জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছে ৯ বছরের শিশু আবির। তার বেশিরভাগ সময়ই কাটছে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিওতে। কিছুটা সুস্থ হলে নেয়া হয় শিশু ওয়ার্ডে। পরক্ষণেই অবস্থার অবনতি হলে পুনরায় তাকে নেয়া হচ্ছে আইসিওতে। আবির বর্তমানে হাসপাতালের সি-ব্লকের শিশু ওয়ার্ডের দ্বিতীয় তলার ৯নং বেডে ডা. শাহনাজ রহমানের অধীন চিকিৎসাধীন।হাসপাতালে এভাবেই এক মাসেরও বেশি সময় কাটছে নিজ এলাকার এক ব্যক্তির নৃশংসতার শিকার শিশু আবিরের। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের মধুনগর গ্রামের ইসমাইলের ছেলে আবির। বাবা রিকশাচালক। মা রাস্তায় মাটি কাটার কাজ করেন।শিশুদের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে আজিম উদ্দিন (৪৮) নামে এক ব্যক্তি তার দুই হাত দিয়ে আবিরের গলা চিপে ধরে উঁচু করে রাখে। এতেও তার ক্ষোভ মিটেনি। এরপর আবিরের দুই পা ধরে মাথার ওপর ঘুরাতে থাকেন আজিম উদ্দিন। একপর্যায়ে তাকে ছেড়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে আবির। এতে তার কণ্ঠনালী বন্ধ হয়ে গেছে। মুখে খেতে পারছে না সে। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় সাংবাদিকদের সহযোগিতায় ঘটনার এক মাস পর গত ৮ মার্চ কিশোরগঞ্জ থানায় মামলা হয়। একই দিন পুলিশ মামলার একমাত্র আসামি আজিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করে।এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর মোশারফ হোসেন বলেন, বিষয়টি পুলিশের জানা ছিল না। সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত হওয়ার পরপরই মামলা রেকর্ড করি। সেদিনই অভিযুক্ত আজিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বর্তমানে কিশোরগঞ্জ কারাগারে।ঘটনাটি গত ২ ফেব্রুয়ারির। এদিন বেলা ১১টার দিকে আবিরের সঙ্গে একই গ্রামের প্রভাবশালী মো. আজিমুদ্দিনের ছেলে হামজার (৮) ঝগড়া হয়। হামজা বাড়িতে এসে তার বাবার কাছে জানায় যে, আবির তাকে মেরেছে। এ কথা শুনে ক্ষুব্ধ হয়ে আজিমুদ্দিন ছুটে যান আবিরের কাছে। এ সময় বাড়ির পাশে কৃষিজমিতে খেলা করছিল আবির। সেখানে তাকে পেয়ে আজিমুদ্দিন দুই হাতে শিশু আবিরের গলা চেপে ধরে। তাকে কিছুক্ষণ মাটি থেকে উপড়ে তুলে রাখে। একপর্যায়ে দুই পা ধরে মাথার ওপর তুলে চারদিকে ঘুরাতে থাকেন আজিমুদ্দিন। এরপর তাকে মাটিতে আছড়ে ফেলেন।মুুমূর্ষু অবস্থায় শিশুটিকে কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে দুদিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ঢাকা মেডিকেল থেকে ওইদিনই আবিরকে পাঠানো হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে।সেখানে আবিরকে চিকিৎসা দেয়া চিকিৎসক বলেছেন, নির্যাতনে আবিরের কণ্ঠনালী প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ঘারের ডান পাশে দুটি হাড় ভেঙে গেছে। এরই মধ্যে তার গলায় অপারেশন হয়েছে। তবে এখনও কৃত্রিমভাবে শ্বাস নিতে হচ্ছে তাকে। মুখে কিছু খেতে পারছে না সে।আবিরের বাবা ইসমাইল বলেন, আমার ছেলে এখনও গুরুতর অসুস্থ। বাড়িতে যা কিছু ছিল, সব বিক্রি করেছি। এনজিওসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়েছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। জানি না শেষ পর্যন্ত কি হবে।তিনি বলেন, নিজের জীবনের বিনিময়ে হলেও আমার বাবাকে সুস্থ করতে চাই। বিচার চাই আজিমুদ্দিনের। ছেলের চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবান মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।শিশুটির পাশে কেউ দাঁড়াতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন জাগো নিউজের কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি নূর মোহাম্মদের সঙ্গে। মোবাইল : ০১৭১২-২২০১০৯ অথবা যোগাযোগ করতে পারেন জাগো নিউজ কার্যালয়ে। যোগাযোগ : আজহার কমফোর্ট কমপ্লেক্স (৫ম তলা), গ-১৩০/এ প্রগতি সরণি, মধ্য বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, ফোন: ৮৮-০২ ৯৮৪২৬৮৯এমএএস/আরআইপি
Advertisement