ভিআইপি গ্যালারির এক কোনায় কয়েকজন চাইনিজ সমর্থক গলা ফাটাচ্ছেন দলকে উৎসাহ দিতে দিতে। মাঠে তখন মালয়েশিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে। খেলার বয়সও কমছে, তৃতীয় কোয়ার্টারও শেষ। লাল পোশাক পরা ওই চাইনিজ সমর্থকরাই তখন নজর কাড়ছিল আশপাশের মানুষগুলোর। মালয়েশিয়া যেভাবে একের পর এক গোল মিস করছিল তাতে অনেকে ধরেই নিয়েছিল হকি ওয়ার্ল্ড লিগ রাউন্ড-২ এর ঢাকা পর্ব বাজিমাত করতে যাচ্ছে চীন; কিন্তু শেষ ১৪ মিনিটেই ওই লাল উৎসব থামিয়ে দিয়ে আসরের শেষ হাসি মালয়েশিয়ার মুখে। পরের রাউন্ড নিশ্চিত করা দুই দলের লড়াইটা ছিল শ্রেষ্ঠত্বের। সে লড়াইয়ের পর মাঠে নাচলো মালয়েশিয়ার খেলোয়াড়রা। ২-২ গোলে অমিমাংসিত থাকা ম্যাচ মালয়েশিয়া শ্যুটআউটে জিতে নেয় ৫-৩ ব্যবধানে।দুই দলের শক্তি-সামর্থ্য আর র্যাংকিংয়ে ফাইনালে ফেবারিট ছিল মালয়েশিয়াই; কিন্তু ‘চাইনিজ কৌশলের’ কাছে দলটি যেভাবে বার বার ব্যর্থ হচ্ছিল তেমন ভাগ্যও ছিল তাদের বিপক্ষে। ২ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর চীনের পোস্টের সামনে কি না করেছে মালয়েশিয়ানরা। ১০টি পেনাল্টি কর্নার, একটি পেনাল্টি স্ট্রোক- কোনো কিছুই কাজে লাগাতে পারেনি তারা। যে পিসি ভাগ্য বারবার মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল মালয়েশিয়া থেকে সেই পিসিই জাগিয়ে তুলেছে তাদের। নিজেদের ১১তম পিসিতে ব্যবধান কমানোর পর ১৩ তম পিসিতে সমতা। মূহূর্তেই বদলে যায় ম্যাচের চিত্রনাট্য। ম্যাচটাকে পেনাল্টি শ্যুটআউট পর্যন্ত টেনে নিয়ে যোগ্যতার দল হিসেবেই ঢাকায় চ্যাম্পিয়ন হয় মালয়েশিয়া।প্রথম কোয়ার্টারের শেষ মুহুর্তে পাওয়া পেনাল্টি কর্নার থেকে গোল করে চীনকে এগিয়ে দেন দু তালাকে। ২২ মিনিটে সু জুনের চমৎকার ফিল্ড গোলে ব্যবধান দ্বিগুণ করে লাল জার্সিধারীরা। দ্বিতীয় গোলের পর ব্যবধান কমানোর সবচেয়ে সহজ সুযোগ পেয়েছিল মালয়েশিয়া; কিন্তু পেনাল্টি স্ট্রোক কাজে লাগাতে পারেননি নাজমি জাজলাম। তার হিট রুখে দেন চাইনিজ গোলরক্ষক মিং চেং।এই চাইনিজ গোলরক্ষকই ছিলেন ম্যাচের সেরা পারফরমার। মালয়েশিয়ার গোটা পাঁচেক সুযোগ নষ্ট করেছেন তিনি। কেবল গোলরক্ষকই নয়, মালয়েশিয়ার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছিল গোল পোস্টও। তিনবার মালয়েশিয়ান ফরোয়ার্ডদের হিট ফিরেছে পোস্ট ও ক্রসবারে লেগে। একের পর এক মিসে মালয়েশিয়ার ডাগআউটে যখন হতাশা বাড়তে থাকে তখন শাহরিল সাবাহ ব্যবধান কমান ৪৬ মিনিটে। ৫৫ মিনিটে নাজমি জাজলানের পেনাল্টি গোলে ম্যাচে ফেরে মালয়েশিয়া।শ্যুটআউট পর্বেও ছিল গোল পাল্টা-গোল। প্রথম ৩ হিটে দুই দলই গোল করে। মালয়েশিয়া চতুর্থ হিটে গোল করলেও চিনের দিহাও মিং ব্যর্থ হন। তার হিট আটকিয়ে দেন মালয়েশিয়ার গোলরক্ষক। পঞ্চম হিটে মালয়েশিয়ার ফিতরি সারি গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন। চীনের শেষ হিটটি আর নিতে হয়নি। তার আগেই ফয়সালা হয়ে যায় হকি ওয়ার্ল্ড লিগ রাউন্ড-২ এর ঢাকা পর্ব। আরআই/আইএইচএস/জেআইএম
Advertisement