খেলাধুলা

শততম টেস্টের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে ব্যাটিং সামর্থ্য প্রশ্নবিদ্ধ

খেলা শেষে মুশফিক অকপটে স্বীকার করলেন ‘যত সমস্যা অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশনে। আমরা সঠিক সময়ে সঠিক কাজ করতে পারিনি। করণীয় কাজগুলো যথাযথভাবে না হওয়ায় এমন পরিণতি।’ অধিনায়ক যতই সত্য কথা বলুন না কেন, এই না পারা ছোটখাটো ব্যর্থতা নয়। একটা দল ১০০ নম্বর টেস্ট খেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, তার অধিনায়কের মুখে এমন কথা শোভা পায় না। ৯৯ টেস্ট খেলা দলের অধিনায়ক যখন বলেন, ‘আমাদের অ্যাপ্রোচ-অ্যাপ্লিকেশন ঠিক নেই।’ তখন খুব স্বাভাবিকভাবেই দুটি প্রশ্ন জাগে, কেন ঠিক নেই?তার মানে, ব্যাটসম্যানরা টেস্ট ব্যাটিং শেখেননি এখনও। কবে শিখবেন? অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশনটাই বা কবে ঠিক হবে? একটা দল ১০০তম টেস্ট খেলার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে, গোটা জাতি আবেগ নিয়ে অধীর অপেক্ষায়। দেশ ছাড়ার সময়ই জানা একটা উৎসব উৎসব ভাব বাংলাদেশ ভক্তদের মাঝে। আর সেই দলের ব্যাটসম্যানরা ক্রিকেটের বেসিক-ব্যাকরণ না মেনে এবং প্রথাগত ব্যাট না চালিয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো সীমিত ওভারের আদলে ব্যাট করছেন। তা কি মানা যায়? দুঃখজনক হলেও সত্য- ঠিক শততম টেস্টের আগে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ হলো বাংলাদেশের ব্যাটিং সামর্থ্য।আজ গলে মুশফিক বাহিনীর ব্যাটিং অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশন স্থানীয় সাংবাদিক বন্ধুরা হাসির ছলে বলে দিলেন, তোমাদের ক্রিকেটারদের সামর্থ্যের প্রয়োগ ঘটানোর ক্ষমতা এত কম? ভদ্রলোক একটুও বাড়িয়ে বলেননি। কমই তো। কম বলেই একজন অনিয়মিত বোলার গুনারত্নের বলে পঞ্চম ও শেষ দিন প্রথম ওভারে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে। হাফ সেঞ্চুরি পূরণের পর সৌম্য সরকার কি করে গুনারত্নের বলে বোল্ড হয়েও উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকেন? বুঝতে সময় লাগে! তিন নম্বরে খেলতে নামেন মুমিনুল হক, যাকে এই সেদিনও ভাবা হতো নির্ভরতার প্রতীক- সেই তিনি কিনা বলের গতি প্রকৃতি না বুঝে লেগবিফোর উইকেটের ফাঁদে জড়িয়ে রিভিউয়ের আবেদন করে, তা না দেখে সাজঘরে পা বাড়ান? ব্যাট ও বলে যিনি দলের প্রাণভোমরা-চালিকাশক্তি; সেই পরিণত ও অভিজ্ঞ সাকিব কি কারণে স্পিনের বিপক্ষে সোজা ব্যাটে ডিফেন্স না করে কব্জি ঘুরিয়ে দেন? প্রথম ইনিংসে তামিম ও সাকিব অযথা-অপ্রয়োজনে লেগস্ট্যাম্পের বাইরের বলকে তাড়া করে উইকেট বিসর্জন দিয়েছেন। তা দেখেও দলের কাণ্ডারি অধিনায়ক মুশফিকও যখন লঙ্কান চায়নাম্যান বোলার লক্ষণ সান্দাকানের লেগস্টাম্পের এক ফুট বাইরের ডেলিভারিকে মারতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন তখন আর কি-ই বা বলার থাকে? এখানেই শেষ নয়, আরও আছে। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ। সব ফরম্যাটে যিনি শতভাগ পরিণত। অন্যতম সিনিয়র পারফরমারও। তাকে দেখে মনে হলো যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। শরীর ও পা আসছে বড্ড দেরি করে। রসিকতার সুরে বললে বলতে হয়, ‘ব্যাট আসছে বল কিপারের গ্লাভসে চলে যাওয়ার পর’। আজ মাহমুদউল্লাহ রঙ্গনা হেরাথের যে বলে আউট হয়েছেন, তা আহামরি কোনো ডেলিভারি ছিল না। শুধু পাটা একটু দ্রুত বলের লাইনে আনতেই পারলেই চলতো। কিন্তু আড়ষ্ট, দ্বিধান্বিত মাহমুদউল্লাহ জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই উইকেট হারালেন। অনেক ভেবে-চিন্তে মুশফিকুর রহীমের কাঁধ থেকে কিপারের বোঝা সরানো হলো। নিউজিল্যান্ডে খেলা নুরুল হাসান সোহানকে বাদ দিয়ে সুযোগ দেয়া হলো লিটন দাসকে। তার ব্যাটিং সামর্থ্য প্রশ্নাতীত। কিন্তু অ্যাপ্রোচ ও অ্যাপ্লিকেশন ভীষণ বাজে। প্রথম ইনিংসে দৃষ্টিকটুভাবে আউট হন। আজ দল যখন ভগ্নস্তুপের মধ্যে দাঁড়িয়ে, তখন শেষ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব সচেতন না হলে অযথা হেরাথকে জায়গায় দাঁড়িয়ে তুলে মারতে গিয়ে আকাশে তুলে দিলেন লিটন দাস। সেটাই মরণ ডেকে আনলো।   ধৈর্য-সংযম, গভীর মনোযোগ-মনসংযোগ আর বলের মেধা গুণ বিচার করে খেলা যে টেস্টে ব্যাটিংয়ের প্রথম শেষ ও মূল কথা। সেখানে একদিনের মেজাজে অধৈর্য হয়ে ব্যাকরণ ও বেসিকের ধারে কাছে না গিয়ে ব্যাট চালালে করুণ পরিণতি হতে বাধ্য। ৯৯ নম্বর টেস্ট খেলিয়ে দলের প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের অ্যাপ্রোচ যদি এমন অপেশাদার ও দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, তাহলে সেই দলের ভরাডুবি ঠেকাবে কে? এআরবি/এনইউ/আরআইপি

Advertisement