গল ফোর্ট ঠিক আগের মতোই আছে। সেই বড় বড় পাথর থরে থরে সাজানো। পাথরে একটুও লোনা ধরেনি। কালচেও হয়নি তেমন। গল ফোর্ট লাগোয়া শত ফুটের বেশি উচ্চতার ‘ক্লাক টাওয়ারও’ বদলায়নি একচুলও। ভারত মহাসাগর আগের মতোই পূর্ব ও দক্ষিণে বহমান। মাঝে এক দুই টেস্টে উইকেটের চরিত্র পাল্টেছিল খানিকটা। কিন্তু এবার যেন সেই ২০১৩ সালের এই মার্চের পিচ। ব্যাটিংবান্ধব। ব্যাটসম্যানদের স্বর্গই যেন। দায়িত্ব নিয়ে বলের মেধা ও গুণ বিচার করে খেলতে পারলে আগের মতো অনেক রান লুকানো ছিল। সময়কালও অভিন্ন। এবারও সেই মার্চ মাস।মোদ্দা কথা সবই প্রায় আগের মতোই। তাই অনেকেই আশার জাল বুনেছিলেন, সবই যখন মিলে যাচ্ছে, এবার হয়তো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটতেও পারে। কিন্তু হায়! সে আশার জাল ছিঁড়ে গেছে। সব কিছু আগের মতো থাকলেও একটা জায়গায় ভীষণ গরমিল। তা হলো- বাংলাদেশের ব্যাটিং। চার বছর আগে যে ব্যাটিং দ্যুতি ছড়িয়েছিল। মাঠ মাতিয়েছিল। দর্শক, ভক্ত-সমর্থকদের অকুণ্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে- এবার সেই ব্যাটিংয়ের হতশ্রী অবস্থা। একজোড়া শতক আর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের বুক চিতানো লড়িয়ে ডাবল সেঞ্চুরি- সব এখন শুধুই ধূসর স্মৃতি। চার বছর আগে এই মাঠে এক ইনিংসে ২০০ রান করা মুশফিক এবার দুই ইনিংসে তার অর্ধেকের একটু বেশি ১১৯ রান তুললেন। শুধু চার বছর আগের কথা বলা কেন, তার এক বছর পর নিজ মাটিতে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামেও অ্যাঞ্জোলো ম্যাথিউজ বাহিনীর সাথে প্রথম ইনিংসে শামসুর রহমন শুভ-ইমরুল কায়েসের জোড়া শতক আর চতুর্থ ইনিংসে মুমিনুল হকের হার না মানা সেঞ্চুরিতে বীরোচিত ড্র ম্যাচও ছিল অনুপ্রেরণার প্রতীক। গলে ৫৫ রানের দায়িত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা আর ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচ বাঁচানো শতরান (১০০*) উপহার দেয়া মুমিনুল যেন নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন। এবার তার ধারে-কাছে দিয়েও যাওয়া সম্ভব হলো না। আগে যেমন মাঠে নামলেই চঞ্চল-চপল মনে হতো। এখন কেমন যেন আড়ষ্টতায় ভোগেন। ব্যাট কেমন যে ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। রান করতে ভুলে যাওয়া মুুমিনুল এবার দুই ইনিংসে চরম ব্যর্থ। একবারের জন্য দুই অঙ্কে যেতে পারেননি। আউট হয়েছেন ৭ ও ৫ রানে।কঠিন সত্য, নিউজিল্যান্ডের অনভ্যস্ত-প্রতিকূল কন্ডিশন, ফাস্ট-বাউন্সি ট্র্যাকে কিউই ধারালো বোলিংয়ের বিপক্ষে এবং এই সেদিন হায়দরাবাদে র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দল ভারতের বিপক্ষে টাইগাররা যে সাহস ও প্রত্যয় নিয়ে ব্যাটিং করেছিলেন এবার গলে তার ধারে-কাছে দিয়ে যেতে পারেননি। অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ছাড়া প্রতিষ্ঠিত ব্যাটসম্যানদের একজনও সত্যিকার টেস্ট ব্যাটিং করেননি। অন্যভাবে বললে করতে পারেননি।এআরবি/এনইউ/আরআইপি
Advertisement