শস্যভাণ্ডার খ্যাত চলনবিলসহ সিরাজগঞ্জে কৃষকদের মাঝে দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কীটনাশক ছাড়াই ক্ষতিকারক পোকা দমনের পার্চিং ও আলোক ফাঁদ পদ্ধতির ব্যবহার। জমিতে সার দেয়ার পর থেকেই রোপা-আমন, ইরি-বোরোসহ বিভিন্ন ফসলের খেতে বাদামী ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা ও চুঙ্গি-মাজরাসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসল বাঁচাতে কৃষকরা কীটনাশকসহ বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করেন। বর্তমানে কৃষকরা খেতে কীটনাশক ওষুধ পরিহার করে পোকা দমনে সহজ ও পরিবেশবান্ধব পার্চিং এবং আলোক ফাঁদ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে জানা যায়, ইতোমধ্যে প্রতি বিঘা জমিতে ডেড পার্চিং ও জীবন্ত পার্চিং পদ্ধতির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতি বাস্তবায়নের জন্য জেলার প্রত্যেকটি ইউনিয়নে নিয়োজিত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের মাঝে কাজ করছেন। জেলার মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৫৬ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমি পার্চিং পদ্ধতির আওতায় এবং ৪২৫টি আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়েছে। এতে পরিবেশ বাঁচিয়ে কৃষকরা স্থানীয় পদ্ধতিতে স্বল্প খরচে পোকা ও পোকার ডিম বিনষ্ট করছে। সদর উপজেলার পাঁচঠাকুরীর বর্গাচাষী আমজাদ হোসেন, রহিম, বক্কারসহ অনেকেই বলেন, কৃষি অফিস আমাদেরকে পার্চিং পদ্ধতি বা খেতের ভিতর ডাল-পালা, বাঁশের কুঞ্চি পুতে রাখা এবং সন্ধ্যার দিকে জমিতে আলোক ফাদ সম্পর্কে মাঝেমধ্যে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সচেতন করেন। সেই অনুযায়ী আমরা উক্ত পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে ক্ষতিকর পোকার আক্রমণ থেকে জমিকে রক্ষা করে অনেক লাভবান হয়েছি।বহুলীর প্রান্তিক কৃষক আনোয়ার হোসেন জানান, ক্ষেতের ভিতর ডাল-পালা পুতে রাখলে সেই ডাল-পালায় পাখি বসে এবং ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এতে কীটনাশক ছাড়াই আমরা ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে অতি সহজেই ফসলকে রক্ষা করতে পারছি। তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের মানিকচার গ্রামের কৃষক আলহাজ্ব আলী পার্চিং সম্পর্কে বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে জমিতে ক্ষতিকারক পোকার হাত থেকে কীটনাশক ছাড়াই ফসলকে রক্ষা করা যায়। এ পদ্ধতি আমি গতবারও ব্যবহার করেছিলাম উপকার পেয়ে এবারও ব্যবহার করছি। তাড়াশ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি অফিসার হুমায়ন কবির জানান, এই ফসলি জমিতে পোতা ডালগুলোর উপরে পাখি বসে ফসলি জমির ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। যার ফলে আর কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে না। ফলে কম খরচে অধিক ফলন পাওয়া সম্ভব হবে।সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. আনোয়ার হোসেন খান জানান, ক্ষেতের ভিতর ডালপালা পুতে রেখে পাখিদেরকে মথ খাওয়ার সুযোগ করে দেয়াকেই পার্চিং পদ্ধতি বলে। আর সন্ধ্যার দিকে জমিতে ইলেকট্রিক বা ব্যাটারি চালিত বাল্ব একটি খুটির সঙ্গে লাগিয়ে জ্বালিয়ে রাখতে হয়। সেই বাল্বের নিচে সাবান মিশ্রিত পানি ভর্তি একটি গামলা রাখতে হয়। আলো পেয়ে ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড় সেখানে জড়ো হয় এবং গামলার ভিতর পড়ে মারা যায়। এতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমন সহজেই করা যায়। এ পদ্ধতিগুলো পরিবেশের কোনো ক্ষতি করে না। ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এফএ/পিআর
Advertisement