দেশজুড়ে

‘নারীদের অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই’

পদ্মা নদী বিধৌত ও রেলের শহরখ্যাত রাজবাড়ীর প্রশাসন ও রাজনীতিসহ সামাজিক-সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রেই এখন শীর্ষে অবস্থান করছেন নারীরা। প্রতিনিয়ত রাজবাড়ীর আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন, উন্নয়ন ও নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।তাদেরই একজন রাজবাড়ীর বর্তমান জেলা প্রশাসক জিনাত আরা। তিনি যথেষ্ট সক্ষমতা ও সাফল্যের সঙ্গে তার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে তার কর্ম, জীবন ও দায়িত্বসহ নানান বিষয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক। আলাপের শুরুতেই ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জেলা প্রশাসক জিনাত আরা জানান, ১৯৬৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তিনি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। শিক্ষা জীবনে ১৯৯১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগ থেকে বিএসসি (অনার্স) ও ১৯৯২ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের একই বিভাগ থেকে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৫তম ব্যাচে বিসিএস অ্যাডমিন ক্যাডার হিসেব কর্মজীবন শুরু হয় তার। ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন শেষে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি রাজবাড়ীতে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেন।  জবাড়ীতে যোগদানের পূর্বে তিনি সচিবালয়ে অর্থ বিভাগে কর্মরত ছিলেন। দাম্পত্য জীবনে এক কন্যা সন্তানের জননী তিনি এবং তার স্বামী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্বে রয়েছেন।জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন, সেইসঙ্গে পরিবার দেখভাল ও বিভিন্ন সামাজিকতা রক্ষাসহ নারী হিসেবে নিজের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণার বিষয়ে জিনাত আরা জানান, তার উৎসাহ ও অুনপ্রেরণা প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা। তিনি  বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারীবান্ধব সমাজ গড়ে তুলতে চাইছেন। তার নির্দেশনা, অনুপ্রেরণা, দৃঢ় অবস্থান তারই প্রমাণ রেখেছে নারীর ক্ষমতায়নে। এখন সরকারের অনেক দফতরের বড় বড় কর্মকর্তা নারী। একই সঙ্গে দেশের নেতৃত্ব দিয়ে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী, তাকে দেখে অনেক কিছু শেখার আছে আমাদের।একজন নারী হিসেবে কাজের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবার কাছে একজন নারী হিসেবে যতটা মুল্যায়িত হয়েছি, সরকারি কর্মকর্তা হিসেবেও ঠিক ততটাই মূল্যায়িত হয়েছি। তাই নারীদের অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই।জেলা প্রশাসক হিসেবে নিজের কাজ ও দায়িত্ব সম্পর্কে জিনাত আরা জানান, বাল্যবিবাহ নিয়ে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন একেবারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। সেই সঙ্গে বিয়ে রেজিস্ট্রারদের লিস্ট করে মতবিনিময় করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি  বিভিন্ন অধিদফতরকে নিয়ে কাজ করা হচ্ছে নারীদের জন্য। তাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্যও কাজ করা হচ্ছে। অসহায় ও বিধবা নারীদের বিভিন্ন ধরনের ভাতা দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে। জেলার নারীদের যে কোনো সমস্যার ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই সে বিষয়ে  সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।পরিবারে নিজের অবস্থান সম্পর্কে জিনাত আরা জানান, পরিবারে তিনি যখন যা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই পেয়েছেন। খুব একটা বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি। সব সময় সবার সাপোর্ট পেয়েছেন। পারিবারিক ও বিবাহিত জীবনে তার মা ও শাশুড়িকে দেখেছেন নারী হিসেবে তারা অনেক ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়েছেন। সে সময় তাদের স্বাধীনতা থাকলেও অবস্থানটা বর্তমান সময়ের  মতো ছিল না। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নিজের দায়িত্বের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, জেলার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই নারীদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এর মধ্যে নারী নির্যাতন-বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং বন্ধ, অসহায়-বিধবা নারীদের পাশে দাঁড়ানোসহ বিভিন্ন ধরনের সহয়তা দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া প্রশাসনের কর্মকর্তা হওয়ায় শুধু নারীই নয় সমাজের সকল স্তরের মানুষের সমান সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কাজ  করে যাচ্ছি।নিজের কর্মপন্থা সম্পর্কে জেলা প্রশাসক বলেন, জেলার নারীদের সাবলম্বী করে তুলে নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারী শিক্ষার অগ্রগতিসহ নারী-পুরুষ সমতা বিধানে সরকারের কর্মচারী হিসেবে রাজবাড়ীতে কিছু করে যেতে চাই।জেলা প্রশাসক ছাড়াও জেলার সরকারি দফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন  নারীরা।  এর মধ্যে ৩৮ সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য কামরুন নাহার চৌধুরী লাভলী,  অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রেবেকা খান, জেলা পুলিশ সুপার সালমা বেগম পিপিএম, জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নূরে সবুরা ফেরদৌস,  সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরমহল আশরাফী, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাছরিন আক্তার উল্লেখযোগ্য।আরএআর/জেআইএম

Advertisement