জাতীয়

বর্ণিল মঙ্গল শোভাযাত্রা

ঘড়ির কাটায় তখন সোয়া ৯টা পেরিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয় ১৪২২ বাংলা নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রা। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতাকে ভুলে নতুন বছর হবে বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্তমনাদের এমনই প্রত্যাশা নিয়ে এবারের শোভাযাত্রটি বের হয়। তাইতো এই বছর নববর্ষের মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে নেয়া হয়েছে ‘অনেক আলো জ্বালাতে হবে মনে অন্ধকারে’ এ স্লোগানকে। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে শোভাযাত্রাটি শুরু হয় চারুকলা অনুষদ থেকে। শাহবাগ ও রূপসী বাংলা মোড় ঘুরে টিএসসি হয়ে আবার চারুকলা অনুষদে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রাটি। শোভাযাত্রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। সাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জিবিত হয়ে যুদ্ধাপরাধ ও জঙ্গিবাদমুক্ত দেশ গড়ার প্রত্যয়ে বের করা হয় এবারের শোভাযাত্রা।‘মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা, নতুনস্নানে আজ শুচি হোক ধরা’ এ আহ্বানে মঙ্গলবার নতুন বছরকে বরণ করে নিতে সারাদেশে নেমেছে জনতার ঢল। জাগ্রত চিত্তে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে উদ্ধ্যত হতে নির্ভীক পথচলার অঙ্গীকার নির্যাস ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী।বর্ষবরণের এ উৎসবে কেউ এসেছেন পরিবার পরিজনদের নিয়ে, কেউ এসেছেন যুগলভাবে। আবার অনেকেই এসেছেন দলবেঁধে। যে যেভাবেই আসুক না কেন দেশীয় পোশাক-পরিচ্ছদে সবাই বিশেষ পরিপাটি। তরুণ-তরুণী এবং শিশুরাসহ সব বয়সের নারী-পুরুষ সেজেছে রঙিন সাজে। নেই উৎসবের কমতি। নারীরা সাদা জমিনে লাল পেড়ে শাড়িতে খোপায় সাদা ফুল, আর পুরুষদের লাল-সাদা পাঞ্জাবি-পাজামার সাজের অনুকরণে শিশু-কিশোরদের এক বর্ণিল সাজে সেজেছে বাংলাদেশ। পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রার সঙ্গে নতুন দিনের পথে এগোনোর শপথ নিয়েছে সবাই। মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর লোকজ মেলায় ভিন্ন এক সাজে সেজেছে গোটা বাংলাদেশ। পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পৃথক বর্ষবরণ অনুষ্ঠান পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় তৈরি করেছে ভিন্ন এক আবহ। শোভাযাত্রা উপলক্ষে মঙ্গলবার সকাল থেকেই দোয়েল চত্বর, টিএসসি, শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায় মানুষ জড়ো হতে থাকেন। ৮টা থেকেই পুরো এলাকা লোকে লোকারণ্য হতে থাকে। লাল-সাদা পোশাকে উচ্ছল নারীদের মাথায় শোভিত নানান রঙের ফুল। তরুণদের ভেপুর শব্দে আনন্দের উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। তপ্ত রোদে ঘামছেন সবাই, হাতে হাতে বর্ণিল পাখা। ‘অনেক আলো জ্বালতে হবে মনের অন্ধকারে’ মানব মনকে কলুষতা মুক্ত করে অপশক্তির কাছে বন্দি সাধারণ মানুষকে মুক্ত করতে সামনের দিকে প্রকাশিত হয়েছে বড় একটি হাত। দেশের সমৃদ্ধিকে প্রকাশ করছে মা-শিশু। আর শিল্পী জামিনী রায়ের স্মরণে রয়েছে হাতির প্রতিকৃতি। আর এর সঙ্গে রয়েছে নানা রঙের মুখোশ, রঙ বে-রঙয়ের চরকি। এছাড়া বাঘ, হাঁস, বিড়াল, শখের হাঁড়ি, শিশু হরিণ, পেঁচা, কাগুজে বাঘ, ছোট-বড়-মাঝারি আকৃতির তুহিন পাখিসহ দারুণ সব মোটিফের কাঠামোও প্রদর্শিত হচ্ছে শোভাযাত্রায়। সর্বজনীন এ শোভাযাত্রার নানান শিল্প-কাঠামোয় এবার প্রাধান্য পেয়েছে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধময় বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এবং সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদমুক্ত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। সঙ্গে রয়েছে বাঙালির শেকড়সংলগ্ন লোকজ সংস্কৃতির নানান আবহ। তরুণরা ধুতি ও লুঙ্গি পরে ঢোল বাজিয়ে, কেউ একতারা হাতে কেউবা হুঁকা, লাঙ্গল, কাঁচি নিয়ে গ্রাম-বাংলার কৃষক সেজে নেচে-গেয়ে মাতিয়ে রাখেন শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা রয়েছে চোখে পড়ার মতো। পুলিশ, র্যাবের সঙ্গে রয়েছে অন্যান্য সহযোগী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যও। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর। এসআই/এমএইচ/বিএ/আরআইপি

Advertisement