দেশজুড়ে

নারীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন শামীমা খান

দরিদ্র নারীদের স্বাবলম্বী করে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন জামালপুরের শামীমা খান। নারীদের হস্তশিল্পের কাজ, সেলাই, ও ব্লক বাটিক প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি তাদের অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, নির্যাতন প্রতিরোধ, আইনগত সহায়তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যে জেলার প্রায় তিন হাজার নারী তার হাত ধরে স্বাবলম্বী হয়েছেন। দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষাটা পরিবার থেকেই পেয়েছেন শামীমা খান। অর্থাভাবে মেয়ের বিয়ে, চিকিৎসা সেবা কিংবা লেখাপড়ার খরচ জোগাতে না পারা পরিবারকে সহায়তা করে আসছিলেন তিনি। আর এসব থেকেই একটা সময় নারীদের উন্নয়নে কাজ করার ভাবনা আসে মনে। জামালপুর মহিলা অধিদফতরের সহযোগিতায় ১৯৯৬ সালে শামীমা খান গড়ে তোলেন তরঙ্গ মহিলা কল্যাণ সংস্থা। পৌরসভাসহ জেলার তৃণমূল পার্যায়ের অসহায় হতদরিদ্র নারীদের হস্তশিল্প, সেলাই, ব্লক বাটিকসহ আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ডের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তুলছেন। শামীমা খানের হাত ধরে এখন পর্যন্ত জেলার প্রায় তিন হাজার নারী হস্তশিল্পের কাজ, দর্জি, পিঠা, চায়ের দোকানসহ আয় বৃদ্ধিমূলক কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। শামীমা খান নির্যাতনের শিকার নারীদের তরঙ্গ মহিলা কল্যাণ সংস্থায় চাকরি দিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন। এছাড়াও নারীর অধিকার, সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, বাল্য বিয়ে রোধে কাজ করে যাচ্ছেন । কাজ করছেন নারী নির্যাতন প্রতিরোধ এবং আইনগত সহায়তা নিয়েও। প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের অধিকার বিষয়ে সচেতন করতে নিয়মিত উঠান বৈঠক, কমিউনিটি সভা, বাল্য বিয়ে প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলিং, গ্রাম আদালত সচল করতে ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করছেন। নারীদের উন্নয়নে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৪ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতার স্বীকৃতি পান শামীমা খান। সদর উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির নেত্রী লাইলী বেগম জানান, ৪-৫ বছর আগেও আমাদের গ্রামের নারীরা নিজেদের অধিকার বিষয়ে কিছু জানতো না। শামীমা আপার পরামর্শে কাজ করার পর আমরা এখন নিজের অধিকার বিষয়ে  সচেতন। আমরা এই গ্রামে বাল্য বিয়ে কিংবা কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে দলবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করি। লাইলীর সাথে সহমত পোষণ করে একই গ্রামের রোজী, আফরোজা এবং লিপি বলেন, আমাদের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত শাহবাজপুর গ্রামের ছয়টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করেছি। আমরা এখন এই গ্রামকে বাল্য বিয়েমুক্ত গ্রাম ঘোষণার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর আমাদের সহায়তা করছেন শামীমা আপা।  তরঙ্গ মহিলা কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক শামীমা খান বলেন, নারীরা যদি স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি নিজের অধিকার বিষয়ে সচেতন হয় তাহলে নারী-পুরুষ বৈষম্যহীন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। সেই স্বপ্ন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি।জামালপুরের জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মো. লুৎফুল কবীর বলেন,  শামীমা খান নারীদের আইনগত অধিকার বিষয়ে সচেতন করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। আরএআর/পিআর

Advertisement