মতামত

সাবমেরিনের জয়যাত্রা

নৌবাহিনীর বহরে প্রথমবারের মতো দু’টি সাবমেরিন যুক্ত হল। এর মধ্য দিয়ে সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। `নবযাত্রা` ও `জয়যাত্রা` নামের দুটি সাবমেরিন টর্পেডো এবং মাইন দ্বারা সুসজ্জিত, যা শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনকে আক্রমণ করতে সক্ষম। আর এর মাধ্যমেই ত্রিমাত্রিক শক্তিতে রূপ নিলো বাংলাদেশ নৌবাহিনী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার ‘নবযাত্রা’র অধিনায়ক কমান্ডার কে এম মামুনুর রশিদ এবং ‘জয়যাত্রা’র অধিনায়ক লে. কমান্ডার মাজহারুল ইসলামের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেয়ার পর ত্রিমাত্রিক সক্ষমতা অর্জনের পরিচিতিমূলক মহড়া দেয় বানৌজা বঙ্গবন্ধু, নেভাল এভিয়েশনের দু’টি হেলিকপ্টার, দু’টি এমপিএ ও একদল দক্ষ কমান্ডো। এ সময় সাবমেরিনের প্রথম ক্রুদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাস বীরের ইতিহাস। কাজেই আমি বিশ্বাস করি আপনারা নিজের মেধা ও পেশাগত কসরতের মাধ্যমে নৌবাহিনীর এই আধুনিক অভিযাত্রায় সফল হবেন। দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও প্রতিরক্ষায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করবেন। প্রধানমন্ত্রী এরপর ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’ নামে একটি পূর্ণাঙ্গ ঘাঁটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ‘বিএনএস শেখ হাসিনা’ কার্যত বাংলাদেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। আর গুটিকয় সাবমেরিন পরিচালনাকারী দেশের তালিকায় যোগ হলো বাংলাদেশের নাম।বাংলাদেশ নৌবাহিনী আগে দ্বিমাত্রিক ছিল। দুটি ডাইমেনশনে তারা কাজ করতে পারত। কিন্তু এই দুটো সাবমেরিন যুক্ত হবার ফলে নৌবাহিনী ত্রিমাত্রিক শক্তি হিসেবে যাত্রা শুরু করল। সক্ষমতার দিক দিয়ে নৌবাহিনীকে যে দায়িত্ব পালন করতে হয়- তিনটা ডাইমেনশনে তাদের হুমকি মোকাবিলা করতে হয়- গতকাল  থেকে এটার সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।চীনের ০৩৫ জি টাইপ দুটি ডিজেল ইলেকট্রিক সাবমেরিনের অন্তর্ভুক্তির ফলে বিশাল জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়লো। পাশাপাশি তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের ব্লকগুলোতে নিরাপত্তাসহ সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাবমেরিন দু’টির সহায়ক ভূমিকা পালনের সুযোগ তৈরি হলো। প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক আদালতে সুরাহা হওয়ায় বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে পেরেছে। সাবমেরিন যুগে প্রবেশ করায় সমুদ্রসীমানার নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডেও বড় ধরনের অগ্রগতি হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হল। নানা ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ । ভিশন ২০২১ নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। ইতোমধ্যেই নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সূচকেও এগিয়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় নৌবাহিনীর বহরে দু’টি সাবমেরিন যুক্ত হওয়া অত্যন্ত গৌরবের। বাংলাদেশ সাফল্যের পথে এগিয়ে গেল আরো একধাপ। নবযাত্রার এই জয়যাত্রা ধরে রাখাটাই হবে এখন চ্যালেঞ্জ। এইচআর/জেআইএম

Advertisement