প্রয়োজন আর সচেতনতাবোধ মানুষকে ঘরে আটকে রাখতে পারে না। তিনি পুরুষই হোন অথবা নারী। এটা প্রমাণ করেছেন ঈশ্বরদীর কিছু সাহসী নারী। সন্তানদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার সচেতনতাবোধ ঈশ্বরদী শহরের দরিনারিচাপাড়ার অনেক গৃহবধূকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে। এলাকার আলো বেগম, আজিজা বেগম, আলেয়া খাতুন, জেসমিন, দৈবকি, নারগিসসহ প্রায় ৩০ জন গৃহবধূ গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তারা সবাই নিজেদের দোকানে বসে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন। মেয়েদের থ্রিপিস, শাড়ি, সুতি কাপড়ের ক্রেতাও মেয়েরা। নারী দোকানদের এই এলাকার নামই হয়ে গেছে ‘মিনা বাজার’। গত রোববার সকালে এই মিনা বাজার এলাকা ঘুরে ও নারী দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল প্রত্যেকেরই লক্ষ্য নিজেদের উদ্যোগের কথা।তারা জানায়, তাদের উপার্জিত অর্থ যেমন সাংসারিক প্রয়োজনে ব্যয় হবে। তেমনি সন্তানদের লেখাপড়া শিখিয়ে ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষাও রয়েছে। প্রথমদিকে সমাজের দুই একজন মানুষ বাঁকা কথাবার্তা বলতো, এখন আর বলে না। তাদের স্বামীরা যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন এসব ব্যাপারে। ঈশ্বরদী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পাভেল হোসেনের স্ত্রী আলো বেগগের (৩২) ১ ছেলে ও ১ মেয়ে। গার্মেন্টসের এই দোকানের আয়ে তাদের পরিবারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে। আজিজা বেগম ও তার ছেলের বউ আলেয়া খাতুন দুইজন মিলে বিসমিল্লাহ কাপড় ঘর নামে দোকানটি পরিচালনা করেন। তারাও এখন বেশ ভালো আছেন। ঢাকায় গার্মেন্টস কারখানায় চাকরি করেন ইয়াছিন আলী। তার স্ত্রী জেসমিন কাপড়ের দোকানের পাশাপাশি মেয়েদের পোশাক সেলাই করে যা আয় করেন তাতে তারা আগের চেয়ে ভালো আছেন। অসুস্থ স্বামী নরেশ চৌধুরী কোনো কাজ করার ক্ষমতা নেই। তাই ১ ছেলে ১ মেয়ের জননী দৈবকি রানী গার্মেন্টস সামগ্রী বিক্রির পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করেন। এসএম আলমের স্ত্রী নার্গিস বেগম দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। স্বামী দন্ত চিকিৎসক। দুইজনের আয়ে তারা এখন ভালো আছেন। এ ধরনের প্রায় ৩০টি দোকানের প্রতিটিই পরিচালনা করেন নারীরা। একটি উপজেলা শহরে এ ধরনের উদ্যোগ বেশ ব্যতিক্রম। সামাজিক নানা প্রতিকুলতা অতিক্রম বিগত ৭ বছর ধরে গড়ে উঠেছে ঈশ্বরদীর এই মিনা বাজার। অনেক মেয়েই এখন এটা দেখে উৎসাহিত হচ্ছে। এদের দেখে নতুনরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছে।আলাউদ্দিন আহমেদ/এএম/এমএস
Advertisement