রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে চামড়া শিল্পনগরীতে স্থানান্তরের কারণে বাসস্থান, চিকিৎসা, সন্তানের শিক্ষাসহ নানা সমস্যার মুখে পড়ার আশঙ্কা করছেন ট্যানারি শ্রমিকরা। সোমবার সরেজমিনে গেলে হাজারীবাগের ট্যানারি শ্রমিক ও শ্রমিক নেতারা জাগো নিউজকে এ আশঙ্কার কথা জানান। তারা বলছেন, চামড়া শিল্প শুধু ক্ষতিকর নয় ঝুঁকিপূর্ণও। শ্রমিকরা এ শিল্পে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। কিন্তু সাভারে আধুনিক চামড়া শিল্পনগরী স্থাপনে শুধু মালিকপক্ষের কথা ভাবা হয়েছে। শ্রমিকদের স্বার্থকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেমায়েতপুরের যেখানে নতুন চামড়া শিল্পনগরী করা হচ্ছে সেখানে শ্রমিকদের থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। যেসব শ্রমিক এরইমধ্যে শিল্পনগরীতে কাজ করছেন, তাদের অধিকাংশই কারখানার ভেতরে থাকছেন। কিন্তু যারা পরিবার নিয়ে ঢাকা শহরে থাকেন, তাদের পক্ষে কারখানার ভেতরে বসবাস করা সম্ভব নয়। তাই হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি হেমায়েতপুরে পুরোপুরি স্থান্তারিত হয়ে গেলে চরম বাসস্থান সংকটে পড়বেন শ্রমিকরা। হাজারীবাগের আয়ুব ব্রাদার্স ট্যানারির শ্রমিক মো. হারুন জাগো নিউজকে বলেন, আমি আট বছর ধরে হাজারীবাগে ট্যানারিতে কাজ করছি। ২ হাজার ৭০০ টাকা বেতনে কাজ শুরু করে এখন ১৭ হাজার টাকা পাই। পরিবার নিয়ে হাজারীবাগেই থাকি। কিন্তু সাভারে গেলে পরিবার নিয়ে কারখানার ভেতর তো থাকা যাবে না। এছাড়া সেখানে হাসপাতালেরও ব্যবস্থা নেই। সেখানে থাকার ব্যবস্থা ও চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। অন্যথায় হাজারীবাগে ট্যানারি বন্ধ হয়ে গেলে অন্য কাজে যোগ দিতে হবে বলে জানান তিনি। ক্রিসেন্ট ট্যানারির শ্রমিক মো. আশিক বলেন, হেমায়েতপুরে হাজারীবাগ থেকে গিয়ে কাজ করা সম্ভব না। সেখানে বাসস্থান ছাড়াও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একই কথা বললেন হাজারীবাগের গ্রেইট ইস্টার্ন ট্যানারির শ্রমিক মো. বাদল।এ বিষয়ে ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, শিল্পনগরীতে শ্রমিকদের বাসস্থান ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। পাশাপাশি শ্রমিকদের চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, চাকরির নিশ্চয়তার দাবিও জানিয়ে আসছি।তিনি বলেন, চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে কাজ করার কারণে সারাবছরই নানান রোগে ভো্গেন চামড়া কারখানার শ্রমিকরা। হেমায়েতপুরে আলাদা বাসস্থান ও চিকিৎসা কেন্দ্র না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কাজে যোগ দেওয়া সেখানকার শ্রমিকরা। তাই শিল্পনগরীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল স্থাপনের জন্যে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। শ্রমিক নেতা মালেক আরও বলেন, যেখানে শিল্পনগরী করা হয়েছে সেটি মূলত একটি চরাঞ্চল। জীবন ধারণের আধুনিক কোনো ব্যবস্থা নেই সেখানে। শ্রমিকদের সুবিধার্থে এসব সুযোগ-সুবিধা চালু করা জরুরি হয়ে পড়েছে।এমএএস/এমএ/এসআর/পিআর
Advertisement