‘পি সারা’- শুধু বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গেই এ মাঠের নিবিড় সম্পর্ক নয়। লঙ্কান ক্রিকেটের সাথেও এ মাঠ জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে এ মাঠের নাম। থাকবে অনাদীকাল। টিম শ্রীলঙ্কার টেস্ট যাত্রার দু’দুটি বড় মাইলফলকের সাক্ষী এই ‘পাইকিয়াসোথি সারাভানামুত্তু’ স্টেডিয়াম। ৮১ সালে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার টেস্ট অভিষেক হয় এই মাঠে । ১৯৮২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। এই পি সারা মাঠে প্রথম টেস্ট খেলে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বান্ডুলা ওয়ার্নাপুরার অধিনায়কত্বে প্রথম টেস্ট খেলতে নামে শ্রীলঙ্কা। আরও একটি বড় ও অবিস্মরনীয় সাফল্যের সঙ্গী এই পি সারা স্টেডিয়াম। টেস্ট অভিষেকের তিন বছর পার না হতেই প্রথম টেস্ট জয় পায় লঙ্কানরা। সেটাও এই মাঠে। ১৯৮৫ সালের ৬-১১ সেপ্টেম্বর এই পি সারা মাঠে শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্ট জয়ের ভেন্যুও এই পি সারা। এই মাঠে শক্তিশালী ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্ট জয়ের সুখস্মৃতি রয়েছে লঙ্কানদের। তাও ছোটখাট ব্যবধানে নয়। ১৪৯ রানের বড় ব্যবধানে। সেই মাঠে বাংলাদেশের শততম টেস্ট। কী অদ্ভুত! শ্রীলঙ্কার প্রথম আর বাংলাদেশের ১০০তম। অনেক মিল। লঙ্কান ক্রিকেটের অবিস্মরনীয় সাফল্যের স্বাক্ষী এই তামিল ইউনিয়ন ক্লাব মাঠ। তাই বলে কোনো বিশাল স্টেডিয়াম নয়। এমন কোনো স্থাপত্যশৈলিও নেই যে প্রবেশ করা মাত্র চোখ ছানাবড়া হয়ে যাবে। এটা আসলে একটি ক্লাবের মাঠ। এখনো তাই রয়ে গেছে। প্রবেশ পথ থেকে শুরু করে এমন কোন স্থাপনা নেই, যা আপনাকে মুগ্ধ করবে। আপনি মোহিত হবেন। তবে হ্যাঁ, একটা আদর্শ ক্রিকেট ভেন্যুর যা যা প্রয়োজন, সবই আছে। সুন্দর সবুজ গালিচার মত আউটফিল্ড। ভাল মানের উইকেট। মাঠের একদিকে প্যাভিলিয়ন। ড্রেসিং রুম। মিডিয়া সেন্টার। প্রেস বক্স। দু’দিকে দর্শকদের খেলা দেখার জায়গা। সবই আছে। সে অর্থে গ্যালারি নেই। তবে আরও কিছু নেই। যেমন ফ্লাডলাইট নেই। ইলেক্ট্রনিক স্কোরবোর্ডের সঙ্গে সেই চার যুগ আগের হাতে চালানো কালো রংয়ের স্কোরবোর্ডও এখানো চলছে। অল্প কজন মানুষ মাঠ ও পিচ তৈরির কাজে ব্যস্ত। মাঠের পাশে একটু ছোট জায়গায় প্র্যাকটিস কমপ্লেক্স। বাংলাদেশের মত ২৫-৩০ হাজার দর্শকের আসন নেই। সাকুল্যে হাজার পনেরো ক্রিকেট অনুরাগি খেলা দেখতে পারেন। তবে সেটাও ঢাকার মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম, বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামের মত বিশাল ও সু-প্রশস্থ এলাকা জুড়ে নয়। আকার আকৃতিতে একদম ঢাকার ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম (আবাহনী মাঠও বলেন কেউ কেউ) এবং মিরপুর সিটি ক্লাব মাঠের মত। শুধু প্রেসবক্স ছাড়া মাঠের কোথাও কোন তিনতলা স্থাপনাই নেই। পার্থক্য একটাই- সেই মাঠ দুটো আজ তিন যুগের বেশি সময় ধরে শুধুই ক্রিকেট মাঠ হয়ে আছে। আধুনিক হতে পারেনি। একটা আধুনিক ক্রিকেট মাঠের প্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় উপাদানসমূহ এখনো ধানমন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়াম এবং সিটি ক্লাব মাঠে নেই; কিন্তু তার চেয়ে ছোট-খাট জায়গায় তামিল ইউনিয়ন ক্লাব মাঠে আছে। এখানে সব রকমের সুযোগ সুবিধা আছে; কিন্তু তেমন কোন প্রাচুর্য্য নেই। যা দরকার তাই আছে। অতিরঞ্জিত কিছু বা বাহুল্য নেই। চাকচিক্য নেই বললেই চলে। প্যাভিলিয়ন আর গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড যাই বলা হোক না কেন- এয়ারকন্ডিশনও নেই। কাঠের চেয়ার পাতা। মাথার ওপরে ফ্যান ঘুরছে। ক্লাব প্যাভিলয়নে গেলে চোখে পড়বে যারা বিভিন্ন সময় এ ক্লাবের হয়ে খেলে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছেন তাদের নামাঙ্কিত বোর্ড। এ ক্লাবের লাইফটাইম মেম্বার ও বিভিন্ন সময় যারা ক্লাব ব্যবস্থাপনায় জড়িত তাদের নামও খোদাই করা আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্রিকেট ভেন্যুতে হসপিটালিটি বক্স, গ্র্যান্ডস্ট্যান্ড, ক্লাব হাউজ কত নামের বসার জায়গা। সব কিছুতেই বাড়তি চাকচিক্য; কিন্তু কোথাও কোন ক্রিকেট সংগঠকের নাম-ধাম নেই। এমনকি জাতীয় দলের অধিনায়কদের নামও স্থায়ীভাবে খোদাই করা নেই কোথাও। অথচ নেহায়েত সাদামাটা ও চাকচিক্যহীন পি সারায় এসবই আছে। এখানে ফ্লাডলাইট নেই। তারপরও প্রতিনিয়ত টেস্ট হচ্ছে। এটাই মৌলিক পার্থক্য। বাংলাদেশে ফ্লাডলাইট ছাড়া ক্রিকেট ভেন্যু চিন্তা করা যায়! যায় না। এটাই পার্থক্য। অথচ এই মাঠে খেলে খেলেই আজ বিশ্বখ্যাত মুত্তিয়া মুরালিধরন। তার নামের পাশে লেখা ৮০০ টেস্ট উইকেট। এআরবি/আইএইচএস/জেআইএম
Advertisement