেনেই কোটা নির্ধারণ করে সরকার, পিএসসি নয়’ বলেন ড. মোহাম্মদ সাদিক।এমএইচএম/এমএআর/আরআইপি
Advertisement